শাহিন শুভ : বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে যে কয়টি শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে, তারমধ্যে অন্যতম সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস। এই কারসাজিতে যারা ভূমিকা রেখেছে, তাদের কোম্পানির কারসাজিতে আবার ভূমিকা রেখেছে সোনালি পেপার ও কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস। অনেকটা মিলেমিশে কারসাজি করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া ফরচুন সুজ ও এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে সোনালি পেপার ও কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ইউনুসের নাম এসেছে। যেখানে তারা বড় ক্রেতা হিসেবে দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন।
গেম্বলিং আইটেম সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের ঋণ নিয়ে মূলধনের তুলনায় কয়েকগুণ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে শেয়ারবাজারে। নিজের শেয়ার নিয়ে গেম্বলিং করে অন্যরা যেমন আয় করেছে, ঠিক একইভাবে সাধারন বিনিয়োগকারীদের অর্থকে মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সোনালি পেপারও বড় মুনাফাও অর্জন হয়েছে। যা কোম্পানির মূল ব্যবসার থেকেও বেশি।
তবে মূল ব্যবসাকে বাদ দিয়ে কোন কোম্পানির শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক লক্ষণ না বলে বিজনেস আওয়ারকে জানিয়েছেন শেয়ারবাজারের দীর্ঘ অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার। তারপরেও কিছু কোম্পানিতে এমনটি হচ্ছে। এছাড়া ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে অনেকটা পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করছে। যা দীর্ঘমেয়াদি শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পথে বাধাঁ।
তিনি বলেন, মূল ব্যবসার পরিবর্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সাময়িক লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব না। এখানে রাতারাতি যেমন লাভ করা যায়, তেমনি রাতারাতি লোকসানও হয়। ওইসময় কোম্পানিকে লোকসানে পতিত হতে হবে। অতিত অভিজ্ঞতা এমনটিই বলে। তাই শেয়ারবাজারে একটি কোম্পানির কিছু বিনিয়োগ হতে পারে, কিন্তু মূল ব্যবসার থেকে বেশি না। যদি এমনটি কোন কোম্পানিতে হয়, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন হতে হবে।
দেখা গেছে, সোনালি পেপারের দুটি বিও থেকে ফরচুন সুজ ও মোহাম্মদ ইউনুস ১টি বিও থেকে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের শীর্ষ তালিকায় ছিলেন।
ডিএসইর ফরচুন সুজ নিয়ে ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত ও ২০২১ সালের ৫ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
নিম্নে ডিএসইর তদন্তকালীন সময়ে সোনালি পেপার ও মোহাম্মদ ইউনুসের ফরচুন সুজ ও এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য তুলে ধরা হল-
নাম | বিও | আইটেম | শেয়ার ক্রয় | বিক্রি |
সোনালি পেপার | ১২০১৯৫০০৭৩৫৮৩২২৭ | ফরচুন সুজ | ৩৪১৯২৫৪টি | ০০ |
সোনালি পেপার | ১৬০৪৫৩০০৭৩৫৮৩২২৭ | ফরচুন সুজ | ১৩৯৪৯৯৪টি | ০০ |
মোহাম্মদ ইউনুস | ১২০১৯৫০০০০০৮৩৮০৫ | এনআরবিসি ব্যাংক | ৪৯৮৮৫৯৪টি | ৪৯৮৮৫৯৪টি |
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সোনালি পেপারের মূল ব্যবসা হচ্ছে ডুপ্লেক্স পেপার বোর্ড, নিউজ প্রিন্ট ও হোয়াইট পেপারস তৈরী করা। যা বিক্রি থেকে মুনাফা অর্জন করা। যে কোম্পানিটি ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও পরবর্তীতে মন্দা ব্যবসার কারনে তালিকাচ্যুত করা হয়। তবে ২০২০ সালের ১৫ জুন পূণ:তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/০১ অক্টোবর, ২০২২/এসএস