শেয়ারবাজারে তালিকভুক্ত ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ব্যবসায় রেকর্ড ৯ হাজার ৩০১ কোটি ৭২ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভায় এই নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যা বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) স্ব স্ব কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে প্রদান করা হবে।
কোম্পানিগুলোর পর্ষদের ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য প্রায় সব কোম্পানির এজিএম আগামি জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এরপরে জুলাইয়ের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে এরইমধ্যে কিছু কোম্পানির এজিএম শেষে লভ্যাংশ পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।
আগের বছরের ন্যায় এবছরও নগদ লভ্যাংশ প্রদানে কিছুটা কড়াকড়ি ছিল। এ্ক্ষেত্রে শিবলী কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা ও বাজেটে কমপক্ষে বোনাস শেয়ারের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদান বাধ্যবাধকতা অন্যতম কারন। অন্যথায় পুরো বোনাস শেয়ারের উপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ করারোপের শাস্তির যেমন বিধান রয়েছে, একইভাবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের জেরার মুখে পড়তে হয়।
বর্তমান কমিশনের অধীনে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও যৌক্তিক কারন ছাড়া বোনাস শেয়ার দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এই বোনাস শেয়ার দিতে গেলে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া লভ্যাংশ না দেওয়া বা নামমাত্র দেওয়া কোম্পানিগুলোকে ব্যাখ্যার জন্য কমিশনে তলব করা হয়। যে কারনে সঙ্গত কারনেই কমে এসেছে বোনাস শেয়ার।
দেখা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২১ মে পর্যন্ত সময়ে ডিসেম্বর ক্লোজিং, কয়েকটি অন্তর্বর্তীকালীন ও দু-একটি মার্চ ক্লোজিং কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ পর্যন্ত পর্ষদ সভা করা ৯০ কোম্পানির মধ্যে ৮২টির পর্ষদ ৯ হাজার ৩০১ কোটি ৭২ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর জন্য নির্দিষ্ট সময় গত ৩০ এপ্রিল শেষ হয়ে গেলেও কয়েকটি কোম্পানি এখনো লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা সম্পন্ন করেনি। আর জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য এই সময় সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে।
কোম্পানিগুলোর এই বড় নগদ লভ্যাংশ শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এই নগদ লভ্যাংশে লেনদেনে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ সভা করা ১০০ কোম্পনির মধ্যে ৮৪টির পর্ষদ ৩ হাজার ৫১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
অন্যদিকে গত (২০২০-২১) অর্থবছরের ব্যবসায় ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ২১৩ কোম্পানির পর্ষদ ৮ হাজার ৫৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর এর আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) ব্যবসায় ১৪৪টির পর্ষদ (মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছাড়া) ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
২০২১ সালের নগদ লভ্যাংশের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের অন্যতম কারন ছিল অতিরিক্ত বোনাস শেয়ার দিয়ে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা। তবে বিগত কমিশনের প্রচেষ্টায় মুনাফার ৩০ শতাংশ এবং কমপক্ষে অর্ধেক নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতার আইন গঠন ও বর্তমান কমিশনের তা বাস্তবায়নে এখন অযৌক্তিক বোনাস শেয়ার দেওয়া যায় না। যার ফলশ্রুতিতে এই বড় নগদ লভ্যাংশের খবর এসেছে। যা নিসন্দেহে শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর।
এ বছর শেয়ারহোল্ডারদেরকে ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে গ্রামীণফোন। এ কোম্পানিটি থেকে ২০২১ সালের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডারদেরকে ২৫০ শতাংশ হারে অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ২৫ টাকা করে মোট ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপরের অবস্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি। এ কোম্পানিটি থেকে ২০২১ সালের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডারদেরকে ২৭৫ শতাংশ হারে অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ২৭.৫০ টাকা করে মোট ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দেওয়া হয়। আর ২৫% হারে বা প্রতিটি শেয়ার ২.৫০ টাকা করে মোট ২৯০ কোটি ৩৪ লাখ টাকার মাধ্যমে ৩য় সর্বোচ্চ ঘোষণা দেয় লাফার্জহোলসিম।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা করেছে কেঅ্যান্ডকিউ এর পর্ষদ। এ কোম্পানির পর্ষদ অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে ৫% হারে ২৬ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে। এরপরের অবস্থানে থাকা অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন ও শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১% হারে ৩৬ লাখ টাকার এবং মুন্নু ফেব্রিক্স থেকেও ১% হারে অন্তর্বর্তীকালীন ও শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের ৬১ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে।
এ বছর ৮২ কোম্পানির মধ্যে পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৫৯ কোম্পানি। বাকি ২৩ কোম্পানির পর্ষদ নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বর্তমান কমিশনের শক্ত অবস্থানের কারনে এই বিশাল নগদ লভ্যাংশের খবর শুনতে পেলাম। যে নগদ লভ্যাংশ বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক খবর। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে, আগামিতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর নগদ লভ্যাংশে বাজারে গতি তরান্বিত করবে বলে মনে করেন তিনি।
নিম্নে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২১ মে পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা কোম্পানিগুলোর তথ্য তুলে ধরা হল-
*শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য
** অন্তবর্তীকালীন
নিম্নে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের পরিমাণ তুলে ধরা হল-
কোম্পানির নাম | লভ্যাংশের হার (নগদ) | নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকায়) |
ব্যাংক খাত | ||
প্রাইম ব্যাংক | ১৭.৫০% | ১৯৮.১৫ |
ব্যাংক এশিয়া | ১৫% | ১৭৪.৮৯ |
ইসলামী ব্যাংক | ১০% | ১৬১ |
আল-আরাফাহ ব্যাংক | ১৫% | ১৫৯.৭৪ |
এক্সিম ব্যাংক | ১০% | ১৪৪.৭৬ |
সিটি ব্যাংক | ১২.৫% | ১৩৩.৪০ |
যমুনা ব্যাংক | ১৭.৫% | ১৩১.১১ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ১২.৫% | ১৩০.৩৮ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ১২.৫% | ১২৯.১৫ |
পূবালি ব্যাংক | ১২.৫% | ১২৮.৫৪ |
এনসিসি ব্যাংক | ১২% | ১২২.০২ |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ১২.৫% | ১১৯.২৩ |
ঢাকা ব্যাংক | ১২% | ১১৩.৯৫ |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ১৭.৫% | ১১০.৬৯ |
ব্র্যাক ব্যাংক | ৭.৫% | ১০৪.৪১ |
শাহজালাল ব্যাংক | ১০% | ১০২.৯১ |
সাউথইস্ট ব্যাংক | ৮% | ৯৫.১২ |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ১২.৫% | ৮৮.৪৫ |
উত্তরা ব্যাংক | ১৪% | ৭৯.০৬ |
এনআরবিসি ব্যাংক | ৭.৫% | ৫৫.৩২ |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক | ৫% | ৪৯.৮১ |
ইউনিয়ন ব্যাংক | ৫% | ৪৯.৩৫ |
স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক | ৫% | ৪৯.২৫ |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ৩% | ৩০.৯৩ |
সাউথবাংলা ব্যাংক | ৩% | ২৪.৪৮ |
এবি ব্যাংক | ২% | ১৬.৭২ |
লিজিং খাত | ||
আইডিএলসি | ১৫% | ৫৯.৩৯ |
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স | ১০% | ৫৩.৮৮ |
আইপিডিসি | ১২% | ৪৪.৫৩ |
ইউনাইটেড ফাইন্যান্স | ১০% | ১৮.৭১ |
ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং | ১৫% | ২৬.৫৯ |
ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স | ১৬% | ১৮.৭২ |
ইসলামিক ফাইন্যান্স | ১০.৫০% | ১৪.৭৩ |
বীমা খাত | ||
রিল্যায়েন্স ইন্স্যুরেন্স | ২৫% | ২৬.২৯ |
প্রগতি ইন্স্যুরেন্স | ৩৫% | ২২.৯৬ |
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স | ২৫% | ১৯.২৪ |
ঢাকা ইন্স্যুরেন্স | ২৫% | ১০.০৩ |
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স | ১৮% | ৯.৫৭ |
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স | ২২% | ৯.৪৮ |
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৮.৩৯ |
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স | ১৮% | ৭.৯৭ |
রূপালি ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৭.৬৭ |
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স | ১৮% | ৭.৬২ |
ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৭.১০ |
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স | ১৫% | ৭.০৬ |
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৬.৮২ |
ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স | ১৫% | ৬.০৫ |
পিপলস ইন্স্যুরেন্স | ১২.৫% | ৫.৭৮ |
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স | ১৩% | ৫.৬৩ |
কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্স | ১২% | ৫.৩৯ |
নিটল ইন্স্যুরেন্স | ১২.৫০% | ৫.০৩ |
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স | ১২% | ৪.৯৯ |
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৪.৯৬ |
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স | ১২% | ৪.৮৭ |
সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স | ১২% | ৪.৮০ |
অগ্রনি ইন্স্যুরেন্স | ১৫% | ৪.৭৬ |
ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৪.৪৫ |
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৪.৩১ |
নর্দার্ণ ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৪.২৭ |
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৪.০৭ |
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৪ |
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৪ |
প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স | ১০% | ৩.৪৮ |
অন্যান্য খাত | ||
গ্রামীণফোন | ২৫০% (অন্তর্বর্তীসহ) | ৩৩৭৫.৭৫ |
বিএটিবিসি | ২৭৫% (অন্তর্বর্তীসহ) | ১৪৮৫ |
লাফার্জ হোলসিম | ২৫% | ২৯০.৩৪ |
রবি আজিয়াটা | ৫% (অন্তর্বর্তীসহ) | ২৬১.৯০ |
ম্যারিকো | ৮০০% (অন্তর্বর্তীসহ) | ২৫২ |
বার্জার পেইন্টস | ৩০০% | ১৩৯.১৩ |
লিন্ডে বিডি | ৫৫০% | ৮৩.৭০ |
রেকিট বেনকিজার | ১৬৫০% | ৭৭.৯৬ |
সিঙ্গার বাংলাদেশ | ৬০% | ৫৯.৮২ |
ইউনিলিভার | ৪৪০% | ৫৩ |
হাইডেলবার্গ সিমেন্ট | ২৬% | ১৪.৬৯ |
বাটা সু | ১০০% (অন্তর্বর্তীসহ) | ১৩.৬৮ |
এমবিএল ফার্স্ট ফান্ড | ১০% | ১০ |
এআইবিএল ফার্স্ট ফান্ড | ১০% | ১০ |
ঢাকা ডাইং | ২% | ১.৭৪ |
* খান ব্রাদার্স | ২% (অন্তর্বর্তী) | ১.৩৭ |
* মুন্নু ফেব্রিক্স | ১% (অন্তর্বর্তী) | ০.৬১ |
* অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ | ১% (অন্তর্বর্তী) | ০.৩৬ |
** কেঅ্যান্ডকিউ | ৫% (অন্তর্বর্তী) | ০.২৬ |
মোট ৮২ কোম্পানি | ৯৩০১.৭২ কোটি টাকা |
বিজনেস আওয়ার/২২ মে, ২০২২/আরএ