বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বৃদ্ধাশ্রমে মারা গেছেন এস এম মনসুর আলী (৭৫) নামে এক প্রকৌশলী। তবে তার জানাজায় অংশ নেয়নি সন্তানেরা। মৃত্যুর খবর জেনেও বৃদ্ধাশ্রমের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি ছেলে-মেয়েরা এমনকি শেষ বিদায় বেলাও আসেনি তার ছেলে-মেয়ে কিংবা কোন স্বজন।
বৃদ্ধাশ্রমে মারা যাওয়া প্রকৌশলী এসএম মনছুরের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ চাঁদশীতে। তার বাবার নাম মৃত আবুল কাসেম।
সোমবার দুপুরে মরহুমের জানাজা শেষে স্থানীয়রা পারিবারিক কবরস্তানে তাকে দাফন করেছেন। এর আগে রবিবার বিকেলে অসুস্থ্য হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে মারা যান মনছুর। পরবর্তীতে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের কাজী আশিকুর রহমান রতন, কাজী বাবুলসহ একাধিক গ্রামবাসী বলেন, বৃদ্ধ এসএম মনছুর টিএন্ডটি বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র এ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী) ছিলেন।
গত ছয়মাস পূর্বে রংপুরের হারাগাছ থানার বকসা বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয় বৃদ্ধ মনছুরের। তারা আরও জানান, ওই বৃদ্ধের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এরমধ্যে বড় ছেলে মহিন সরদার ঢাকায় চাকরী করেন, ছোট ছেলে রাজু সরদার কাতার প্রবাসী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৃত মনছুরের এক ঘনিষ্ট আত্মীয় বলেন, ঢাকায় প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য এসএম মনছুরের দুই ছেলে ও বোন সেলিনা বেগম গত ১০ বছর পূর্বে তাকে (মনছুর) মৃত দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। এরপর সে (মনছুর) আর ওই বাসায় ফিরতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে মৃত মনছুরের ছেলে মহিন সরদারের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রংপুরের হারাগাছ থানার বকসা বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য সচিব নাহিদ নুসরাত বলেন, চলতি বছরের ২১ জুন রাত সাড়ে এগারোটার দিকে অসুস্থ্য অবস্থায় বৃদ্ধ মনছুর আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে আসেন। এরপর থেকে তিনি আমাদের বৃদ্ধাশ্রমেই ছিলেন। রাজধানী ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামের কাছে তার বহুতল ভবন আছে। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে এসেছিলেন।
চাঁদশী ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকৌশলী এস এম মনসুর আলীর সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় তার নিজের জমি-বাড়ি রয়েছে। কিন্তু সন্তানরা সম্পত্তির লোভে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রমে ছিলেন। সেখানেই মারা যান তিনি। আমরা বিষয়টি জানতাম না। তার লাশ যখন গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, তখন কিছুটা অবাক হই। কারণ এই মানুষটির সঙ্গে গ্রামের বাড়ির লোকেদেরও কোনো যোগাযোগ ছিল না। যখন স্বজনদের খুঁজতে যাই, তখন জানতে পারি তার দুই ছেলে-মেয়ের কেউ জানাজায়ও আসেনি। বিষয়টি পরিতাপের।
বিজনেস আওয়ার/০২ নভেম্বর, ২০২২/এএইচএ