বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : কোরবানি ঈদের আগে সরকারের নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও গণপরিবহন সচল থাকায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা অর্থনীতির সব কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ফলে ক্রমেই গতি ফিরছে দেশের অর্থনীতিতে। একইসঙ্গে রপ্তানি আয় ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এসেছে রেকর্ড পরিমান রেমিট্যান্স, পুঁজিবাজারে ফিরেছে গতি। শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও কৃষিখাত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা মহামারিতেও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোয় নীতি সহায়তাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তারা বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারে সরকারের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ সহায়তা করেছে। তবে রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এখনও নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। সে কারণে অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে আরও সময় লাগবে। এজন্য করোনা মোকাবিলার ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোয় নীতি সহায়তাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের অর্থনীতি আগের পর্যায়ে সহজে যাবে না। এখন অর্থনীতি টেকসই করতে সরকারের কিছু নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। এখন প্রবৃদ্ধি নিয়ে না ভেবে উৎপাদন, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে আগে ভাবতে হবে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আমাদের অর্থনীতিকে সহায়তা করছে। আমাদের নতুন করে রপ্তানি আদেশও আসছে। সবদিক বিবেচনায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে ব্যবসায়ী ও সরকারকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা তারা যাতে পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যারা কাজ হারাচ্ছেন তাদের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে। আস্তে আস্তে উৎপাদন ব্যবস্থা পুরোপুরি সচল করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চাহিদা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাত দুটি শক্তিশালী হলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে সাহায্য করবে। রেমিট্যান্স দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করবে। ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি করবে। আর রপ্তানি আয় বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেই কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করে দেওয়ার মতো প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তের ফলেই দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ঈদুল আজহার আগে দেশজুড়ে দোকানের বিক্রি বেড়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় দেশের অর্থনীতির চাকা একটু হলেও সচল হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বেড়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদুল আজহার সময় ১২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ বছর আমাদের মাত্র ৮শ থেকে এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। করোনার মধ্যে এই ঈদে কাঙ্ক্ষিত বিক্রি না হলেও আমরা আবার চালু করতে পেরেছি এটাই আমাদের স্বস্তি দিয়েছে। প্রণোদনা না পেলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের করুণ অবস্থা হবে।
বিজনেস আওয়ার/১০ আগস্ট, ২০২০/এ