বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: খাদ্য-পানীয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি বিশেষ নেয়ামত। এ নেয়ামতকে তিনি পৃথিবীতে সৃষ্টজীবের বেঁচে থাকার জন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। জীবনের অন্য সবকিছুর মত ইসলাম এখানেও আমাদের কিছু শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। আসুন জেনে নিই খাবার গ্রহণের সহজ ৬ টি শিষ্টাচার।
১। বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করা
আমর বিন আবু সালামা থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) তাকে বলেছেন : হে বৎস! বিসমিল্লাহ বল এবং ডান হাত দিয়ে খাও। আর খাবার পাত্রের যে অংশ তোমার সাথে লাগানো সে অংশ থেকে খাও।
২। কষ্ট করে যে রেঁধেছে তাকে খুশী করা
খাবারের প্রশংসা করা মুস্তাহাব, খাবার আয়োজন ও রাধুনীর জন্য কিছুটা ভালো লাগা কাজ করে এতে। সাথে সাথে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে। রাসূল (সা.) কখনো কখনো এমন করতেন––
জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় পরিবারের নিকট তরকারী চাইলেন। তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি সিরকা আনতে বললেন এবং তা দিয়েই খেতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী; সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী। (মুসলিম : ৩৮২৪)
৩। সোনারূপার পাত্রে পানাহার করা যাবে না
সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করতে নবী করীম (সা.) নিষেধ করেছেন। কারণ এতে অহংকার চলে আসে, যা আল্লাহ খুব অপছন্দ করেন। নবীজি (সা.) বলেছেন––
لَا تَشْرَبُوْا فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَا تَلْبَسُوا الْحَرِيْرَ وَالدِّيبَاجَ فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَكُمْ فِي الْآخِرَةِ، ‘
“তোমরা সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করো না এবং রেশম ও রেশমি পোশাক পরিধান করো না। দুনিয়াতে এসব কাফিরদের জন্য আর পরকালে তোমাদের জন্য।” [বুখারী, হাদীস নং: ৫৬৩৪]
তিনি আরও বলেন,
الَّذِي يَشْرَبُ فِي إِنَاءِ الْفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ
“যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পানাহার করে, সে ব্যক্তি নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন পূর্ণ করে।” [মুসলিম, হাদীস নং: ২০৬৫]
৪। পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া
কোনো মজলিশে বা বাসায় একত্রে খেতে বসলে পাত্রের একদম মাঝখান থেকে খাওয়া অনুচিত। বরং নিজের কাছে রাখা পাত্র বা এক পাশে থেকে খাবার খাওয়া উচিৎ। নবীজি (সা.) বলেছেন––
البَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ فَكُلُوا مِنْ حَافَتَيْهِ وَلاَ تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِه
খাদ্যের মধ্যস্থলে বরকত নাযিল হয়। সুতরাং তোমরা পার্শ্ব থেকে খাও, মধ্যস্থল থেকে খেও না। [আবু দাউদ, হাদীস নং: ৩৭৭২; তিরমিজি, হাদীস নং: ১৮০৫]
৫। খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ ও শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা
এটি এক চমৎকার সুন্নাহ। বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলে শয়তানের প্রভাব ও শরীক হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রাসূল (সা) বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ
“অবশ্যই শয়তান (মুসলিমের) খাবার খেতে সক্ষম হয়; যদি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলা হয়।” [মুসলিম, হাদীস নং: ১০১৭]
৬। পড়ে যাওয়া খাবার উঠিয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া
যদি কোনো খাবার পড়ে যায় তবে সে খাবার তুলে নিয়ে ময়লা ফেলে খেতে হবে। কারণ ঐ পতিত খাবারে বরকত থাকতে পারে। রাসূল (সা) বলেন,
“কারো খাবারের লোকমা হাত থেকে পড়ে গেলে তার ময়লা দূর করে সে যেন তা খেয়ে ফেলে। আর শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। তিনি আরো বলেন, তোমরা জানো না যে, তোমাদের খাবারের কোন বরকত আছে।” [মুসলিম]
বিজনেস আওয়ার/ ২১ সেপ্টেম্বর,২০২২/ এএইচএ