বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: রমজান মাসকে সামনে রেখে ভ্রাম্যমাণ আদালতের হয়রানি বন্ধ করাসহ ৮ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান।
লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান বলেন, বর্তমানে রেস্তোরাঁ খাতে এসি ও নন-এসি রেস্তোরাঁয় ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হয়। আগামী বাজেটে নিম্ন ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ (বাংলা খাবার) ও স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৩ শতাংশ করতে হবে। ভ্যাটের সাথে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কর দেওয়া যেতে পারে।
রেস্তোরাঁয় শতভাগ গ্যাস সরবরাহ করা হয় না, দাবি করে ইমরান বলেন, ৪০ শতাংশ গ্যাস দিয়ে ১০০ শতাংশ গ্যাসের বিল নেওয়া হচ্ছে। রেস্তোরাঁয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইমরান হাসান বলেন, দেশের বড় পাঁচটি কোম্পানি বেকারি ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। এখন তারা বিরিয়ানির ব্যবসাও নিয়ে যেতে যাচ্ছে। তারা রেস্তোরাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করে ব্যবসাটি নিজেদের কবজায় নিতে নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে। দেশে ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁ আছে। গত ১০ বছরে রেস্তোরাঁ ব্যবসা ৮ গুণ বেড়েছে। আগামী ১০ বছর পর এটি ৩০ গুণ বাড়বে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আট দাবি হলো—
১. সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধি রাখতে হবে। হাইকোর্টের অনেক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অযাচিতভাবে মোবাইল কোর্ট চলছে। আমরা মোবাইল কোর্টের বিরুদ্ধে না, মোবাইল কোর্ট চলুক যৌক্তিকভাবে। কালাকানুন ও বিধি বাতিল করতে হবে।
২. করোনা মহামারিতে প্রায় ৩০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। যারা টিকে আছে তারাও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা জরুরি।
৩. সাম্প্রতিক সময়ে চড়া মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এর মধ্যে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে রেস্তোরাঁ খাতে। ব্যবসায় টিকে থাকতে খাবারের দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই আমাদের সামনে। অন্যদিকে, খাবারের দাম বৃদ্ধি করলে ভোক্তারা রেস্তোরাঁয় খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে রাজার নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে রেস্তোরাঁ খতিটি বড় সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
৪. সাম্প্রতিক সময়ে রেস্তোরাঁ খাতে কিছু নেতিবাচক প্রচারণায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেই সংকট থেকে উত্তরণে মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। ভোক্তা সমাজকে অনুরোধ করব, রেস্তোরাঁ সেক্টরের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে মন্তব্য করার জন্য। রেস্তোরাঁ বিষয়ে প্রশাসন এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে।
৫.বর্তমানে রেস্তোরাঁ সেক্টরে ভ্যাট ও ট্যাক্স এসি ও নন-এসি রেস্তোরাঁয় ৫ শতাংশ। কিন্তু, আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কর্মজীবী, শ্রমজীবী, দিনমজুরদের জন্য নিম্ন ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁর (বাংলা খাবার) ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে সর্বোচ্চ ৩% এবং ট্যাক্সের হার হবে সর্বোচ্চ ০.৫%।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলা খাবারের ক্ষেত্রে ৮২/সি ধারার ৪ নম্বর কলামে বর্ণিত নির্দেশনা পরিবর্তনপূর্বক ফুল অ্যান্ড ফাইনাল এসেসমেন্টের মাধ্যমে ট্যাক্স নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রতি মাসে ভ্যাটের সঙ্গে ০.৫% হিসাবে ট্যাক্স প্রদান করতে চাই। এতে বছর শেষে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার সময়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।
৬. তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে যে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পূর্বের তুলনায় গ্যাস পাচ্ছি ৪০ শতাংশ মাত্র। কিন্তু, বিল আসছে দ্বিগুণ। এদিকে, এলপিজি গ্যাসের দাম চড়া। তাই, লাকড়ি দিয়ে রান্না করায় কিচেনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং তা ব্যয়সাপেক্ষ। তাই, রেস্তোরাঁ সেক্টরে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। রেস্তোরাঁয় গ্যাস লাইন ট্রান্সফার কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে লাইন ট্রান্সফার এবং নাম পরিবর্তনের সব প্রতিবন্ধকতা তুলে নিতে হবে।
৭. প্রতিবছর রমজান মাসে বিভিন্ন মৌসুমি ব্যবসায়ী ইফতারি পসরা সাজিয়ে বসে। এদের নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। এ বিষয়ে নজর দেওয়া অতীব জরুরি।
৮. রমজানে ইফতারি ও সেহরি সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার সুযোগ দিতে হবে।
সমিতির সভাপতি হাজী মো. ওসমান গনির সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এম এস আলম শাহজাহান ও রেজাউল করিম সরকার রবিন, প্রথম যুগ্ম মহাসচিব মো. ফিরোজ আলম সুমন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান চৌদুরী, বিপু, কোষাধ্যক্ষ তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বিজনেস আওয়ার/২১ মার্চ, ২০২৩/এস এম