ঢাকা , শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বার্জার পেইন্টসের তালিকাভুক্তিতে ৯৪ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি

আমিরুল ইসলাম : বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তালিকাভূক্তির পর থেকে সর্বশেষ হিসাব বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯৪ কোটি টাকার ওপরে।

উন্নয়নের কথা বলে বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের আনা হলেও রাজস্ব আয় কমছে সরকারের। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০ শতাংশ কর রেয়াত নিচ্ছে। যাতে দেশের বিনিয়োগকারীরা যতটুকু উপকৃত হচ্ছে, সরকার তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বার্জার পেইন্টস থেকে সাধারন বিনিয়োগকারীরা (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে।

অপরদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ১০ শতাংশ কর সুবিধা হিসাবে কোম্পানিটিকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর কম দিতে হয়েছে। ফলে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকার ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

জানা গেছে, ২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের বার্জার পেইন্টস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০টি শেয়ার ইস্যু করে। যা প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ বা ২ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪৪০টি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতেই রয়েছে।

কোম্পানিটি ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ১৯৪ টাকা করে লভ্যাংশ দিয়েছে। এ হিসাবে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা পেয়েছে ৪২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার।

এদিকে বার্জার পেইন্টস এই সময়ে করপূর্ব আয় করেছে ১ হাজার ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২৭.৫ শতাংশ হিসাবে ২৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার কর প্রদান করেছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে না আসলে ৩৭.৫ শতাংশ হিসাবে ৩৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার কর প্রদান করতে হতো। এ হিসাবে শেয়ারবাজারে আসার কারণে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে।

অর্থনীতিবীদ এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির কোন অভিযোগ নাই। এছাড়া ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে ও শেয়ার দর ভালো। তবে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়াতে পারলে ভালো।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যুতে কোন বহুজাতিক কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা উচিত। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যু বাড়ানো উচিত অন্যথায় কর সুবিধা কমিয়ে দেওয়া দরকার। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে কর সুবিধা নেওয়া, তালিকাভুক্তি না। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়ন করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।

এদিকে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোন বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসা ও না আসা সমান কথা বলে জানান শাকিল রিজভী। এক্ষেত্রে যদি শেয়ারবাজার সাপ্লাই না বাড়ে তাহলে তালিকাভুক্ত হয়ে লাভ কি। এছাড়া নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে শেয়ার দর নিয়ে অল্পতে কারসাজি করা সহজ হয়ে উঠে।

এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার (এফসিএমএ) বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা নিচ্ছে। এতে শেয়ারবাজার প্রকৃতপক্ষে উপকৃত না হলেও কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার রাজস্ব সুবিধা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

বিজনেস আওয়ার/২৭ নভেম্বর, ২০১৬/আই

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “বার্জার পেইন্টসের তালিকাভুক্তিতে ৯৪ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বার্জার পেইন্টসের তালিকাভুক্তিতে ৯৪ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৬

আমিরুল ইসলাম : বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তালিকাভূক্তির পর থেকে সর্বশেষ হিসাব বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯৪ কোটি টাকার ওপরে।

উন্নয়নের কথা বলে বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের আনা হলেও রাজস্ব আয় কমছে সরকারের। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০ শতাংশ কর রেয়াত নিচ্ছে। যাতে দেশের বিনিয়োগকারীরা যতটুকু উপকৃত হচ্ছে, সরকার তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বার্জার পেইন্টস থেকে সাধারন বিনিয়োগকারীরা (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে।

অপরদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ১০ শতাংশ কর সুবিধা হিসাবে কোম্পানিটিকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর কম দিতে হয়েছে। ফলে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকার ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

জানা গেছে, ২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের বার্জার পেইন্টস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০টি শেয়ার ইস্যু করে। যা প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ বা ২ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪৪০টি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতেই রয়েছে।

কোম্পানিটি ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ১৯৪ টাকা করে লভ্যাংশ দিয়েছে। এ হিসাবে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা পেয়েছে ৪২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার।

এদিকে বার্জার পেইন্টস এই সময়ে করপূর্ব আয় করেছে ১ হাজার ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২৭.৫ শতাংশ হিসাবে ২৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার কর প্রদান করেছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে না আসলে ৩৭.৫ শতাংশ হিসাবে ৩৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার কর প্রদান করতে হতো। এ হিসাবে শেয়ারবাজারে আসার কারণে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে।

অর্থনীতিবীদ এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির কোন অভিযোগ নাই। এছাড়া ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে ও শেয়ার দর ভালো। তবে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়াতে পারলে ভালো।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যুতে কোন বহুজাতিক কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা উচিত। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যু বাড়ানো উচিত অন্যথায় কর সুবিধা কমিয়ে দেওয়া দরকার। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে কর সুবিধা নেওয়া, তালিকাভুক্তি না। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়ন করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।

এদিকে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোন বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসা ও না আসা সমান কথা বলে জানান শাকিল রিজভী। এক্ষেত্রে যদি শেয়ারবাজার সাপ্লাই না বাড়ে তাহলে তালিকাভুক্ত হয়ে লাভ কি। এছাড়া নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে শেয়ার দর নিয়ে অল্পতে কারসাজি করা সহজ হয়ে উঠে।

এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার (এফসিএমএ) বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা নিচ্ছে। এতে শেয়ারবাজার প্রকৃতপক্ষে উপকৃত না হলেও কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার রাজস্ব সুবিধা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

বিজনেস আওয়ার/২৭ নভেম্বর, ২০১৬/আই

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: