বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি এবং আংশিক শিপমেন্টের সুবিধা চেয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বরাবর এক আবেদনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বর্তমান সংকটে টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী নীতিকৌশল হিসেবে প্রস্তাবনার আলোকে প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিলে পোশাক খাতের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে গতি আসবে।
আবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে প্রধান রফতানি গন্তব্যগুলোতে (আমেরিকা এবং ইউরোপ) পরিবহন খরচ প্রায় ১০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া মজুরি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ব্যাংক চার্জ, ফ্রেইট চার্জ বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে গত ৮ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্ব থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। গত অর্থবছরে পোশাকের দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। আর করেনা মহামারির কারণে সৃষ্ট প্রায় ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের রফতানি ক্রয়াদেশ বাতিলের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই কারখানাগুলো ডিসকাউন্ট ও ডেফার্ড পেমেন্টের চাপে পড়েছে।
অনেক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড ক্রয়াদেশের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেনি, দেউলিয়া হয়ে গেছে। তবে আশার বিষয় এই যে, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়ছে, ক্রেতারা আশাব্যঞ্জক ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। এ সময়ে আমরা আমাদের সার্বিক সক্ষমতা ও দক্ষতা ধরে রাখতে পারলে তৈরি পোশাক শিল্প অনেকাংশে ঘুরে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে ইয়ার্ন চাহিদার মধ্যে যেটুকু আমদানি করতে হয়। তার প্রায় পুরোটাই বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু স্থলবন্দরের মাধ্যমে তুলা, সুতা, কাপড় ও বন্ড সুবিধার আওতায় বস্ত্র ও পোশাক খাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থাকার ফলে লিড টাইমের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
বিশেষ করে, শুধুমাত্র বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় তুলা, সুতা, কাপড় ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন রয়েছে এবং পারশিয়াল শিপমেন্টের অনুমোদন নেই। ফলে বেনাপোল বন্দরে প্রায়ই আমদানি-রফতানিতে কনজেশন থাকে এবং বিলম্বের কারণে শিল্প আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাই মন্ত্রী বরাবর আবেদনে শিল্পের বাণিজ্যিক উংপাদন কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রাখতে তিনটি সুপারিশ বা দাবি উপস্থাপন করে বিজিএমইএ। দাবিগুলো হলো- বেনাপোলের পাশাপাশি অন্যান্য স্থলবন্দর, বিশেষ করে ভোমরা ও সোনামসজিদের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় তুলা, সুতা, কাপড় এবং বস্ত্র ও পোশাক খাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি অনুমোদনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা।
বেনাপোল স্থলবন্দর এবং অপরাপর সব অনুমোদিত স্থলবন্দর দিয়ে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আংশিক শিপমেন্টের অনুমোদন দেওয়া।
বেনাপোলসহ সব অনুমোদিত স্থলবন্দরের পণ্য সংরক্ষণ, ওয়্যারহাউজিং সক্ষমতা এবং প্রয়োজনীয় লোকবল বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে প্রস্তাবিত নীতিমালা সংস্কারের ফলে পণ্য আমদানি-রফতানিতে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির কারণে অবকাঠামো ও লোকবলের অভাবে যেন বন্দরে কোনো ধরনের পণ্য পরিবহন জট বা জটিলতা তৈরি না হয়।
বিজনেস আওয়ার/১৫ আগস্ট, ২০২১/এ