ঢাকা , সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসএমই কোম্পানিগুলো শেয়ার দরে তলানিতে থাকলেও লভ্যাংশে পিছিয়ে নেই

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২
  • 59

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে মূল মার্কেটের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমানতালে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের (এসএমই) কোম্পানি। তবে এসব কোম্পানির শেয়ার দর তূলনামূলক তলানিতে রয়েছে। যাতে মূল মার্কেটের থেকে প্রকৃত এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলো থেকে প্রকৃত লভ্যাংশ প্রাপ্তি হবে বেশি।

ভালো লভ্যাংশের পরেও এসএমইর শেয়ার দর তলানির পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ঘনঘন নিয়ম-নীতি পরিবর্তন কারন হিসেবে রয়েছে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এসএমই মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন বাড়াতে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হওয়ার জন্য শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ লাখ টাকায় বিনিয়োগ নামিয়ে আনে বিএসইসি। অর্থাৎ ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলেই কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হিসেবে বিবেচ্য হবে। এতে করে এসএমই মার্কেটে ইতিবাচক প্রভাব পড়তেই বিএসইসি তার অবস্থান থেকে আবার সড়ে আসে। যার ধারাবাহিকতায় গত ২২ সেপ্টেম্বর কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরের বিনিয়োগ সীমা ২০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

তবে মূল মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন সীমা নেই। যে কারনে মূল মার্কেট ও এসএমইর মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করতে উচ্চ-আদালত বিনিয়োগ সীমার শর্ত স্থগিত করেছে। গত ১৬ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ স্থগিতাদেশ দেন। আগামী তিন মাসের জন্য সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগে বিএসইসির বেঁধে শর্ত স্থগিত থাকবে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ-আদালতের এই নির্দেশনার পরেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীরা এসএমইর শেয়ার কিনতে পারছেন না।

দেখা গেছে, এসএমই মার্কেটের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩টির ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে কোম্পানিগুলো থেকে গড় ৮.৮৮ শতাংশ হারে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ও ৩৯ লাখ টাকার ৬৯ হাজার টাকার ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০টি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।

নিম্নে এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামলভ্যাংশের হারলভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকায়)বোনাসের পরিমাণ
কৃষিবিদ সীড১৫% নগদ৪.৫০ 
স্টার অ্যাডহেসিভ১২.৫০% নগদ২.৫০ 
ওরিজা অ্যাগ্রো১১% নগদ৩.৭৬ 
বিডি পেইন্টস১০% নগদ৪.২৪ 
মাস্টার ফিড১০% নগদ৪.১০ 
মামুন অ্যাগ্রো১০% নগদ৩.৫০ 
আছিয়া সী ফুডস১০% নগদ২.৫৯ 
হিমাদ্রি১০% নগদ০.০৮ 
ইউসুফ ফ্লাওয়ার১০% নগদ০.০৬ 
মোস্তফা মেটাল৭% নগদ২.৩৫ 
নিয়ালকো৫% নগদ১.৪৩ 
বেঙ্গল বিস্কুট৫% বোনাস ৩৯৬৯০০
এপেক্স ওয়েভিং০০ 
মোট ২৯.১১ কোটি টাকা৩৯৬৯০০টি

এসএমইর কোম্পানিগুলোর এমন লভ্যাংশের পরেও শেয়ার দর তলানিতে। যার পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে বিনিয়োগ সীমা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘনঘন নিয়ম পরিবর্তন।

নিম্নে লভ্যাংশ সভা করা এসএমইর কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামশেয়ার দর (টাকায়)
মাস্টার ফিড১৩.৯০
ওরিজা অ্যাগ্রো১৪.১০
মোস্তফা মেটাল১৫.২০
মামুন অ্যাগ্রো২০.৯০
এপেক্স ওয়েভিং২২.৭০
আছিয়া সী ফুডস২৩.১০
কৃষিবিদ সীড২৫
হিমাদ্রি৩৫.৩০
বিডি পেইন্টস৩৬.৩০
নিয়ালকো৫৪.৪০
স্টার অ্যাডহেসিভ৬২.৫০
বেঙ্গল বিস্কুট৯০.৩০
ইউসুফ ফ্লাওয়ার২১৬৭.৪০

অথচ ভালো কিছুর জন্য বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এর প্রেক্ষিতে স্বল্প মূলধনের কোম্পনির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ) রুলস-২০১৬ প্রনয়ন করে। তবে ২০১৮ সালে এর কিছু বিধির সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্লাটফর্ম উদ্বোধন করে। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসএমই প্লাটফর্ম উদ্বোধনের আড়াই বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেয়ারবাজারে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু হয়।

প্রাথমিকভাবে ৬টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হয় ডিএসইর এসএমই প্লাটফর্মের লেনদেন। এই ছয় কোম্পানি হল- বেঙ্গল বিস্কিুট, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং মিলস, মাস্টার ফিড এগ্রো, অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হিমাদ্রী লিমিটেড। এরপরে আরও ৯টি কোম্পানির এসএমইতে লেনদেন শুরু হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১১ ডিসেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এসএমই কোম্পানিগুলো শেয়ার দরে তলানিতে থাকলেও লভ্যাংশে পিছিয়ে নেই

পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে মূল মার্কেটের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমানতালে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের (এসএমই) কোম্পানি। তবে এসব কোম্পানির শেয়ার দর তূলনামূলক তলানিতে রয়েছে। যাতে মূল মার্কেটের থেকে প্রকৃত এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলো থেকে প্রকৃত লভ্যাংশ প্রাপ্তি হবে বেশি।

ভালো লভ্যাংশের পরেও এসএমইর শেয়ার দর তলানির পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ঘনঘন নিয়ম-নীতি পরিবর্তন কারন হিসেবে রয়েছে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এসএমই মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন বাড়াতে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হওয়ার জন্য শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ লাখ টাকায় বিনিয়োগ নামিয়ে আনে বিএসইসি। অর্থাৎ ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলেই কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হিসেবে বিবেচ্য হবে। এতে করে এসএমই মার্কেটে ইতিবাচক প্রভাব পড়তেই বিএসইসি তার অবস্থান থেকে আবার সড়ে আসে। যার ধারাবাহিকতায় গত ২২ সেপ্টেম্বর কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরের বিনিয়োগ সীমা ২০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

তবে মূল মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন সীমা নেই। যে কারনে মূল মার্কেট ও এসএমইর মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করতে উচ্চ-আদালত বিনিয়োগ সীমার শর্ত স্থগিত করেছে। গত ১৬ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ স্থগিতাদেশ দেন। আগামী তিন মাসের জন্য সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগে বিএসইসির বেঁধে শর্ত স্থগিত থাকবে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ-আদালতের এই নির্দেশনার পরেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীরা এসএমইর শেয়ার কিনতে পারছেন না।

দেখা গেছে, এসএমই মার্কেটের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩টির ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে কোম্পানিগুলো থেকে গড় ৮.৮৮ শতাংশ হারে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ও ৩৯ লাখ টাকার ৬৯ হাজার টাকার ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০টি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।

নিম্নে এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামলভ্যাংশের হারলভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকায়)বোনাসের পরিমাণ
কৃষিবিদ সীড১৫% নগদ৪.৫০ 
স্টার অ্যাডহেসিভ১২.৫০% নগদ২.৫০ 
ওরিজা অ্যাগ্রো১১% নগদ৩.৭৬ 
বিডি পেইন্টস১০% নগদ৪.২৪ 
মাস্টার ফিড১০% নগদ৪.১০ 
মামুন অ্যাগ্রো১০% নগদ৩.৫০ 
আছিয়া সী ফুডস১০% নগদ২.৫৯ 
হিমাদ্রি১০% নগদ০.০৮ 
ইউসুফ ফ্লাওয়ার১০% নগদ০.০৬ 
মোস্তফা মেটাল৭% নগদ২.৩৫ 
নিয়ালকো৫% নগদ১.৪৩ 
বেঙ্গল বিস্কুট৫% বোনাস ৩৯৬৯০০
এপেক্স ওয়েভিং০০ 
মোট ২৯.১১ কোটি টাকা৩৯৬৯০০টি

এসএমইর কোম্পানিগুলোর এমন লভ্যাংশের পরেও শেয়ার দর তলানিতে। যার পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে বিনিয়োগ সীমা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘনঘন নিয়ম পরিবর্তন।

নিম্নে লভ্যাংশ সভা করা এসএমইর কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামশেয়ার দর (টাকায়)
মাস্টার ফিড১৩.৯০
ওরিজা অ্যাগ্রো১৪.১০
মোস্তফা মেটাল১৫.২০
মামুন অ্যাগ্রো২০.৯০
এপেক্স ওয়েভিং২২.৭০
আছিয়া সী ফুডস২৩.১০
কৃষিবিদ সীড২৫
হিমাদ্রি৩৫.৩০
বিডি পেইন্টস৩৬.৩০
নিয়ালকো৫৪.৪০
স্টার অ্যাডহেসিভ৬২.৫০
বেঙ্গল বিস্কুট৯০.৩০
ইউসুফ ফ্লাওয়ার২১৬৭.৪০

অথচ ভালো কিছুর জন্য বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এর প্রেক্ষিতে স্বল্প মূলধনের কোম্পনির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ) রুলস-২০১৬ প্রনয়ন করে। তবে ২০১৮ সালে এর কিছু বিধির সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্লাটফর্ম উদ্বোধন করে। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসএমই প্লাটফর্ম উদ্বোধনের আড়াই বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেয়ারবাজারে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু হয়।

প্রাথমিকভাবে ৬টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হয় ডিএসইর এসএমই প্লাটফর্মের লেনদেন। এই ছয় কোম্পানি হল- বেঙ্গল বিস্কিুট, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং মিলস, মাস্টার ফিড এগ্রো, অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হিমাদ্রী লিমিটেড। এরপরে আরও ৯টি কোম্পানির এসএমইতে লেনদেন শুরু হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১১ ডিসেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: