শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নিয়ে কিছুদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। বেশি বিনিয়োগ করায় বিক্রির চাঁপ আসবে বলে গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে। অথচ দেশে ব্যবসা পরিচালনা করা ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ২২টির মতো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। যে ব্যাংকগুলো আবার তাদের বিনিয়োগ সক্ষমতার ৬০% শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। এখনো ৪০ শতাংশ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি, ব্যাংকগুলো সমন্বিতভাবে মূলধনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। যা পরিপালন করছে ব্যাংকগুলো।
তারপরেও ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যাংকগুলো বেশি বিনিয়োগ করায় বিক্রির চাঁপ আসবে বলে বাজারে খবর ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে নিয়মের মধ্য থেকেই ব্যাংকগুলোর এখনো অনেক বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা ২২টি ব্যাংকের সমন্বিতভাবে ৪৭ হাজার ৬৪৬ কোটি৩০ লাখ টাকার মূলধন রয়েছে। এ হিসেবে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে ৫০% হারে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে ১৪ হাজার ৩৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা মূলধনের ৩০ শতাংশ বা বিনিয়োগ সক্ষমতার ৬০ শতাংশ।
এ হিসেবে ব্যাংকগুলোর মূলধনের তুলনায় ৫০ শতাংশের মধ্যে এখনো ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। অন্যভাবে বললে, বিনিয়োগ সক্ষমতার ৪০ শতাংশ বাকি রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বাংলাদেশের ৬১টি ব্যাংক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার ৩২টি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এই বাজার থেকে ব্যাংকগুলো আইপিও ও বন্ডের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনসহ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। কিন্তু শেয়ারবাজারে মাত্র ২২টির মতো ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে।
এসব ব্যাংকের মধ্যে আবার কোনটিরই বিনিয়োগ সীমা স্পর্শ করেনি এবং তুলনামূলক কম রয়েছে বলে জানান তিনি। যেগুলোর এখনো ৪০ শতাংশ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এই বাজারে আস্থার বহি:প্রকাশ হিসেবেই বিনিয়োগ থাকা উচিত।
বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে উপকৃত হয়। এছাড়া বিনিয়োগ করে লাভবান হয়, শেয়ারবাজার নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের কাছ থেকে কমিশন নেয়। তারপরেও যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ি বিনিয়োগ না করে, তাহলে শেয়ারবাজারের প্রতি সঠিক আচরন করা হয় না।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সক্ষমতার সবচেয়ে কম বিনিয়োগ করেছে এবি ব্যাংক। এ ব্যাংকটির মূলধনের ৫০ শতাংশ হারে ৭৮২ কোটি ৮০ লাখ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও করেছে মাত্র ২৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। যা মূলধনের ১৫ শতাংশ। আর বিনিয়োগ সক্ষমতার ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে মূলধন বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকটি থেকে ২ হাজার ২৩৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার মূলধনের বিপরীতে ১ হাজার ৯৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা ৪৮.৯৯ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে।
নিম্নে গত ৩১ জুলাইয়ের ‘কোটি টাকায়’ ব্যাংকগুলোর মূলধন, বিনিয়োগ ও মূলধনের তুলনায় বিনিয়োগের হার তুলে ধরা হল-
ব্যাংকের নাম | ব্যাংকের সমন্বিত ক্যাপিটাল | ব্যাংকের সমন্বিত বিনিয়োগ | মূলধনের তুলনায় বিনিয়োগের হার |
এবি ব্যাংক | ১৫৬৫.৬০ | ২৩৭.২৮ | ১৫.১৬% |
ইসলামী ব্যাংক | ৩৮৪৪.৪২ | ৬৭২.৮৭ | ১৭.৫০% |
যমুনা ব্যাংক | ১৭০৪.৬১ | ৩৪০.৪১ | ১৯.৯৭% |
এক্সিম ব্যাংক | ২৮২১.০৯ | ৫৮০.৭৮ | ২০.৫৯% |
উত্তরা ব্যাংক | ১২০০.৩২ | ২৬৭.৪০ | ২২.২৮% |
ব্র্যাক ব্যাংক | ৪২৮৭.১৪ | ১০০৭.০৫ | ২৩.৪৯% |
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক | ১৭৫১.৪০ | ৪১৭.৩১ | ২৩.৮৩% |
এনআরবিসি ব্যাংক | ৫৮২.৫১ | ১৪৩.৯৩ | ২৪.৭১% |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ১৬৭৬.৩৪ | ৫৩২.৫৯ | ৩১.৭৭% |
ইউসিবি | ৩২৯১.৯২ | ১০৪৮.৯২ | ৩১.৮৬% |
ওয়ান ব্যাংক | ১৭০৮.৫৭ | ৫৪৯.২৮ | ৩২.১৫% |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ১৯৭৯.১৬ | ৬৩৭.৬৭ | ৩২.২২% |
প্রাইম ব্যাংক | ২৬৫০.৮৯ | ৮৫৮.৩৩ | ৩২.৩৮% |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ১৯৯৩.৫১ | ৬৫৯.১৯ | ৩৩.০৭% |
শাহজালাল ব্যাংক | ১৭৯৬.৯৭ | ৫৯৯.৪৮ | ৩৩.৩৬% |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ২৫২০.৭০ | ৮৬৭.১৫ | ৩৪.৪০% |
এনসিসি ব্যাংক | ১৯৮৫.৬১ | ৭১০.৪৮ | ৩৫.৭৮% |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ১৫৬৮.৫৪ | ৫৬১.৬২ | ৩৫.৮১% |
ব্যাংক এশিয়া | ২৩৪২ | ৮৬১ | ৩৬.৭৬% |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ১৫২৫.৪২ | ৬০৬.১৯ | ৩৯.৭৪% |
সিটি ব্যাংক | ২৬১৩.৭০ | ১১০৯.৬৭ | ৪২.৪৬% |
আল-আরাফাহ ব্যাংক | ২২৩৫.৮৮ | ১০৯৫.২৭ | ৪৮.৯৯% |
মোট | ৪৭৬৪৬.৩০ কোটি টাকা | ১৪৩৬৩.৮৭ কোটি টাকা | ৩০.১৫% |
বিজনেস আওয়ার/০২ সেপ্টেম্বর, ২০২১/আরএ