আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধের পর আফগান নারীদের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারও কার্যত কেড়ে নিল তালেবান। আফগানিস্তানের বাল্খ প্রদেশের ‘ডাইরেক্টরেট অব পাবলিক অ্যায়াফেয়ার্স অ্যান্ড হিয়ারিং অব তালেবান অ্যাফেয়ার্স’ ঘোষণা করেছে ‘পুরষ চিকিৎসকরা আর মহিলাদের চিকিৎসা করতে পারবেন না।’
এই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ যাননি মহিলা চিকিৎসকরাও। এই অবস্থায় মহিলাদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ছিলেন পুরষ চিকিৎসকরাই।
আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে কেয়ার না করে এবার মহিলাদের জন্য জারি করা হয়েছে নতুন এনিয়ম। গত ডিসেম্বরেই মহিলাদের ঘরের বাইরে কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালিবান প্রশাসন।
এবার চিকিৎসার সেই পথও বন্ধ হল। আফগান মহিলাদের প্রশ্ন, ‘এবার আমরা যাব কোথায়?’ তালিবান আমলে মহিলা চিকিৎসকদের দুরবস্থা ধরা পড়েছে ডাঃ সোনা নামে এক চিকিৎসকের কথায়।
গত ডিসেম্বরে অনেক খুঁজে কাবুলের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে চাকরি জোগাড় করেন তিনি। তবে, এখনো কাজে যোগ দিতে পারেননি।
তবে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আফগান নারীদের চিকিৎসা করাবেন কোথায়? কোথা থেকে আসবে এত নারী চিকিৎসক? নারীদের তো কাজ করতেই বাধা দেয় তালেবানরা। আবার উচ্চশিক্ষাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কাজেই অদূরভবিষ্যতে মহিলা চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়বে, তারও সম্ভাবনা নেই। তাহলে কি হবে নারী রোগীদের?
আফগান সংবাদপত্র হাশত-ই-সুবাহ জানিয়েছে, তালেবান শাসকরা আরও ঘোষণা করেছে যে, নারী এবং পুরুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের আলাদা আলাদা ঘর থাকবে। মহিলা রোগীরা তাদের সমস্যা নিয়ে শুধুমাত্র নারীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের ঘরেই যেতে পারবেন। নারী রোগীদের সঙ্গে কোনো পুরুষ সেই ঘরে প্রবেশ করতে পারবেন না। মহিলা স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে পুরুষদের প্রবেশই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই ফতোয়া জারির পরই আফগান মহিলাদের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুত, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনর্দখল করার আগে থেকেই আফগানিস্তানে চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীর ঘাটতি ছিল। প্রতি ১০ হাজার মানুষ পিছু চিকিৎসাকর্মী ছিলেন মাত্র ৪.৬ জন। তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর প্রাথমিকভাবে সব ক্ষেত্রেই মহিলাদের কাজ করতে বাধা দিয়েছিল। তবে, মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল তারা। তালেবানরা তাদের কাজের অনুমতি দিলেও, তত দিনে তালেবানি কোপের আশঙ্কায় বহু মহিলা চিকিৎসক এবং মহিলা স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মী আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছেন। কাজেই বর্তমানে মহিলা চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীর সংখ্যা যে অপ্রতুল, তা বলাই বাহুল্য।
বিজনেস আওয়ার/১২ জানুয়ারি, ২০২৩/এএইচএ