আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভস্থলের মাঝে এক তরুণীর খোলা চুল পেছনে বেঁধে সাহসিকতার সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তরুণীর নাম হাদিস নাজাফি (২০)। তাকে গুলি করে হত্যা করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
তরুণীর পেট, ঘাড়, হৃৎপিণ্ড ও হাতে গুলি করা হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই এ তথ্য জানিয়েছে।
হাদিসের জানাজার একটি ভিডিও অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে দেখা যায় সদ্য খনন করা কবরের পাশে তার ছবির পাশে লোকজন কাঁদছে। সেই ভিডিও টুইট করেছেন মাসিহ আলিনেজাদ নামের ইরানের একজন সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী।
নিউজউইক ও নিউজডটকমএইউ খবরে বলা হয়, হাদিসের ডাকনাম ‘পনিটেইল গার্ল’। অন্য অনেক ইরানি নারী যারা সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করার জন্য চুল খুলে পুলিশ অফিসারদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তাদেরই একজন হাদিস। কারাজ শহরে বিক্ষোভ চলাকালে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে বেশ কয়েকটি গুলি করে।
১৬ সেপ্টেম্বর ‘নীতি পুলিশ’–এর হেফাজতে মাসা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ বিক্ষোভ চলছে।
মেডিকেল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসার মাথায় অনেকগুলো আঘাত করা হয়েছে, যার কারণে তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। তবে পুলিশ দাবি করছে, তিনি হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়। এটি নারীদের কাছে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ইরানের নারীরা সাধারণত মাথায় ঢিলেঢালাভাবে স্কার্ফ পরে থাকেন।
ইউরোনিউজের খবরে বলা হয়, ১৯৮১ সালে আইনটি কার্যকর করা হলে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল, যা এখনো বিক্ষিপ্তভাবে অব্যাহত রয়েছে।
ইরানের কর্মকর্তারা গতকাল বলেন, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকার সড়কে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে।
তেহরানে বিক্ষোভকারীরা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির পতন চেয়ে স্লোগান দিয়েছেন। স্লোগানে স্লোগানে তারা বলেছেন, ‘স্বৈরশাসক নিপাত যাক।’
বিক্ষোভে উসকানির অভিযোগে ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই বিক্ষোভের সমর্থনে গত রোববার লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছে।
মাশা আমিনি হত্যাকাণ্ডের পর ইরানে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ-প্রতিবাদে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমন ও কিছু ক্ষেত্রে তাজা গোলাবারুদ ব্যবহারের কারণে।
বিজনেস আওয়ার/ ২৮ সেপ্টেম্বর,২০২২/এএইচএ