রেজোয়ান আহমেদ : নিলামে বসুন্ধরা পেপার মিলসের প্রতিটি শেয়ার ৯০ টাকায় কেনার জন্য দরপ্রস্তাব করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু একই কোম্পানির শেয়ার এখন সেকেন্ডারি মার্কেটে ৬৪ টাকায়ও কেনার মতো কোন যোগ্য বিনিয়োগকারী নেই। সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসায় উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। বসুন্ধরার ন্যায় অন্যান্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও নিলামে অংশগ্রহনকারীরা প্রস্তাবিত দরের চেয়ে কম দরে শেয়ার কিনতে চাচ্ছে না।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, অসৎ উদ্দেশ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা নিলামে একটি কোম্পানির উচ্চ দর প্রস্তাব করে। তারপরেও সাধারন বিনিয়োগকারীদের অসাবধানতার কারনে লেনদেনের শুরুতেই তারা মুনাফা তুলে নিতে পারে। আর তারা যেহেতু জানে কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত হয়েছিল, তাই সেকেন্ডারিতে কম দরেও ওই শেয়ারে আগ্রহ দেখায় না।
বসুন্ধরা পেপার মিলসের নিলামে প্রতিটি শেয়ার সর্বোচ্চ ৯০ টাকা করে কেনার জন্য দর প্রস্তাব করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। তবে সবচেয়ে বেশি ৩৬৬জন প্রতিটি ৮০ টাকা করে কেনার জন্য দর প্রস্তাব করে। যে দরটি কাট-অফ প্রাইস হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল। এই দরে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা ৭৬০ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার কিনতে চেয়েছিল। এবং এই দরেই যোগ্য বিনিয়োগকারীরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ১২৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিল। কিন্তু বর্তমানে শেয়ারটি ৬৪ টাকার নিচে অবস্থান করলেও যোগ্য বিনিয়োগকারীরা তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
নিলামের সময়ের তুলনায় বসুন্ধরা পেপারের ব্যবসায়িক উন্নতিও যোগ্য বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। নিলামের সময় বসুন্ধরা পেপারের ১৮ মাসে (২০১৫ জানুয়ারি-১৬ জুন) শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ৩.৯৩ টাকা। যা সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১২ মাসেই হয়েছে ৪.৬৩ টাকা। যে কোম্পানিটি আইপিও ফান্ড ব্যবহার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ব্যবসায় সব শেয়ারহোল্ডারকে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
এদিকে বসুন্ধরার ন্যায় নিলামে ৪০ টাকায় আমান কটনের শেয়ার কিনলেও সেকেন্ডারি মার্কেটে ৩২ টাকায় কিনছেন না যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া একমির ৮৫.২০ টাকার শেয়ার ৮০ টাকায় ও এস্কয়্যার নিটের ৪৫ টাকার শেয়ার ৪৩ টাকায় কিনছেন না।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্যতা অনুযায়ি অনেক কোম্পানির যথার্থ দর নির্ধারন হয় না। অনেকে এই পদ্ধতিটি অপব্যবহারের মাধ্যমে কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত করছে। যে কারনে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার দর কম হলেও যোগ্য বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখায় না। এটা দুঃখজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, যাদেরকে ইলিজিবল বা যোগ্য বিনিয়োগকারী বলা হচ্ছে, এরা আসলে যোগ্য না। বিডিংয়ে এরা পাতানো ম্যাচ খেলে। তাই সবার আগে যোগ্য বিনিয়োগকারী খুজে বের করতে হবে।
বিজনেস আওয়ার/১৭ এপ্রিল, ২০১৯/আরএ