বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: গোপনে সরকারি বই বিক্রি করে হারানোর জিডি করার অভিযোগ উঠিছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
রোববার (৬ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল হোসেন। এ ঘটনায় ওই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউন থেকে ৬ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে মির্জা দিলরুবা লাকী নামের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে বইগুলো হারিয়েছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।
তথ্যমতে, মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউন ছিল। সেখানে ১৩ সাল থেকে ২১ সাল পর্যন্ত উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭০টি বিদ্যালয় ও মাদরাসা এবং কেজি স্কুলের মাধ্যমিক পর্যায়ের পুরোনো বই ছিল। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী বইগুলো রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়ে বস্তায় ভরে স্থানীয় ভাঙাড়ি দোকানে বিক্রি করে দেন।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে বইগুলো হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডি করেন প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ১ নভেম্বর ওই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেন।
বই বিক্রির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের স্বার্থে ওই কক্ষ পরিষ্কারের জন্য বিদ্যালয়ের কাগজপত্রের সঙ্গে মাধ্যমিক অফিসের কিছু নষ্ট বই বিক্রি করা হয়েছে।’
কিন্তু থানায় হারানো জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেন, ‘কী পরিমাণ বই ছিল এবং বইগুলো কী হয়েছে তা আমি জানি না।’
কক্ষের চাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের আব্দুস সালাম নামে এক সহকারী শিক্ষকের কাছে কক্ষের চাবি ছিল।’
তবে সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার কাছে কোনো চাবি ছিল না। চাবি ছিল অফিসে। এছাড়া বইয়ের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
এদিকে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম এবং সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে বলেছিলেন- ওই ঘরে পরীক্ষা হবে তোমরা পুরোনো বইগুলো বস্তায় প্যাকেট করে ঘরটি পরিষ্কার করে দাও। তাই সবাই মিলে বইগুলো বস্তায় প্যাকেট করে দিয়েছি।’
পিয়ন আব্দুস সামাদ বলেন, ‘সেসময় আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যস্ত ছিলাম। বই বিক্রির চার-পাঁচ দিন পর স্কুলে এলে সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম স্যার বলেন, তুমিতো ছিলে না। তোমাকে বলাও হয়নি। বই রাখার ঘর পরিষ্কার করতে হবে। তোমরা শুধু বইগুলো প্যাকেট করে ভ্যানে তুলে দেবে। গেট পার হতে পারবা না। কে নিয়ে গেলো কোথায় নিয়ে গেলো জানার চেষ্টা করবা না। তোমাদের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। এভাবে প্রতিদিন ১৮-২০ বস্তা বই প্যাকেট করে দেওয়া হয়েছে।’
সামাদ আরও বলেন, ‘আমি পাঁচ দিন ওই কাজ করেছি। আগের চার-পাঁচ দিন অন্যরা করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, প্রশাসন, মাধ্যমিক স্যারসহ সবাই জানে। সবার সম্মতি নিয়ে বইগুলো বিক্রি করা হচ্ছে বলেও রহিম স্যার জানিয়েছেন।’
তবে এ বিষয়ে অস্বীকার করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘বই বিক্রির সম্পর্কে কিছুই জানি না। কেউ যদি আমার নাম বলে থাকে তাহলে মিথ্যা বলেছেন।’
স্থানীয় ভাঙাড়ি দোকানদার মুঞ্জিল হক বলেন, ‘আমি পুরাতন বই কেনাবেচা করি। আব্দুস সালাম বইগুলো আমার কাছে বিক্রি করেছেন।’
আরেক ভাঙাড়ি দোকানদার রানা মিয়া বলেন, ‘আমি কোনো বই কিনিনি। তবে আমার কাছে ওজন দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল। ৮-৯ পিকআপ বই ওজন করে দিয়েছি।’
বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বই আমার স্কুলে রাখা হয়েছে তা জানতাম না। কী পরিমাণ বই ছিল আর বইগুলো কী হয়েছে তাও জানি না। যদি বইগুলো চুরি হয়ে থাকে আর যদি তা প্রমাণ হয় তাহলে অপরাধীর শাস্তি হওয়া উচিত।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল হোসেন বলেন, বইগুলো উধাও হওয়ার ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে ১ নভেম্বর প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জবাবদিহি করা হবে। বইগুলো বিক্রি হয়ে থাকলে তা অপরাধ। আর অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে। সে যেই হোক।’
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাই হারানোর জিডি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজনেস আওয়ার/০৬ নভেম্বর, ২০২২/এএইচএ