ঢাকা , বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি সিলেটবাসীর

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ মে ২০২২
  • 235

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদকঃ সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো ঘরবাড়ি থেকে নামেনি পানি। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি এখনো।

অন্যদিকে জকিগঞ্জের ত্রিগাঙের মোহনায় বাঁধ ভেঙে কুশিয়ারার তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে জকিগঞ্জ সহ আশপাশের উপজেলায়।

তবে উজানে বৃষ্টিপাত আর না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ও নিম্নাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। ফলে কৃষকের ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্যের অভাব। বাড়ি-ঘর প্লাবিত হওয়াতে গো খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় আক্রান্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরণের রোগ বালাই। বিভিন্ন উপজেলার সাথে জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না বন্যা আক্রান্তরা।

অন্যদিকে সরকারি হিসেবে সিলেটে ২০ লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের তরফ থেকে যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে।

এদিকে, সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার ৯০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ২০ লাখ মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, বোরো ধান ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর ও গ্রীষ্মকালীন সবজি ১ হাজার ৩৩৪ হেক্টর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ।

চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০ টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নগরীর বেশকিছু লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই অনহারে অর্ধাহারে দিনপাত কাটাচ্ছেন।

সিলেট নগরীর বর্ধিত এলাকার বাসিন্দারা বন্যার পানিতে চরম দুর্ভোগে সময় পার করছেন । টুকেরবাজার এলাকায় সিলেট- সুনামগঞ্জ সড়কে পানি উঠেছে। পানি কমতে শুরু করলেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত সড়কে পানি ছিল।

সিলেট নগরীর মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা সুনীল সিংহ জানান, তার ঘরে কোমর সমান পানি ছিল, আজ (শনিবার) সকাল পর্যন্ত আধ হাতের মত কমেছে। এভাবে ধীরে ধীরে কমলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা ও জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, সরকার থেকে তারা যা পাচ্ছেন সবই বিলিয়ে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ৩০৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ আসবে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার জানান, বন্যা প্লাবিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকায় ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে, সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জকিগঞ্জের ত্রি মোহনার বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দুর্ভোগ স্বচক্ষে দেখেছি। পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও বেশি করে যাতে সহায়তা করা যায় সে ব্যাপারে কথা বলবো। আর ত্রি মোহনার বাঁধের স্থায়ী সমাধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আলোচনা সাপেক্ষে নেওয়া হবে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শুক্রবার দিনভর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বন্যার্তদের তালিকা করেন। তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মেয়র।

বিজনেস আওয়ার/ ২১,মে/ এস এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি সিলেটবাসীর

পোস্ট হয়েছে : ১১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ মে ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদকঃ সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো ঘরবাড়ি থেকে নামেনি পানি। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি এখনো।

অন্যদিকে জকিগঞ্জের ত্রিগাঙের মোহনায় বাঁধ ভেঙে কুশিয়ারার তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে জকিগঞ্জ সহ আশপাশের উপজেলায়।

তবে উজানে বৃষ্টিপাত আর না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ও নিম্নাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। ফলে কৃষকের ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্যের অভাব। বাড়ি-ঘর প্লাবিত হওয়াতে গো খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় আক্রান্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরণের রোগ বালাই। বিভিন্ন উপজেলার সাথে জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না বন্যা আক্রান্তরা।

অন্যদিকে সরকারি হিসেবে সিলেটে ২০ লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের তরফ থেকে যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে।

এদিকে, সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার ৯০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ২০ লাখ মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, বোরো ধান ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর ও গ্রীষ্মকালীন সবজি ১ হাজার ৩৩৪ হেক্টর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ।

চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০ টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নগরীর বেশকিছু লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই অনহারে অর্ধাহারে দিনপাত কাটাচ্ছেন।

সিলেট নগরীর বর্ধিত এলাকার বাসিন্দারা বন্যার পানিতে চরম দুর্ভোগে সময় পার করছেন । টুকেরবাজার এলাকায় সিলেট- সুনামগঞ্জ সড়কে পানি উঠেছে। পানি কমতে শুরু করলেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত সড়কে পানি ছিল।

সিলেট নগরীর মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা সুনীল সিংহ জানান, তার ঘরে কোমর সমান পানি ছিল, আজ (শনিবার) সকাল পর্যন্ত আধ হাতের মত কমেছে। এভাবে ধীরে ধীরে কমলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা ও জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, সরকার থেকে তারা যা পাচ্ছেন সবই বিলিয়ে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ৩০৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ আসবে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার জানান, বন্যা প্লাবিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকায় ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে, সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জকিগঞ্জের ত্রি মোহনার বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দুর্ভোগ স্বচক্ষে দেখেছি। পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও বেশি করে যাতে সহায়তা করা যায় সে ব্যাপারে কথা বলবো। আর ত্রি মোহনার বাঁধের স্থায়ী সমাধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আলোচনা সাপেক্ষে নেওয়া হবে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শুক্রবার দিনভর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বন্যার্তদের তালিকা করেন। তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মেয়র।

বিজনেস আওয়ার/ ২১,মে/ এস এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: