বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৬ কি ১৭ সাল। শীতের রাত। প্রেসক্লাবের সামনে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন করছিলেন কিছু শিক্ষক। এই শীতের রাতেও এ দেশে বেতন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের আন্দোলন করতে হয়! ব্যাপারটি বড় ধাক্কা দিয়েছিল নির্মাতা জাহিদ গগণের মনে। অধিকার আদায়ের আরও অনেক গল্প তাঁর জানা। কে না জানে শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলামের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করা মেধাবী এই তরুণ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে প্রাণ দিয়েছিলেন। এমন টুকরো টুকরো গল্প ঘুরপাক খেতে খেতে একটি গল্প দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। যার ফলে তৈরি প্রেম পুরাণ নামের একটি ছবি। যা দেখা যাবে চরকিতে।
ছবির নাম প্রেম পুরাণ, গল্পের বীজগুলো সব অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের কাহিনিতে বোনা। সম্পর্কটি কোথায়? নির্মাতার উত্তর, ‘আমাদের দেশে প্রেমের যে গল্পগুলো দেখি, সেগুলো খুব একটা ভালো লাগেনি আমার। তাজুল ভাইয়ের শ্রমিকদের নিয়ে সংগ্রাম যতটা না দেখেছি, তার চেয়ে তাঁর স্ত্রী নাসিমা আপার যে ত্যাগ, সেটাই আমার কাছে বেশ নাড়া দিয়েছিল।’
নানা সংকট তাঁদের সামনে এসেছে। যেহেতু তাজুল ইসলাম শ্রমিক নেতা ছিলেন, তা সত্ত্বেও তাজুল ইসলামের জন্য তাঁর স্ত্রীর যে ত্যাগ, সেটাই প্রেমের পৌরাণিক কথন হিসেবে ধরা পড়েছে এই নির্মাতার কাছে। তথাকথিত চকলেট আর লাল গোলাপের প্রেম নয়, জাহিদ গগণ ক্যামেরায় আঁকতে চেয়েছেন এক ভিন্ন প্রেমের বয়ান।
ছবির গল্পটি এমন। প্রচণ্ড আদর্শবাদী তাজুলকে ভালোবেসে নিজের শহর আর সচ্ছল জীবন ছেড়ে অন্য শহরে পাড়ি জমায় শানু। পেছনে ফেলে যায় কেবল এক টুকরো কাগজে লেখা ঠিকানা। সেই ঠিকানা ধরে বহু বছর পরে পুরোনো বন্ধু শিমুল তাকে খুঁজতে থাকে। শিমুল কি খুঁজে পায় তার সেই বন্ধুকে?
এই গল্পটি ফুটিয়ে তুলতে অভিনয় করেছেন মনোজ প্রামাণিক, সামিয়া অথৈ, আরমান পারভেজ মুরাদ, অশোক বেপারী, পংকজ মজুমদার প্রমুখ। কেমন ছিল সেই সফর? মনোজ প্রামাণিক বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রেমের ছবির যে চর্চা, সে জায়গা থেকে একটা ছেলে–মেয়ের মধ্যে প্রেম। তাঁরা নিজেদের চকলেট, ফুল উপহার দেবে। রিকশায় ঘুরে বেড়াবে। প্রেমের কনটেন্ট বললেই এই ধরনের গতানুগতিক কিছু ছবি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। এটি সব সময় যে ছিল তা নয়। সম্প্রতি এটি বেড়ে গেছে। কিন্তু প্রেম কতটা গভীর ও সুবিস্তৃত হতে পারে এবং প্রেম যে পলিটিক্যালও হয়ে উঠতে পারে, এই ছবিতে সেটা আছে। প্রেমের আরেকটা ভিন্ন মাত্রা দেখতে পাই।’
নির্মাতা জানান, ৩৬ মিনিটের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলেও তাঁদের ছবি তৈরির পুরো প্রক্রিয়া একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির মতোই ছিল। মাঝে আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন তাঁরা। পরে গণ–অর্থায়নের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে পুরো বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ অর্থ এসেছিল। এরপর প্রযোজক ও গণ–অর্থায়নের অর্থ দিয়ে ছবিটি তৈরি হয়।
ছবিটি নির্মাণের পরে বেশ কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। সেখানে পুরস্কার ও প্রশংসা পায় এটি। উৎসবের মধ্যে আছে কুয়ালালামপুর চলচ্চিত্র উৎসব, দাদাসাহেব ফালকে চলচ্চিত্র উৎসব, মুম্বাই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব, গোয়া চলচ্চিত্র উৎসব, জয়পুর চলচ্চিত্র উৎসব ইত্যাদি।
জাহিদ গগণ পরিচালিত চরকি নিবেদিত ‘প্রেম পুরাণ’ স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাটি চরকিতে মুক্তি পাবে আজ ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায়।
বিজনেস আওয়ার/ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/ জে ভি