বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে নিমজ্জিত ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়া একমাত্র ব্যাংক আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক। তবে ব্যাংকটির চলতি বছরের প্রথমার্ধে অনাকাঙ্খিত মুনাফা করেছে বলে আর্থিক হিসাব প্রকাশ করে। যা ব্যাংকটির শেয়ার দরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু ব্যাংকটির প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায় কোন উন্নতি হয়নি। আগের হিসাবে দেখানো ব্যয়কে এ বছরের প্রথমার্ধে সংশোধনী করে রিভার্স বা আয় দেখানোর কারনে নিট মুনাফা হয়েছে।
আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে ছিল। তবে চলতি বছরের প্রথমার্ধে নিট মুনাফা দেখিয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা বা ইপিএস ০.০২ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের প্রথমার্ধে ছিল নিট লোকসান ২১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ইপিএস (ঋণাত্মক) ০.৩২ টাকা।
গত ১৭ জুলাই ব্যাংকটির ব্যবসায় এমন উত্থানের খবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। যে খবরে ওইদিনই ১০% বেড়ে ৫ টাকার শেয়ারটি ৫.৫০ টাকায় উঠে যায়। এরপরের দিন শেয়ারটি ৯.০৯% বেড়ে ৬ টাকায় উঠে। যে শেয়ারটি ১৭ আগস্ট লেনদেন শেষে ৫.৪০ টাকায় রয়েছে।
মুনাফার খবরে শেয়ারটির এমন দর বাড়ে। কিন্তু প্রকতপক্ষে ব্যাংকটির ব্যবসায় কোন উত্থানই হয়নি। যে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আড়াঁল করেছে। হয়তো কোন একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এমনটি করা হয়েছে।
ব্যাকংটির চলতি বছরের প্রথমার্ধে মুনাফার পেছনে কারন হিসেবে আগে ব্যয় হিসাবে দেখানো একটি বিনিয়োগ আদায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার একটি বিনিয়োগ আগে ব্যয় হিসেবে দেখিয়েছিল এবং আদায় হবে না মর্মে হিসাব থেকে বাদ দিয়েছিল। যেটা চলতি বছরের প্রথমার্ধে আদায় হওয়ায় ব্যয়ের রিভার্স অন্যান্য পরিচালন আয় দেখিয়েছে। এতে করে ব্যাংকটির নিট মুনাফা হয়েছে।
এমন আয় হওয়াটা অস্বাভাবিক। যা সচারচর হয় না। এছাড়া এটি ব্যবসার কোন অংশ না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি এ জাতীয় আরও বিনিয়োগকে ব্যয় দেখিয়ে থাকে এবং তা কোনসময় আদায় হয়, তাহলে আয় হিসাবে দেখাবে। তবে সেটা কবে আদায় হবে, তা বলা মুশকিল।
আরও পড়ুন……
ক্রাউন সিমেন্টের বিক্রি বেড়েছে ২০০ কোটি টাকার, মুনাফা কমেছে ৫৭ কোটি
এই ব্যাংকটির চলতি বছরের প্রথমার্ধেও মূল ব্যবসায় বা প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে গতানুগতিক সুদজনিত আয় হয়েছে। আগের বছরের প্রথমার্ধের ১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সুদজনিত আয় এবার ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হয়েছে। যে ব্যাংকটির গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া আমানতের বিপরীতে ব্যয় এর থেকে বেশি। আগের বছরের আমানতের পেছনে ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ব্যয় এ বছরের প্রথমার্ধে হয়েছে ২০ কোটি ২ লাখ টাকা। এই সুদ আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ার কারনেই মূলত ব্যাংকটি লোকসানে নিমজ্জিত থাকে।
১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করা আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে নিয়মিত লোকসানের মাধ্যমে ব্যাংকটির নিট সম্পদ এখন ঋণাত্মক ১ হাজার ২০৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যাতে করে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ দাঁড়িয়েছে (এনএভিপিএস) ঋণাত্মক ১৮.১২ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/২০ আগস্ট, ২০২২/আরএ