ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোর গড় ৭.৭১% হারে ৩৭৫ কোটি টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা

শেয়ারবাজারে গত অর্থবছরের শেষার্ধে মন্দার মধ্যেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো থেকে বড় নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় গড়ে ৭.৭১% হারে মোট ৩৭৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

শ্রীলঙ্কার মন্দা ও ডলার সংকটের কারনে ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষার্ধে শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়। যাতে করে শেয়ারবাজার আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে ফান্ডগুলোর ওই সময় মুনাফায় ধস নামে। তারপরেও ফান্ডগুলো থেকে এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

শেয়ারবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ফান্ড রয়েছে। এরমধ্যে ভ্যানগার্ড এএমএল ফান্ড ওয়ান ও এলআর গ্লোবাল ফান্ড ওয়ান সেপ্টেম্বর ক্লোজিং হওয়ায় এখনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। এছাড়া এনএলআই ফান্ড বে-মেয়াদিতে রুপান্তর প্রক্রিয়ায় থাকায় লভ্যাংশ ঘোষণা বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩৩টি ফান্ড থেকে এ বছর ৩৭৫ কোটি ৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

এই লভ্যাংশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পরিচালিত ফান্ডগুলো। এই সম্পদ ব্যবস্থাপকটির পরিচালিত ১১ ফান্ডের (অতালিকাভুক্ত ১টিসহ) ট্রাস্টি ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় গড় ৭.৯১% হারে ২০৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা করেছে। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত ১০ ফান্ডের ইউনিটহোল্ডারদের জন্য ৭.২৫% হারে ২০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যা এই খাতের তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোর মোট লভ্যাংশের ৫৩.৯৬%।

ফান্ডগুলো থেকে এ বছর ভালো নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার পরেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়েনি। এই খাতটি ডিভিডেন্ড ইল্ডে (বাজার দরের তুলনায় লভ্যাংশ) অন্যসব খাতের থেকে এগিয়ে থাকলেও তাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। গত কয়েক দিনে অন্যসব খাতের শেয়ার দর যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় ফান্ডের দর খুব কমই বেড়েছে।

এর পেছনে অবশ্য এই খাতে ক্যাপিটাল গেইন কম হওয়াকে কারন বলে মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এই খাতের সব তথ্যই উন্মুক্ত থাকে। যা চাইলেই সবাই জানতে পারে। এছাড়া এই খাতে অন্যসব খাতের ন্যায় যেকোন সময় যেকোন ঘটনা ঘটা এবং পিএসআই আসার সুযোগ নেই। এটাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফান্ডে অনাগ্রহের কারন। কিন্তু অন্যসব খাতে পিএসআই নিয়ে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। কিন্তু ফান্ডের ব্যবসায় এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই বলা যায়।

এরমধ্য দিয়েই পৃথিবীর অন্যসব দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আকর্ষনীয় করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ)। এ খাতের উন্নয়নে এএএমসিএমএফ এর সভাপতি ড. হাসান ইমাম বলেন, অ্যাসোসিয়েশন থেকে এক বছরের মধ্যে অন্তত্বপক্ষে ২৫% মিউচ্যুয়াল ফান্ড শিল্পের আকার বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি অ্যাসেট ম্যানেজার পৃথকভাবে অবদান রাখবে। তিনি বলেন, গত ২ বছর মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পারফরমেন্স খুবই ভালো। বাংলাদেশ ফান্ড ম্যানেজাররা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে নেই।

ফান্ডগুলোর আগের বছরের থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় কিছুটা লভ্যাংশ কমেছে। এর আগের বছরের ৩৪টি ফান্ডের ৪২৬ কোটি টাকার লভ্যাংশ এ বছর ৩৭৫এ নেমে এসেছে। এর প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষার্ধে শেয়ারবাজারের বড় পতন। কারণ ফান্ডগুলোকে তাদের আকারের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাতে ফান্ডের আয় মূলত শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত।

মুনাফার তুলনায় অন্যান্য খাতে অর্ধেক লভ্যাংশ ঘোষনা করলেও ফান্ডগুলো মুনাফার থেকে বেশি ঘোষনা করেছে। দেখা গেছে, ৩৩টি ফান্ডের ট্রাস্টি ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে ৩৭৫ কোটি ৫ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

ফান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে গ্রামীণ ওয়ান : স্কীম ২ ও এসইএমএল গ্রোথ ফান্ড। এই ফান্ড দুটি থেকে ১৫% হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরের অবস্থানে থাকা এনসিসিবিএল ফান্ড ওয়ান থেকে ১২%  ও ইবিএল এনআরবি ফান্ড থেকে ১১% হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ বিতরন করা হবে ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ফান্ড থেকে। এ ফান্ড থেকে ৬% হারে মোট ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। এরপরের অবস্থানে থাকা গ্রামীণ ওয়ান : স্কীম ২ থেকে ১৫% হারে ২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ও ইবিএল এনআরবি ফান্ড থেকে ১১% হারে ২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

নিম্নে চলতি বছরে লভ্যাংশ ঘোষণা করা ফান্ডগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নামলভ্যাংশের হার (সব নগদ)লভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা)নিট মুনাফা (কোটি টাকা)
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক ফান্ড৭%২০.২৯৬.৯৫
প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট১০%২.৮০
এবি ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭%১৬.৭৪৭.৪১
এআইবিএল ফার্স্ট ফান্ড১০%১০১০
এশিয়ান টাইগার সন্ধানি ফান্ড৫%৩.০৯৩.০৯
সিএপিএম বিডিবিএল ওয়ান৮%৪.০১৩.৬৬
সিএপিএম আইবিবিএল৮%৫.৩৫৫.৬২
ডিবিএইচ ফার্স্ট ফান্ড৭%৮.৪০৮.৬৪
ইবিএল ফার্স্ট ফান্ড৬.৫০%৯.৪১২.৭৫
ইবিএল এনআরবি ফান্ড১১%২৪.৬৭২৭.৩৬
এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭%১০.০৩১০.১৭
ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ফান্ড৬%৪৬.৫৭৫৩.৫৫
গ্রামীণ ওয়ান : স্কীম ২১৫%২৭.৩৬২৪.৪৪
গ্রীন ডেল্টা ফান্ড৭%১০.৫০১০.৮০
আইসিবি এএমসিএল ৩য় এনআরবি৫%৫.৩০
আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রনি৯%৮.৮৩১২.৫৬
আইসিবি এএমসিএল ২য় ফান্ড৬%২.৯৫
আইসিবি এমপ্লয়ীজ এমএফ১: স্কীম১৫%৩.৭৫৪.৪৩
আইসিবি এএমসিএল সোনালি ব্যাংক৫%৫.১০
আইএফআইসি ফার্স্ট ফান্ড৭%১২.৭৫৬.৩৮
আইএফআইএল ইসলামিক ফান্ড-১৪%৩.৯০
এমবিএল ফার্স্ট ফান্ড১০%১০১০
এনসিসিবিএল ফান্ড ওয়ান১২%১৩.০২১৫.১৯
ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড৫%
পিএইচপি ফার্স্ট ফান্ড৭%১৯.৭৩১৫.৫০
পপুলার লাইফ ফার্স্ট ফান্ড৭%২০.৯৪১০.১৭
প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি ফান্ড৫%
রিল্যায়েন্স ১১০%৬.০৫৬.১১
এসইএমএল গ্রোথ ফান্ড১৫%১০.৯৪৬.৭৮
এসইএমএল শরীয়াহ ফান্ড৬%৫.২০
এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড৫%২.৫০২.৩০
ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭%২১.২৫২৩.৯৮
ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালি১০%১৫.৮৭২০.৬৪
মোট ৩৩টি ফান্ডগড় ৭.৭১%৩৭৫.০৫ কোটি টাকা৩৪১.৭৩ কোটি টাকা

এদিকে সবচেয়ে কম হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে আইএফআইএল ইসলামিক ফান্ড-১ থেকে। এই ফান্ড থেকে ৪% হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে টাকার পরিমাণে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ বিতরন করা হয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড থেকে। ডিসেম্বর ক্লোজিং এই ফান্ডটি থেকে ১০% হারে মোট ২ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক ফান্ড ও এমবিএল ফার্স্ট ফান্ড মার্চ ক্লোজিং। এছাড়া ভ্যানগার্ড রূপালি ব্যাংক ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড ও এনসিসিবিএল ফান্ড ওয়ান ডিসেম্বর ক্লোজিং। আর ভ্যানগার্ড এএমএল ফান্ড ওয়ান ও এলআর গ্লোবাল ফান্ড ওয়ান সেপ্টেম্বর ক্লোজিং। বাকি সব ফান্ড জুন ক্লোজিং।

বিজনেস আওয়ার/১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোর গড় ৭.৭১% হারে ৩৭৫ কোটি টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা

পোস্ট হয়েছে : ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

শেয়ারবাজারে গত অর্থবছরের শেষার্ধে মন্দার মধ্যেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো থেকে বড় নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় গড়ে ৭.৭১% হারে মোট ৩৭৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

শ্রীলঙ্কার মন্দা ও ডলার সংকটের কারনে ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষার্ধে শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়। যাতে করে শেয়ারবাজার আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে ফান্ডগুলোর ওই সময় মুনাফায় ধস নামে। তারপরেও ফান্ডগুলো থেকে এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

শেয়ারবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ফান্ড রয়েছে। এরমধ্যে ভ্যানগার্ড এএমএল ফান্ড ওয়ান ও এলআর গ্লোবাল ফান্ড ওয়ান সেপ্টেম্বর ক্লোজিং হওয়ায় এখনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। এছাড়া এনএলআই ফান্ড বে-মেয়াদিতে রুপান্তর প্রক্রিয়ায় থাকায় লভ্যাংশ ঘোষণা বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩৩টি ফান্ড থেকে এ বছর ৩৭৫ কোটি ৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

এই লভ্যাংশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পরিচালিত ফান্ডগুলো। এই সম্পদ ব্যবস্থাপকটির পরিচালিত ১১ ফান্ডের (অতালিকাভুক্ত ১টিসহ) ট্রাস্টি ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় গড় ৭.৯১% হারে ২০৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা করেছে। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত ১০ ফান্ডের ইউনিটহোল্ডারদের জন্য ৭.২৫% হারে ২০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যা এই খাতের তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোর মোট লভ্যাংশের ৫৩.৯৬%।

ফান্ডগুলো থেকে এ বছর ভালো নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার পরেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়েনি। এই খাতটি ডিভিডেন্ড ইল্ডে (বাজার দরের তুলনায় লভ্যাংশ) অন্যসব খাতের থেকে এগিয়ে থাকলেও তাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। গত কয়েক দিনে অন্যসব খাতের শেয়ার দর যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় ফান্ডের দর খুব কমই বেড়েছে।

এর পেছনে অবশ্য এই খাতে ক্যাপিটাল গেইন কম হওয়াকে কারন বলে মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এই খাতের সব তথ্যই উন্মুক্ত থাকে। যা চাইলেই সবাই জানতে পারে। এছাড়া এই খাতে অন্যসব খাতের ন্যায় যেকোন সময় যেকোন ঘটনা ঘটা এবং পিএসআই আসার সুযোগ নেই। এটাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফান্ডে অনাগ্রহের কারন। কিন্তু অন্যসব খাতে পিএসআই নিয়ে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। কিন্তু ফান্ডের ব্যবসায় এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই বলা যায়।

এরমধ্য দিয়েই পৃথিবীর অন্যসব দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আকর্ষনীয় করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ)। এ খাতের উন্নয়নে এএএমসিএমএফ এর সভাপতি ড. হাসান ইমাম বলেন, অ্যাসোসিয়েশন থেকে এক বছরের মধ্যে অন্তত্বপক্ষে ২৫% মিউচ্যুয়াল ফান্ড শিল্পের আকার বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি অ্যাসেট ম্যানেজার পৃথকভাবে অবদান রাখবে। তিনি বলেন, গত ২ বছর মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পারফরমেন্স খুবই ভালো। বাংলাদেশ ফান্ড ম্যানেজাররা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে নেই।

ফান্ডগুলোর আগের বছরের থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় কিছুটা লভ্যাংশ কমেছে। এর আগের বছরের ৩৪টি ফান্ডের ৪২৬ কোটি টাকার লভ্যাংশ এ বছর ৩৭৫এ নেমে এসেছে। এর প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষার্ধে শেয়ারবাজারের বড় পতন। কারণ ফান্ডগুলোকে তাদের আকারের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাতে ফান্ডের আয় মূলত শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত।

মুনাফার তুলনায় অন্যান্য খাতে অর্ধেক লভ্যাংশ ঘোষনা করলেও ফান্ডগুলো মুনাফার থেকে বেশি ঘোষনা করেছে। দেখা গেছে, ৩৩টি ফান্ডের ট্রাস্টি ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে ৩৭৫ কোটি ৫ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

ফান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে গ্রামীণ ওয়ান : স্কীম ২ ও এসইএমএল গ্রোথ ফান্ড। এই ফান্ড দুটি থেকে ১৫% হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরের অবস্থানে থাকা এনসিসিবিএল ফান্ড ওয়ান থেকে ১২%  ও ইবিএল এনআরবি ফান্ড থেকে ১১% হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ বিতরন করা হবে ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ফান্ড থেকে। এ ফান্ড থেকে ৬% হারে মোট ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। এরপরের অবস্থানে থাকা গ্রামীণ ওয়ান : স্কীম ২ থেকে ১৫% হারে ২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ও ইবিএল এনআরবি ফান্ড থেকে ১১% হারে ২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

নিম্নে চলতি বছরে লভ্যাংশ ঘোষণা করা ফান্ডগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নামলভ্যাংশের হার (সব নগদ)লভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা)নিট মুনাফা (কোটি টাকা)
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক ফান্ড৭%২০.২৯৬.৯৫
প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট১০%২.৮০
এবি ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭%১৬.৭৪৭.৪১
এআইবিএল ফার্স্ট ফান্ড১০%১০১০
এশিয়ান টাইগার সন্ধানি ফান্ড৫%৩.০৯৩.০৯
সিএপিএম বিডিবিএল ওয়ান৮%৪.০১৩.৬৬
সিএপিএম আইবিবিএল৮%৫.৩৫৫.৬২
ডিবিএইচ ফার্স্ট ফান্ড৭%৮.৪০৮.৬৪
ইবিএল ফার্স্ট ফান্ড৬.৫০%৯.৪১২.৭৫
ইবিএল এনআরবি ফান্ড১১%২৪.৬৭২৭.৩৬
এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭%১০.০৩১০.১৭
ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ফান্ড৬%৪৬.৫৭৫৩.৫৫
গ্রামীণ ওয়ান : স্কীম ২১৫%২৭.৩৬২৪.৪৪
গ্রীন ডেল্টা ফান্ড৭%১০.৫০১০.৮০
আইসিবি এএমসিএল ৩য় এনআরবি৫%৫.৩০
আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রনি৯%৮.৮৩১২.৫৬
আইসিবি এএমসিএল ২য় ফান্ড৬%২.৯৫
আইসিবি এমপ্লয়ীজ এমএফ১: স্কীম১৫%৩.৭৫৪.৪৩
আইসিবি এএমসিএল সোনালি ব্যাংক৫%৫.১০
আইএফআইসি ফার্স্ট ফান্ড৭%১২.৭৫৬.৩৮
আইএফআইএল ইসলামিক ফান্ড-১৪%৩.৯০
এমবিএল ফার্স্ট ফান্ড১০%১০১০
এনসিসিবিএল ফান্ড ওয়ান১২%১৩.০২১৫.১৯
ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড৫%
পিএইচপি ফার্স্ট ফান্ড৭%১৯.৭৩১৫.৫০
পপুলার লাইফ ফার্স্ট ফান্ড৭%২০.৯৪১০.১৭
প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি ফান্ড৫%
রিল্যায়েন্স ১১০%৬.০৫৬.১১
এসইএমএল গ্রোথ ফান্ড১৫%১০.৯৪৬.৭৮
এসইএমএল শরীয়াহ ফান্ড৬%৫.২০
এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড৫%২.৫০২.৩০
ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭%২১.২৫২৩.৯৮
ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালি১০%১৫.৮৭২০.৬৪
মোট ৩৩টি ফান্ডগড় ৭.৭১%৩৭৫.০৫ কোটি টাকা৩৪১.৭৩ কোটি টাকা

এদিকে সবচেয়ে কম হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে আইএফআইএল ইসলামিক ফান্ড-১ থেকে। এই ফান্ড থেকে ৪% হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে টাকার পরিমাণে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ বিতরন করা হয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড থেকে। ডিসেম্বর ক্লোজিং এই ফান্ডটি থেকে ১০% হারে মোট ২ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক ফান্ড ও এমবিএল ফার্স্ট ফান্ড মার্চ ক্লোজিং। এছাড়া ভ্যানগার্ড রূপালি ব্যাংক ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড ও এনসিসিবিএল ফান্ড ওয়ান ডিসেম্বর ক্লোজিং। আর ভ্যানগার্ড এএমএল ফান্ড ওয়ান ও এলআর গ্লোবাল ফান্ড ওয়ান সেপ্টেম্বর ক্লোজিং। বাকি সব ফান্ড জুন ক্লোজিং।

বিজনেস আওয়ার/১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: