বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে গত ১০ জুলাই শুধুমাত্র প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) পূর্ব শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার দায়ে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য চিঠি দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু সোনালি লাইফ কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। যে কারনে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
সোনালি লাইফের পর্ষদের শুধুমাত্র আইপিওপূর্ব শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার কান্ডে রেকর্ড ডেটের দিন শেয়ারধারন করেও লভ্যাংশ না পাওয়ার মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে। যার সুযোগ শেয়ারবাজারে নেই। এ নিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিজনেস আওয়ারে ‘লভ্যাংশ নিয়ে সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে সোনালী লাইফের প্রতারণা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
যার আলোকে পরের দিন (২৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসি থেকে সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষকে ৭দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে চিঠি ইস্যু করা হয়। কিন্তু সে সময় পার হয়ে গেলেও জবাব দেয়নি সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের কাছে গত ১০ জুলাই ঘোষিত লভ্যাংশ রেকর্ড ডেটের দিন শেয়ারধারনকারী সবার জন্য নাকি, আইপিও পূর্ব শেয়ারহোল্ডারদের জন্য করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। যদি আইপিও পূর্ব শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষণা করা হয়ে থাকে, তাহলে তার স্বপক্ষে ডকুমেন্টস জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে শেষেও কোন জবাব দেয়নি সোনালি লাইফ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ি পর্ষদ সভায় যা ঘোষণা করা হবে, তা রেকর্ড ডেটের দিনে শেয়ারধারন করা সবাই পাবেন। এক্ষেত্রে রেকর্ড ডেটের শেয়ারহোল্ডারদের কোন অংশকে বাদ দিয়ে লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে গত বছরের লভ্যাংশের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও কোন জবাব দেয়নি।
শেয়ারবাজারে গত ৩০ জুন লেনদেন শুরু হওয়া সোনালী লাইফের পর্ষদ ১০ জুলাই লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা করে। ওই সভায় কোম্পানিটির পর্ষদ ২০২০ সালের জন্য ১০ শতাংশ ও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য ২ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
ওই লভ্যাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেয়ার ধারনকারীরা অর্থাৎ আইপিও পূর্ববর্তী শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন বলে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে প্রকাশ করে। বাকি ২ শতাংশ রেকর্ড ডেটের দিন (৪ আগস্ট) শেয়ার ধারনকারীরা সবাই পাবেন বলে জানায়। তবে এভাবে লভ্যাংশ ঘোষণার সুযোগ না থাকায়, সোনালী লাইফের প্রতারণার বিষয়টি শুরুতে কারো দৃষ্টিগোচর হয়নি।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষের এমন ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালের লভ্যাংশের জন্য ঘোষিত রেকর্ড ডেট এর কার্যকারিতা বলে কিছুই থাকে না। কারন রেকর্ড ডেট নির্ধারনই করা হয় পর্ষদের ঘোষিত লভ্যাংশ ওইদিন শেয়ারধারীরা পাবে এবং এজিএমে অংশগ্রহনের সুযোগের জন্য।
সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের এ ঘটনা শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এক বিরল ও নেক্কারজনক। যেখানে উদ্যোক্তা/পরিচালকদেরকে লভ্যাংশ না নিয়ে সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরন করতে দেখা যায়, সেখানে সোনালি লাইফের পর্ষদ সাধারনদের বাদ দিয়ে নিজেরা নেবে।
এই প্রতারণার মধ্য দিয়ে এরইমধ্যে উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা গত বছরের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ নিয়ে চলেও গেছে। যা বিতরন করা হয়েছে বলে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ডিএসইর ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।
তারপরেও সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের বিগত বছরের লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিটিকে ‘এন’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সোনালী লাইফের কোম্পানি সচিব মো: রাফি-উজ-জামানকে ফোন দিলে, তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।
বিজনেস আওয়ার/১৪ অক্টোবর, ২০২১/আরএ