বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ার দর কমতে কমতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ১০ এর নিচে নেমে এসেছে। এরমধ্যে আবার সবচেয়ে কমে বা ৪এ অবস্থান করছে ব্যাংক খাত। যে খাতটির অনেক শেয়ার এখন পানির দামে পাওয়া যাচ্ছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ি, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ১৪.২৫ পয়েন্টে। যা অর্থবছর শেষে বা চলতি বছরের ৩০ জুন লেনদেন শেষে কমে এসেছে ৯.৩১ পয়েন্টে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পিই রেশিও ৪.৯৪ পয়েন্ট বা ৩৪.৬৭ শতাংশ কমেছে।
তবে সার্বিক বাজারের থেকে ব্যাংক খাতের পিইতে বেশি পতন হয়েছে। এ খাতটির পিই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৮.২৬। যা ওই অর্থবছর শেষে কমে এসেছে ৪.৩৪এ। এ হিসাবে ব্যাংক খাতের পিই কমেছে ৩.৯২ বা ৪৭.৪৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ব্যাংক খাতের শেয়ারের মুভমেন্টে শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব পড়ে। আর এই খাতের ভালো লভ্যাংশ ও ব্যবসার কারনে শেয়ারে ইতিবাচক প্রভাব। যাতে পুরো শেয়ারবাজারের মুভমেন্টে পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতটির ২০১৯ সালের লভ্যাংশের সঙ্গে সঙ্গে মুনাফায়ও উত্থান হয়েছে। যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও প্রতিয়মান হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারনে ব্যাংক খাতের মুনাফায় ধস নামবে বলে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাস হলেও ব্যাংকের সুদ গণনা কিন্তু থেমে নেই। আর এটাই ব্যাংকের মুনাফার প্রধান উৎস। তাই মুনাফায় খুব বড় হেরফের হবে না।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পিই অনুপাত বিশ্লেষণ একটি অন্যতম হাতিয়ার। যার মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় বিনিয়োগ ফেরত পেতে কত সময় লাগবে। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক খাতের মধ্যে ওয়ান ব্যাংকে বিনিয়োগকৃত টাকা সবচেয়ে কম সময়ে ফেরত পাওয়া যাবে। ব্যাংকটি থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে সময় লাগবে ২.৭১ বছর।
দেখা গেছে, ১ জুলাই ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৯ টাকা। এ ব্যাংকটির ২০২০ সালের ১ম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৩ টাকা। এ হিসাবে বছরে ইপিএস হবে ৩.৩২ টাকা। যাতে ৯ টাকার বিনিয়োগ ফেরতে লাগবে ২.৭১ বছর। যা শতাংশ হিসাবে ৩৬.৯০।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। এরমধ্যে ২০১৯ সালের ব্যবসায় শুধুমাত্র লোকসানি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি।
শেয়ারবাজারে বর্তমানে ২৪টি ব্যাংক থেকে ১০ বছরের মধ্যে বিনিয়োগ ফেরতে পাওয়া যাবে।
নিম্নে ব্যাংকগুলোর পিই বা বিনিয়োগ ফেরতের সময় তুলে ধরা হল-
নাম | বিনিয়োগ ফেরতে লাগবে |
ওয়ান ব্যাংক | ২.৭১ বছর |
যমুনা ব্যাংক | ২.৮৫ বছর |
সাউথইস্ট ব্যাংক | ৩.০১ বছর |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক | ৩.৪২ বছর |
ব্যাংক এশিয়া | ৩.৫১ বছর |
ঢাকা ব্যাংক | ৩.৬৪ বছর |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ৪.২৭ বছর |
আইএফআইসি ব্যাংক | ৪.৪৮ বছর |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ৪.৫৭ বছর |
এনসিসি ব্যাংক | ৪.৬৩ বছর |
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক | ৪.৯৯ বছর |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ৫.২০ বছর |
দি সিটি ব্যাংক | ৫.৪৭ বছর |
উত্তরা ব্যাংক | ৫.৭০ বছর |
ইসলামী ব্যাংক | ৫.৭৫ বছর |
পূবালি ব্যাংক | ৬.৫১ বছর |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ৬.৭৮ বছর |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ৭.৫০ বছর |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ৭.৫০ বছর |
স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক | ৭.৫৬ বছর |
ন্যাশনাল ব্যাংক | ৮.৩১ বছর |
প্রাইম ব্যাংক | ৮.৪৫ বছর |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ৯.৪২ বছর |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ৯.৫১ বছর |
ব্র্যাক ব্যাংক | ১১.২৩ বছর |
এবি ব্যাংক | ২৮.৪২ বছর |
রূপালি ব্যাংক | ৪৫.৭৫ বছর |
আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক | ৪৫.৯৪ বছর |
এক্সিম ব্যাংক | ৫৩.৭৫ বছর |
আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক | ফেরত পাওয়া যাবে না |
এদিকে এক্সিম ব্যাংকে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে। কোম্পানিটির চলতি বছরের ১ম প্রান্তিকে নামমাত্র বা ৪ পয়সা ইপিএস হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাংকটি থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে ৫৩.৭৫ বছর সময় লাগবে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে লোকসানি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যাবে না।
বিজনেস আওয়ার/০৪ জুলাই, ২০২০/আরএ