ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান)
সুন্দরবন থেকে ফিরে
নিরাপদ দস্যূমুক্ত সুন্দরবনে এখন বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা। কয়েক বছরে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় বর্তমানে প্রায় দস্যূমুক্ত হয়েছে পুরো সুন্দরবন এলাকা। একইসঙ্গে বনরক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারিতে কোন ধরণের দস্যূবৃত্তি এখন নেই বললেই। এক সময় একাধিক বাহিনীর দোর্দ- প্রতাপে পুরো সুন্দরবন এলাকা ছিল দসূবৃত্তির অভয়ারন্য। সেই পরিস্থিতি পাল্টে এখন শান্তিময় এলাকায় পরিনত হয়েছে। আর এই দস্যূমুক্ত সুন্দরবনে বাড়ছে পর্যটনের আকর্ষণ। সেই আকর্ষণে ছুটে আসছে লাখ লাখ দেশি বিদেশী পর্যটক।
একসময়ের পরিচিত হিরণপয়েন্ট, দুবলার চরের স্থলে এখন নতুন কিছু স্পট আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এসব পর্যটকদের কাছে। এরমধ্যে হারবাড়িয়া, ডিমচর, কটকা, কচিখালী, কলাগাছিয়া, শেখেরটেক, আলীবান্দা, কালাবগি ও কৈলাশগঞ্জ। এরমধ্যে কয়েকটি স্পট দূরবর্তী থাকায় একসময় পর্যটনের জন্য অনিরাপদ ছিল। এখন পুরোপুরি দসূমুক্ত হওয়ায় প্রচুর পর্যটক যাচ্ছে এসব স্পটে।

সম্প্রতি সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, মূলত নদী বিধৌত সুন্দরবনের রয়েছে অসংখ্য চর। এসব চরে সব সময় ঘুরে বেড়ায় নানা ধরণের বন্য প্রাণী। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে হরিণ। সুন্দরবন কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে সুন্দরবনে প্রায় দেড় লাখ হরিণ রয়েছে। প্রতিটি স্পটে গেলেই অবাধে চড়ে বেড়াতে দেখা যায় এসব হরিন। তবে হরিণের প্রজণনের জন্য রয়েছে সরকারের একটি প্রজণন কেন্দ্র।
করমজলে গড়ে ওঠা এই প্রজণন কেন্দ্রে গেলে নিজ হাতে খাবার খাওয়ানোর সুযোগ রয়েছে পর্যটকদের। এই স্পটেই রয়েছে সুন্দরবনের নোনা জলের কুমির প্রজণন কেন্দ্র। রোমিও, জুলিয়েট নামে কুমির থেকে এখানে এখন শতাধিক বাচ্চা কুমির রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে কচ্ছপ প্রজণন কেন্দ্র। তবে কটকা স্পট বলে পরিচিত এলাকায় সবচেয়ে বেশি হরিণ চোখে পড়ে। পালে পালে হরিণ চড়ে বেড়াতে দেখা যায় এখানে। কটকাতে রয়েছে বাঘের আনাগোনা। কটকার পাড়ে কয়েকদিন থাকলে নিজ চোখেই দেখা মেলে বাঘের। তীরে নামলে সব সময় বাঘের পায়ের চিহ্নের দেখা মেলে।

সুন্দরবনের প্রায় শেষ প্রান্তে হারবাড়িয়া এলাকা। এই এলাকায় ডিম্বাকৃতির বলে পরিচিত ডিম। চারদিকে বৃহৎ নদী বেষ্টিত হওয়ায় সন্ধ্যার সূর্যাস্ত ও সকালের সূর্যোদ্বয় দেখা যায় স্পষ্ট। ডিমচরেও রয়েছে হাজার হাজার হরিণ। রয়েছে নানা প্রজাতির পাখি। তীরে নামলেও শোনা যায় পাখির কলতানি। অবাধে ঘুরে বেড়ানো হরিণ। হারবাড়িয়ার পর কচিখালির চরে দেখা মেলে কুমিরের। বিভিন্ন স্পটেই নদীর চরে রোদ পোহাতে দেখা যায় নোনা জলের এসব কুমির।
পর্যটন আকর্ষণে সরকার সম্প্রতি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে এসব পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের জন্য ওয়াচ টাওয়ার, ঝুলন্ত ব্রিজ, হাঁটার জন্য ফুট ট্রেইল, বসার জন্য গোলঘর নির্মান করা হচ্ছে। তবে চাইলেই যে কেউ পর্যটক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়ার অনুমতি নেই। এজন্য পূর্ব অনুমতি নিয়েই যেতে হবে সুন্দরবনে।

তবে নিজ উদ্যোগে বা একক উদ্যোগে কোন ভাবেই সুন্দরবনে বা এসব স্পটে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যেতে চাইলে অবশ্য যৌথভাবে যেতে হবে। এজন্য অবশ্য রয়েছে বিভিন্ন ট্যূরস কোম্পানি। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে ট্যূরস কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাই আয়োজন করে দেয় সুন্দরবণ ভ্রমণ। নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সী পার্ল ক্রুজেস সম্প্রতি কয়েকটি লাক্সারিয়াস জাহাজ নামিয়েছে।

এসব জাহাজে তিনদিনের ভ্রমণে জনপ্রতি মাত্র সাড়ে দশ হাজার টাকা লাগবে। জাহাজগুলোতে অভিজাত আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য সব ধরণের সুযোগসুবিধা যোগ করা হয়েছে। সুবিধা অনুযায়ী এসি, নন এসি, সিঙ্গেল, ডাবল কক্ষ নিতে পারেন ভ্রমণ পিপাসুরা। তিনদিন, চারদিন, ছয়দিন পর্যন্ত বিভিন্ন প্যাকেজে সুন্দরবণের মধ্যেই অসাধারণ সময় কাটাতে পারবে পর্যটকেরা। সারাদিন সুন্দরবনের ছোট খালের মধ্যে গা ছমছম করা পরিবেশে ছোট নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে দেখায় তাদের ট্যূরস গাইডেরা। সারারাত ক্রুজের ছাদে বার বি কিউ আয়োজন থাকে। সমুদ্রের মাছ দিয়ে করা হয় এসব বার বি কিউ।

উল্লেখ্য, সী পার্ল ক্রুজেস হচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল ফ্রাঞ্চাইজিস রয়েল টিউলিপের কক্সবাজারে অবস্থিত সবচেয়ে বড় পাঁচ তারকা মানের হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান। যাতে স্বাভাবিকভাবেই হোটেলটির সম্মান ধরে রাখার জন্য সী পার্ল ক্রুজ থেকেও সর্বোচ্চ মানের সেবা দেওয়া হবে।