বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশে হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেকের মনে দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলে দিয়েছে। কেননা গণপরিবহনে গুণতে হতে পারে বাড়তি ভাড়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছেন, হেঁটে যাওয়া সম্ভব এমন স্থানে যাওয়ার জন্য কোনো পরিবহনের ওপর নির্ভর না করে বরং নিজ পায়ের ওপরই নির্ভর করবেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁটার অভ্যাস অনেকভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তবে হাঁটতে হবে দ্রুত এবং নিয়মিত। এ প্রতিবেদনে নিয়মিত হাঁটার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
তারুণ্য ধরে রাখে
তারুণ্য ধরে রাখতে হলে নিয়মিত হাঁটতে হবে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, হাঁটার মতো কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজ টেলোমেয়ারকে সংরক্ষণ করে বা এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে। টেলোমেয়ার হচ্ছে আমাদের ডিএনএ এর অংশ, যা বয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়।
অ্যালার্জি দূর করে
হাঁচি, নাক বন্ধ, চুলকানি কিংবা চোখ থেকে পানি পড়ার কারণে কি আপনি বিব্রতকর অবস্থায় আছেন? তাহলে হাঁটতে পারেন। একটি থাই গবেষণা অনুসারে, হাঁটা বা দৌঁড়ানো (এমনকি ১৫ মিনিটের জন্য হলেও) হাঁচি, চুলকানি এবং ঠান্ডার সমস্যা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে।
আয়ু বাড়ায়
আপনি কি আপনার আয়ু বাড়াতে চান? তাহলে হাঁটুন। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘প্রতিদিন এক্সারসাইজ করে আপনি আপনার জীবনে সাত বছর যোগ করতে পারেন- আপনার ওজন যাই হোক না কেন।’ যারা হাঁটে তাদের কাছে এই অতিরিক্ত বছরগুলো সুখের হবে। অন্য একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, এক্সারসাইজ করে এমন লোকেরা জানায় যে তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সুখ ও উদ্দীপনা অনুভব করে এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে বেশ উৎসাহী থাকে।
গভীর ঘুমে সাহায্য করে
দৈনিক আট ঘণ্টা গভীর ঘুম হচ্ছে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। প্রাণবন্ত ও দ্রুতগামী হাঁটা আপনাকে ভালো ঘুম এনে দেবে, যার ফলে আপনাকে ঘুমের ওষুধ খেতে হবে না এবং ঘুমন্ত অবস্থায় চলাফেরাও দূর হবে। ঘুম সংক্রান্ত গবেষণার মেটা-অ্যানালাইসিস থেকে জানা যায়, যারা নিয়মিত হাঁটেন তাদের ঘুমের মান ভালো ও দীর্ঘ হয়।
মানসিক চাপ দূর করে
বিজ্ঞান বলছে, হাঁটা হচ্ছে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ দূর করার সর্বাধিক দ্রুতগামী ও কার্যকরী উপায়গুলোর একটি। দ্য আমেরিকান জার্নাল অব কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘হাঁটা স্ট্রেস হরমোন করটিসল ক্লিয়ার করে এবং মনের ভেতর বয়ে চলা উদ্বেগ থামিয়ে দিতে সাহায্য করে।’
অর্থ বাঁচায়
ফিটনেসের জন্য জিমের মেম্বারশিপ কিংবা ঘরে ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি এবং ব্যায়ামের পোশাক ও জুতার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু এর প্রয়োজন নেই যদি আপনি হাঁটেন- এমনকি জুতাও অপশনাল! হাঁটা স্বাস্থ্যের বড় উপকার করে বলে স্বাস্থ্যসেবার পেছনেও অর্থব্যয় হ্রাস পায়।
মেধাকে শাণিত করে
হাঁটা আপনার শরীরের জন্য যেমন ভালো, তেমনি আপনার ব্রেইন বা মেধার জন্যও ভালো। এটি ব্রেইনের সবদিকের উপকার করে, যেমন- স্মৃতিশক্তি, বোধশক্তি, জ্ঞানার্জন ও অধ্যয়ন। হাঁটা ব্রেইনের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি আপনার ব্রেইনকে অ্যালজেইমার’স রোগ ও ডিমেনশিয়ার মতো জ্ঞানীয় রোগ থেকে রক্ষা করে।
ব্যথা কমায়
ক্রনিক পেইন রোগে ভুগলে পরিমিত হাঁটুন। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, পরিমিত হাঁটা স্বল্পমেয়াদে বা দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক পেইন উপশম করে, এমনকি যে রোগের কারণে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে সে রোগ নিরাময় না হলেও। হাঁটায় আপনার ক্রনিক পেইন নিরাময় নাও হতে পারে, কিন্তু এটি আপনাকে ভালো অনুভবে সাহায্য করতে পারে।
হাড় মজবুত করে
মজবুত হাড়ের লোকেরা অস্টিওপোরোসিস থেকে রক্ষা পায় এবং সেই সঙ্গে এর সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাসমূহ যেমন- ফ্র্যাকচার, অক্ষমতা এবং মেরুদন্ডের সংকোচন থেকে বাঁচতে পারে। অক্সফোর্ড পরিচালিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘মজবুত ও সুস্থ হাড় পাওয়ার সেরা উপায় হচ্ছে দৌঁড়, নাচ কিংবা হাঁটা। গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক নিয়মিত হেঁটেছেন তাদের হাড়ের ঘনত্ব তাদের নিষ্ক্রিয় বন্ধুদের চেয়ে বেশি ভালো ছিল।
মেটাবলিজম বাড়ায়
মেটাবলিক সিন্ড্রোম (বর্ধিত রক্তচাপ/কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্ত শর্করা এবং মেদবহুল পেটের সমন্বয়) হচ্ছে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং এমনকি অকাল মৃত্যুর ইঙ্গিত দিতে পারে। সার্কুলেশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘যেকোনো কার্ডিও এক্সারসাইজ যেমন- হাঁটা মেটাবলিক সিন্ড্রোম প্রতিরোধ করতে পারে এবং এমনকি ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে।’ কিন্তু মেটাবলিজম বৃদ্ধির জন্য দ্রুততা হচ্ছে প্রধান চাবিকাঠি। দ্রুত ও মন্থরগতিতে হাঁটুন।
সম্পর্ক উন্নত করে
হাঁটা আমাদেরকে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয় এবং সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়। সাইকোলজি অব স্পোর্ট অ্যান্ড এক্সারসাইজে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, আপনি পরিচিতজনদের কাছে ভালো উদাহরণ হবেন যখন তারা দেখবে যে আপনি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছেন এবং তারাও হাঁটার জন্য আরো বেশি উৎসাহিত হবে।
মেজাজ ভালো রাখে
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁটার অভ্যাস ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার লাগাম টেনে ধরে। আর্কাইভস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ‘ডিপ্রেশনে ভোগা যেসব লোকেরা প্রতিদিন হেঁটেছে তাদের উপসর্গ ওষুধ সেবনকারীদের মতোই হ্রাস পেয়েছে।’ প্রকৃতপক্ষে, হাঁটার ফলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিষয় আপনার কাছে আর বিষণ্নতার কারণ বলে মনে হবে না। একটি ফলো-আপ গবেষণায় পাওয়া যায়, ‘হাঁটার ফলে মেজাজের যে উন্নতি হয় তা ওষুধের প্রভাবের চেয়ে বেশি স্থায়ী হয়।’
রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং আরো অনেক অসুস্থতা প্রতিরোধের সামর্থ্য আছে বলে এক্সারসাইজকে বলা হয় মিরাকল ড্রাগ বা অলৌকিক ওষুধ। হাঁটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকরী এই এক্সারসাইজটি আপনাকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন থেকে দূরে রাখবে।
বিজনেস আওয়ার/ ২২ আগস্ট,২০২২/ এস এইচ