ঢাকা , শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চা শিল্প যেন ধ্বংস না হয় সে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

  • পোস্ট হয়েছে : ০৭:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 47

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চা শ্রমিকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, তাদের নিয়ে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চা শিল্প যেন ধ্বংস না হয় শ্রমিকসহ সকলের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার আগে তিনি এ আহ্বান জানান। দীর্ঘ বক্তব্য শেষে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রথমে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাহিদ আহসান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন চা শ্রমিক রিতা। এসময় তিনি চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

রিতা বলেন, ‘আমরা সব সময় আপনার কথা ভাবি এবং ভেবে যাবো। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এ কারণে আমরা এখন স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি। আপনাকে কখনো সরাসরি দেখিনি। তবে আজ দেখছি, কতোটা আনন্দ পাচ্ছি, সেটা বোঝাতে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনো নৌকা মার্কা ছাড়া ভোট দিব না। সারা দুনিয়া কি বললো, তা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা জানি আপনি আমদের মা জননী। আপনিই আমাদের মা।’

পরে অপর একজন চা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই চা শ্রমিক বলেন, ‘আপনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ কত কিছু দিচ্ছেন। ভোটের দিন এলে ঘরে ঘরে গিয়ে শেখ হাসিনার জন্য ভোট চাই। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেছি। এ কারণে কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন।’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যেটা করেছেন, তা পেটের দায়ে করেছন। এ জন্য প্রথমে আমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে আপানদের সঙ্গে। এ সময় চা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় আপনাদের পাশে আছি।’

দ্বিতীয় ধাপে হবিগঞ্জের চন্ডিছড়া চা বাগান থেকে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এরপর চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এক চা শ্রমিক বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের চা বাগানে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই থেকে আমরা চা শ্রমিক হিসেবে নিষ্পেষিত হচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখনি আপনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আজ মনে হচ্ছে, চা শ্রমিকদের মত সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। আমরা কখনো আপনাকে ভুলব না। আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ আপনার কাছে ন্যস্ত করলাম। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়েই বেঁচে থাকুন।’

তৃতীয় ধাপে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে শ্যামলী গোয়ালা নামের এক চা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শ্যামলী বলেন, ‘না খেয়ে পেটের ক্ষুধায় আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমাদের ক্ষমা করবেন।’

বিভিন্ন দাবির বিষয়ে তুলে ধরে তিনি বলেন, চা বাগানে ডাক্তারের প্রয়োজন, গর্ভবতী মায়ের ছুটি ছয় মাস করে দেওয়া প্রয়োজন। এ সময় ভূমির অধিকার দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানান শ্যামলী গোয়ালা।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালীর সভাপতি রাজু গোয়ালা ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ ছিল না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমাদের হয়তো এই পরিস্থিতি থাকতো না। এ সময় চা শ্রমিকদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা ও চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা করার আবেদন জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২০ দিন ধর্মঘট পালনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেন। এতে চা শিল্পের অচলাবস্থা কাটে। এরপর ধর্মঘট প্রত্যাহারের পাশাপাশি সরকার প্রধানের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন চলাকালেও শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলার দাবি জানিয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আজ চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললেন।

বিজনেস আওয়ার/ ০৩ সেপ্টেম্বর,২০২২/ এস এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

চা শিল্প যেন ধ্বংস না হয় সে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

পোস্ট হয়েছে : ০৭:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চা শ্রমিকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, তাদের নিয়ে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চা শিল্প যেন ধ্বংস না হয় শ্রমিকসহ সকলের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার আগে তিনি এ আহ্বান জানান। দীর্ঘ বক্তব্য শেষে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রথমে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাহিদ আহসান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন চা শ্রমিক রিতা। এসময় তিনি চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

রিতা বলেন, ‘আমরা সব সময় আপনার কথা ভাবি এবং ভেবে যাবো। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এ কারণে আমরা এখন স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি। আপনাকে কখনো সরাসরি দেখিনি। তবে আজ দেখছি, কতোটা আনন্দ পাচ্ছি, সেটা বোঝাতে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনো নৌকা মার্কা ছাড়া ভোট দিব না। সারা দুনিয়া কি বললো, তা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা জানি আপনি আমদের মা জননী। আপনিই আমাদের মা।’

পরে অপর একজন চা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই চা শ্রমিক বলেন, ‘আপনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ কত কিছু দিচ্ছেন। ভোটের দিন এলে ঘরে ঘরে গিয়ে শেখ হাসিনার জন্য ভোট চাই। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেছি। এ কারণে কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন।’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যেটা করেছেন, তা পেটের দায়ে করেছন। এ জন্য প্রথমে আমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে আপানদের সঙ্গে। এ সময় চা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় আপনাদের পাশে আছি।’

দ্বিতীয় ধাপে হবিগঞ্জের চন্ডিছড়া চা বাগান থেকে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এরপর চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এক চা শ্রমিক বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের চা বাগানে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই থেকে আমরা চা শ্রমিক হিসেবে নিষ্পেষিত হচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখনি আপনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আজ মনে হচ্ছে, চা শ্রমিকদের মত সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। আমরা কখনো আপনাকে ভুলব না। আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ আপনার কাছে ন্যস্ত করলাম। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়েই বেঁচে থাকুন।’

তৃতীয় ধাপে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে শ্যামলী গোয়ালা নামের এক চা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শ্যামলী বলেন, ‘না খেয়ে পেটের ক্ষুধায় আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমাদের ক্ষমা করবেন।’

বিভিন্ন দাবির বিষয়ে তুলে ধরে তিনি বলেন, চা বাগানে ডাক্তারের প্রয়োজন, গর্ভবতী মায়ের ছুটি ছয় মাস করে দেওয়া প্রয়োজন। এ সময় ভূমির অধিকার দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানান শ্যামলী গোয়ালা।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালীর সভাপতি রাজু গোয়ালা ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ ছিল না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমাদের হয়তো এই পরিস্থিতি থাকতো না। এ সময় চা শ্রমিকদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা ও চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা করার আবেদন জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২০ দিন ধর্মঘট পালনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেন। এতে চা শিল্পের অচলাবস্থা কাটে। এরপর ধর্মঘট প্রত্যাহারের পাশাপাশি সরকার প্রধানের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন চলাকালেও শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলার দাবি জানিয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আজ চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললেন।

বিজনেস আওয়ার/ ০৩ সেপ্টেম্বর,২০২২/ এস এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: