বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : সরকার কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই ডিজেল আর কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দেশের পরিবহন শ্রমিক আর মালিকরা মিলে রাস্তায় তাদের বাসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে সারা দেশের রাস্তায় গণপরিবহন চলাচল অচল হয়ে যায়, তবে সচল রয়ে যায় জনজীবন।
বুধবার (০৩ নভেম্বর) রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম প্রতি লিটার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ওই দিন রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়।
ডিজেল আর কেরোসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে গত ৫ নভেম্বর থেকে পরিবহন খাতের বাস ও ট্রাক শ্রমিক, চালক ও মালিকরা রাস্তায় তাদের পরিবহন বন্ধ করে দেয়। পরের দিন থেকে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচলও। মূলত তারা নতুন করে তেলের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার অথবা ভাড়া সমন্বয় বা পুননির্ধারণ করার জন্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়।
সারা দেশে পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হলে শুক্রবার (০৫ নভেম্বর) সকাল থেকে সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও বেসরকারি কিছু কিছু অফিস খোলা থাকায় এবং রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ঢাকাগামী জনগণ বিপাকে পড়ে যায়। এক প্রকার অচল হয়ে যায় মানুষের জীবন। শুরুবার বন্ধ হওয়া পরিবহন আজ (০৭ নভেম্বর) রবিবারও বন্ধ রয়েছে। এতে করে আজ ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরের মানুষদের অফিসে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
হাসান মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি বিমানবন্দর সড়কে সকাল সাড়ে সাতটায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার গন্তব্য বাংলামোটর। কথা বলতেই কিছুটা গরম হয়ে বলেন, ভাই কথা বলবেন না। দেশে কি হচ্ছে। আজ তিনদিন হলো গণপরিবহন বন্ধ। এখন অফিসে যাবো কিভাবে সেটাই চিন্তা করছি। তিনি বলেন, অন্য সব বাস বন্ধ থাকলেও বিআরটিসি বাস চলছে। বেশ কয়েকটা সামনে দিয়ে গেলেও উঠতে পারি নাই। বাংলামোটর যেতে হবে অফিস সকাল ৯টা থেকে শুরু। পকেটে বাড়তি টাকাও নাই যে সিএনজিতে উঠব। এরপরও তো অফিসে যেতে হবে।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় মতিঝিল যাবার অপেক্ষায় থাকা হানিফ নামের একজনের সাথে। তিনি জানান, শুক্রবার না হয় অফিস বন্ধ ছিল। শনিবার অফিসে যেতে যে কত বিরম্বনা পোহাতে হয়েছে তা বলে বোঝানো জাবে না। তিনি বলেন, রিক্সা আর পায়ে হেটে শনিবার মতিঝিলে গেলেও আজ আর সেই উপায় নাই। আজ রিক্সা ভাড়া অতিরিক্তের চেয়েও অতিরিক্ত চাচ্ছে। তবুওতো অফিসে যেতে হবে।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানীতে রিক্সা আর সিএনজির কদর বেড়েছে। শুধু কদর না, ভাড়াও বেড়েছে কয়েকগুন।
আগে যেখানে বিমানবন্দর থেকে মোহাম্মদপুর যেতে সিএনজিতে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় হয়ে যেত। এখন সেখানে যেতে ৫০০ থেকে সাড় ৫০০ বা ৬০০ টাকাও গুন হচ্ছে যাত্রীদের। অর্থাৎ সিএনজি ভাড়া ডাবল বা এরও বেশি বেড়েছে। বাস বন্ধের সুযোগটি রিক্সাওয়ালারাও ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। আগে যেখানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে তাদের ৩০ বা ৩৫ টাকা গুনতে হতো এখন সেই ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকাও দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এদিকে গণপরিবহণ ও নৌপরিবহণ মালিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১ টায় এবং লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বিকাল ৩টায় মতিঝিলের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভাড়া বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করবেন মালিকরা।
গণমাধ্যম কর্মী নাসরিন আক্তার বলেন, মহাখালী থেকে ফার্মগেট আসতে যেখানে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ভাড়া সেখানে শনিবার এবং আজ (রবিবার) আমাকে ১০০ টাকা এবং ১২০ টাকা গুনতে হয়েছে। মানুষের কাছ থেকে বিবেক হারিয়ে গেছে। দেশে কোনো ধরনের সমস্যা হলেই কিছু মানুষ সুযোগ গ্রহণ করে। মানবতা বা মানবিকতা মানুষের কাছ থেকে উঠে গেছে।
বিজনেস আওয়ার/০৭ নভেম্বর, ২০২১/কমা