স্পোর্টস ডেস্ক: পেনাল্টি শ্যুটে ব্রাজিলের হয়ে শেষ শটটি নিতে গিয়েছিলেন মার্কউইনুস। যেখানে গোলকিপার বোকা বানিয়ে গোল আদায় করাটাই তীক্ষ্ণ বুদ্ধির লক্ষণ। কিপারকে বোকা বানালেনও। ক্রোয়েশিয়ান দুর্গ রক্ষক লেভাকোভিচ ঝাপ দিলেন অন্যদিকে, আর তার শট গেল আরেকদিকে। কিন্তু জালে নয়, বারে লেগে তা ফিরে আসে। চোখে-মুখে হাত দিয়ে বসে পড়েন মার্কুউইনুস। সঙ্গে কান্নার রোল পড়ে ব্রাজিলিয়ানদের মাঝেও। টাইব্রেকারে যে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৪-২ ব্যবধানে হেরে হৃদয় ভাঙা বিদায় হয়েছে সেলেসাওদের।
এই পরাজয়ে মিশন হেক্সার কাতারেও অধরাই থাকল। বিশ্বকাপের শিরোপা খরা ঘুচল না। দুই দশকের অপেক্ষা বেড়ে দুই যুগে গিয়ে ঠেকল ব্রাজিলের। ক্রোয়েশিয়ার কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে হৃদয় ভাঙলো ব্রাজিলের।
বলের দখল প্রায় সমানে সমান। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণেও পিছিয়ে নেই কেউ কারও চেয়ে। তবে তাতে গোল নামক সোনার হরিণের দেখা পায়নি কোনো দল। ম্যাচের শুরু থেকে ব্রাজিলকে চাপের রাখা চেষ্টা করেছে ক্রোয়েশিয়া। নেইমারদের খেলার জন্য একটুও খোলা জায়গা দিতে দেখা যায়নি তাদের।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রতি আক্রমণে গোলের চেষ্টা করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ডান দিক থেকে ক্রস করেছিলেন মদ্রিচ। কিন্তু ক্রসে পা ঠেকাতে পারলেন না পেরিসিচ। সাত মিনিট পর অতি রক্ষ্মণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে শুরু করে ক্রোয়েশিয়া।
ব্রাজিলের কোনো ফুটবলার বল ধরলেই ঘিরে ফেলছেন তিন-চার জন। তবে ব্রাজিলের ফুটবলাররা বল তাড়া করেই চলেছিলেন। তবে ২২ মিনিটের সময় পর পর দুটি আক্রমণ করেছিল ব্রাজিল। প্রথমে ভিনিসিয়াস তার পর নেইমার। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ তা ঠেকিয়ে দেয়।
খেলার সময় যখন ৩২ মিনিট, নেইমারকে তখন আটকানোর মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা যায় ক্রোয়েশিয়ানদের। তবে ফাউল করতে দেখা যায় বার বার। বাঁ দিকে ভিনিসিয়াসও গোলের দেখা পাননি। ৪২ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে বক্সের সামান্য বাইরে ফ্রিকিক করা হয়। নেইমারের পাস বিপক্ষ ফুটবলারের গায়ে লেগে হালকা ঘুরে গেলেও জমা পড়ল গোলকিপারের হাতে। ফলে সেই সুযোগটাও ভেস্তে যায়।
এভাবে একাধিক সুযোগ পাওয়া আর হারানোতেই গোলশূন্য থেকে শেষ হয় প্রথমার্ধ। বিরতির পর খেলা শুরু হলেও কেই কাউকে ছাড় দিচ্ছিল না। বিরতির পর খেলার ৪৭ মিনিটেই গোলের সামনে থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ভাগ। ক্রোয়েশিয়ার এক ফুটবলারের হাতে বল লাগলেও রেফারি ভার-এর সঙ্গে পরামর্শ করে পেনাল্টি না দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলেন। তাতে গোলের একটি সম্ভানা জেগেও শেষ হয়ে যায়। এভাবে পুরো ম্যাচে একাধিক সুযোগ পেয়েও নষ্ট করেছে উভয় দল। তাতে খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে।
নির্ধারিত সময়ে দুই দলই গোলশূন্য থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে গোল খোঁজার মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে ব্রাজিল। তবে বার বার ক্রোয়েশিয়ার বক্সে গিয়ে প্রতিহত হতে হয় তাদের আক্রমণ। একই ঘটনা ব্রাজিলের বেলাতেও।
তবে ১০৫ মিনিটের সময় আসে সেই সুবর্ণ সুযোগ। অসাধারণ গোল করলেন নেইমার। অবশেষে গোল পেল ব্রাজিল। মাঝমাঠ থেকে খেলা শুরু করেছিলেন নেইমারই। প্রথমে পাস খেলেন পেদ্রোর সঙ্গে। সেখান থেকে নেইমার বল পেয়ে পাকেতাকে। পাকেতার থেকে পাস পেয়ে গোলকিপার লিভাকোভিচকে এক টোকায় কাটিয়ে বল জালে জড়ালেন নেইমার।
সেই গোলের উচ্ছাসটাই এতই ছিল যে, ব্রাজিল ভেবেছিল তারা সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছে। তাতেই ভুলটা করে বসে সেলেসাওরা। মুহূর্তের অসাবধানতায় গোল খেয়ে বসে তারা। ১১৭ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে আসে ক্রোয়েশিয়া। সেখান থেকে পেরিসিচের পাসে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন ব্রুনো পেটকোভিচ। আর সেই গোল হজমেই খেলায় ফিরে আসে সমতায়। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে একের পর এক মিস আর ক্রোয়েশিয়ানদের দাপট দেখেছে বিশ্ব। ব্রাজিলের গোলকিপার অ্যালিসন কোনো গোলই প্রতিহত করতে পারেননি। চারটিই হজম করেছেন। ব্রাজিলের মার্কুইনুসের নেওয়া শেষ শটটি বারে লেগে ফিরে এলে বিদায় নিশ্চিত হয় তিতের শিষ্যদের।
বিজনেস আওয়ার/১০ ডিসেম্বর, ২০২২/এএইচএ