ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইপিও পূর্ব ৩.০৫ টাকার ইপিএস এখন ঋণাত্মক ০.৫১ টাকা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • 62

রেজোয়ান আহমেদ : ঋণ পরিশোধ ও ব্যবসা সম্প্রসারনের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। ওই সময় ভালো মুনাফা ও সম্পদ দেখিয়ে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে মুনাফা কমতে কমতে কোম্পানিটি লোকসানে পতিত হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্তির ৮ বছরেও কোম্পানিটির ব্যবসা বাড়েনি এবং ঋণও কমেনি। বরং ব্যবসায় পতন হয়েছে এবং ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১১ সালে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ইস্যু করে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ২৫ টাকায়। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ৩.০৫ টাকা ও ৪৬.০১ টাকা শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দেখিয়ে এই দরে শেয়ার ইস্যু করা হয়। যা উত্তোলনে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস।

চলতি মূলধনবাবদ ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ও ঋণ পরিশোধে ৪০ কোটি টাকা ব্যবহারের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে জাহিনটেক্স। কিন্তু বাস্তবে কোম্পানিটির চলতি মূলধনবাবদ ব্যবসা যেমন বাড়েনি, ঠিক একইভাবে ঋণ কমেনি।

দেখা গেছে, আইপিও পূর্ব ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যা ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বেড়ে হয়েছে ১৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৮০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ৯০ শতাংশ।

আইপিও পূর্ব ২০১০ সালের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়। যেখানে থেকে সব ব্যয় শেষে ৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৩.০৫ টাকা মুনাফা হয়। তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের একই সময়ে বিক্রয় নেমে এসেছে ২০ কোটি ১২ লাখ টাকায়। যা থেকে সমস্ত ব্যয় শেষে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৫১ টাকা। অথচ আইপিও পূর্বের ১১৫ কোটি ৩ লাখ টাকার নিট সম্পদ বেড়ে এখন ১৯৮ কোটি ১২ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির মুনাফা না বাড়লেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন দ্বিগুণ করা হয়েছে। যা ইপিএসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কোম্পানিটির আইপিও পূর্ব ২৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন এখন ৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় উন্নিত হয়েছে। যা আইপিও’র অর্থের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ও ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ করে, ২০১৩ সালে ১৫ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে এই মূলধন বাড়ানো হয়েছে।

ভালো ব্যবসায় দেখিয়ে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করলেও তার কোন সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিটি শেয়ারে ২৫ টাকা বিনিয়োগ করা কোম্পানি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রাপ্তি অভিহিত মূল্য হিসাবে ৩ শতাংশ। তবে ২৫ টাকা হিসাবে লভ্যাংশের হার মাত্র ১.২০ শতাংশ। আর শেয়ার দর ১০.২০ টাকায় নেমে আসায় ক্যাপিটাল গেইনের পরিবর্তে লোকসানে শেয়ারহোল্ডাররা।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পরেও যদি উল্টো বাড়ে, সেটা কোম্পানির ম্যানেজম্যান্টের অসৎ উদ্দেশ্যকে উম্মোচিত করে। এছাড়া ৮ বছরে ব্যবসা না বাড়াটা চিন্তার বিষয়। মূলত আইপিওতে আসার জন্য কৃত্রিম মুনাফা দেখানো কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিজনেস আওয়ার/২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

আইপিও পূর্ব ৩.০৫ টাকার ইপিএস এখন ঋণাত্মক ০.৫১ টাকা

পোস্ট হয়েছে : ০৪:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

রেজোয়ান আহমেদ : ঋণ পরিশোধ ও ব্যবসা সম্প্রসারনের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। ওই সময় ভালো মুনাফা ও সম্পদ দেখিয়ে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে মুনাফা কমতে কমতে কোম্পানিটি লোকসানে পতিত হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্তির ৮ বছরেও কোম্পানিটির ব্যবসা বাড়েনি এবং ঋণও কমেনি। বরং ব্যবসায় পতন হয়েছে এবং ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১১ সালে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ইস্যু করে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ২৫ টাকায়। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ৩.০৫ টাকা ও ৪৬.০১ টাকা শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দেখিয়ে এই দরে শেয়ার ইস্যু করা হয়। যা উত্তোলনে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস।

চলতি মূলধনবাবদ ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ও ঋণ পরিশোধে ৪০ কোটি টাকা ব্যবহারের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে জাহিনটেক্স। কিন্তু বাস্তবে কোম্পানিটির চলতি মূলধনবাবদ ব্যবসা যেমন বাড়েনি, ঠিক একইভাবে ঋণ কমেনি।

দেখা গেছে, আইপিও পূর্ব ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যা ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বেড়ে হয়েছে ১৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৮০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ৯০ শতাংশ।

আইপিও পূর্ব ২০১০ সালের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়। যেখানে থেকে সব ব্যয় শেষে ৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৩.০৫ টাকা মুনাফা হয়। তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের একই সময়ে বিক্রয় নেমে এসেছে ২০ কোটি ১২ লাখ টাকায়। যা থেকে সমস্ত ব্যয় শেষে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৫১ টাকা। অথচ আইপিও পূর্বের ১১৫ কোটি ৩ লাখ টাকার নিট সম্পদ বেড়ে এখন ১৯৮ কোটি ১২ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির মুনাফা না বাড়লেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন দ্বিগুণ করা হয়েছে। যা ইপিএসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কোম্পানিটির আইপিও পূর্ব ২৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন এখন ৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় উন্নিত হয়েছে। যা আইপিও’র অর্থের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ও ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ করে, ২০১৩ সালে ১৫ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে এই মূলধন বাড়ানো হয়েছে।

ভালো ব্যবসায় দেখিয়ে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করলেও তার কোন সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিটি শেয়ারে ২৫ টাকা বিনিয়োগ করা কোম্পানি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রাপ্তি অভিহিত মূল্য হিসাবে ৩ শতাংশ। তবে ২৫ টাকা হিসাবে লভ্যাংশের হার মাত্র ১.২০ শতাংশ। আর শেয়ার দর ১০.২০ টাকায় নেমে আসায় ক্যাপিটাল গেইনের পরিবর্তে লোকসানে শেয়ারহোল্ডাররা।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পরেও যদি উল্টো বাড়ে, সেটা কোম্পানির ম্যানেজম্যান্টের অসৎ উদ্দেশ্যকে উম্মোচিত করে। এছাড়া ৮ বছরে ব্যবসা না বাড়াটা চিন্তার বিষয়। মূলত আইপিওতে আসার জন্য কৃত্রিম মুনাফা দেখানো কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিজনেস আওয়ার/২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: