ঢাকা , শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুই ছেলেসহ রওশন আরাকে খুন করেন সৎমামা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২
  • 79

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের মৌপুর নতুনপাড়া গ্রামের একটা ফাঁকা বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে মা ও তার দুই ছেলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত আইয়ুব আলী ওরফে সাগরকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোবরার (০২ অক্টোবর) রাতে উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার সাগরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

গ্রেপ্তার হওয়া সাগর পেশায় একজন তাঁত শ্রমিক। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতি গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে। তার স্ত্রীসহ তিন ছেলে রয়েছে।

সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানিয়েছেন, অভিযুক্ত তাতঁ শ্রমিক আইয়ুব আলী ওরফে সাগর চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছিলেন। তাঁত কারখানা থেকে উর্পাজিত টাকায় ঋনের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। তাই টাকা ধার নিতে ২৬ সেপ্টেম্বর তার ভাগ্নি রওশন আরার বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু ভাগ্নির কাছ থেকে টাকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

অন্যদিকে ভাগ্নির বাসায় চারটি ট্রাংক দেখতে পেয়ে তিনি ধারণা করেন রওশন আরার কাছে টাকা থাকার পরেও তাকে দিচ্ছেন না। পরে ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি আবারও তার ভাগ্নির বাড়িতে যান। ভাগ্নি রওশন আরা টাকা দিতে আবারও অস্বীকৃতি জানালে সাগর সে রাতে ওই বাড়িতেই থেকে যান। রাতে একসাথে সবাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে গভীর রাতে ভাগ্নির আঁচল থেকে চাবি নিয়ে ট্রাংকগুলো খুলে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র খুঁজতে শুরু করে সাগর।

এ সময় রওশন আরার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আভিযুক্ত সাগর মসলা পিশার শীল দিয়ে রওশন আরার মাথা ও বুকে আঘাত করে হত্যা করেন এবং আবারও টাকা খোঁজা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে থাকা শিশু মাহিন (৩) এবং শিশু জিহাদ (১০) ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাদেরকেও একই ভাবে হত্যা করেন তিনি। তিন জনকে হত্যার পর ওই ট্রাংকগুলো থেকে অভিযুক্ত সাগর কোনো টাকা বা মূল্যবান কিছুই খুঁজে পায়নি।
পরে ভোর হলে সাগর ঘরের দরজায় শিকল দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যায়। তিনি ধারণা করেছিলেন কেউ কিছু টের পায়নি, তাই তিনি স্বাভাবিক ভাবে তার কাজ করছিলেন।

আরিফুর রহমান আরো জানান, পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর সাগরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রওশন আরার বাড়ি থেকে হত্যায় ব্যবহৃত শীল উদ্ধার করা হয়।

প্রসঙ্গত, রওশন আরা (২৯) উল্লাপাড়া উপজেলার কয়রা গ্রামের মৎস্যজীবি সুলতান আলীর তৃতীয় স্ত্রী। স্বামী ভরণপোষন না করায় তিন সন্তান নিয়ে সে বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে থাকতেন। বড় ছেলে রাসেল (১৬) ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে। আর রওশন আরা তাঁত মালিকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। রওশন আরা এবং তার দুই শিশু সন্তান মারা যাওয়ার পর তাদের বাড়িতে কেউ যায়নি। চার দিন পর ওই বাড়িতে গিয়ে তাদের এক আত্মীয় মেঝেতে নিহতদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে জানায়। এ ঘটনায় রওশন আরার ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জামাল বেলকুচি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বিজনেস আওয়ার/০৩ অক্টোবর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দুই ছেলেসহ রওশন আরাকে খুন করেন সৎমামা

পোস্ট হয়েছে : ০৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের মৌপুর নতুনপাড়া গ্রামের একটা ফাঁকা বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে মা ও তার দুই ছেলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত আইয়ুব আলী ওরফে সাগরকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোবরার (০২ অক্টোবর) রাতে উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার সাগরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

গ্রেপ্তার হওয়া সাগর পেশায় একজন তাঁত শ্রমিক। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতি গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে। তার স্ত্রীসহ তিন ছেলে রয়েছে।

সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানিয়েছেন, অভিযুক্ত তাতঁ শ্রমিক আইয়ুব আলী ওরফে সাগর চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছিলেন। তাঁত কারখানা থেকে উর্পাজিত টাকায় ঋনের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। তাই টাকা ধার নিতে ২৬ সেপ্টেম্বর তার ভাগ্নি রওশন আরার বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু ভাগ্নির কাছ থেকে টাকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

অন্যদিকে ভাগ্নির বাসায় চারটি ট্রাংক দেখতে পেয়ে তিনি ধারণা করেন রওশন আরার কাছে টাকা থাকার পরেও তাকে দিচ্ছেন না। পরে ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি আবারও তার ভাগ্নির বাড়িতে যান। ভাগ্নি রওশন আরা টাকা দিতে আবারও অস্বীকৃতি জানালে সাগর সে রাতে ওই বাড়িতেই থেকে যান। রাতে একসাথে সবাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে গভীর রাতে ভাগ্নির আঁচল থেকে চাবি নিয়ে ট্রাংকগুলো খুলে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র খুঁজতে শুরু করে সাগর।

এ সময় রওশন আরার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আভিযুক্ত সাগর মসলা পিশার শীল দিয়ে রওশন আরার মাথা ও বুকে আঘাত করে হত্যা করেন এবং আবারও টাকা খোঁজা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে থাকা শিশু মাহিন (৩) এবং শিশু জিহাদ (১০) ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাদেরকেও একই ভাবে হত্যা করেন তিনি। তিন জনকে হত্যার পর ওই ট্রাংকগুলো থেকে অভিযুক্ত সাগর কোনো টাকা বা মূল্যবান কিছুই খুঁজে পায়নি।
পরে ভোর হলে সাগর ঘরের দরজায় শিকল দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যায়। তিনি ধারণা করেছিলেন কেউ কিছু টের পায়নি, তাই তিনি স্বাভাবিক ভাবে তার কাজ করছিলেন।

আরিফুর রহমান আরো জানান, পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর সাগরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রওশন আরার বাড়ি থেকে হত্যায় ব্যবহৃত শীল উদ্ধার করা হয়।

প্রসঙ্গত, রওশন আরা (২৯) উল্লাপাড়া উপজেলার কয়রা গ্রামের মৎস্যজীবি সুলতান আলীর তৃতীয় স্ত্রী। স্বামী ভরণপোষন না করায় তিন সন্তান নিয়ে সে বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে থাকতেন। বড় ছেলে রাসেল (১৬) ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে। আর রওশন আরা তাঁত মালিকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। রওশন আরা এবং তার দুই শিশু সন্তান মারা যাওয়ার পর তাদের বাড়িতে কেউ যায়নি। চার দিন পর ওই বাড়িতে গিয়ে তাদের এক আত্মীয় মেঝেতে নিহতদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে জানায়। এ ঘটনায় রওশন আরার ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জামাল বেলকুচি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বিজনেস আওয়ার/০৩ অক্টোবর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: