বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মোটরের নতুন নতুন বিমা পলিসি তৈরি নির্দেশ দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। একই সঙ্গে মোটরের নতুন বিমা পলিসি তৈরি করে আইডিআরএর কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে আইডিআরএ থেকে সব সাধারণ বিমা কোম্পানিকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই আলোচনায় উঠে আসে, সড়কে মোটরযান চলাচলের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রয়েছে- যানবাহনের দ্বারা নিরীহ পথচারীর বা তৃতীয় পক্ষের জান ও মালের ক্ষতি (অ্যাক্ট লায়াবিলিটি), যানবাহনের নিজস্ব ড্রাইভার/যাত্রীর জান ও মালের ক্ষতি এবং যানবাহনের ক্ষতি।
আরও উঠে আসে, মোটর বিমা ক্যাটাগরিতে দুই ধরনের বিমা প্রচলিত ছিল। প্রথমটি অ্যাক্ট লায়াবিলিটি বিমা পলিসি (থার্ড পার্টি বিমা)। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বাধ্যতামূলক ছিল। অন্যটি কম্প্রিহেনসিভ বিমা পলিসি। যা বরাবরই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ঐচ্ছিক ছিল। কম্প্রিহেনসিভ বিমায় গাড়ির নিজস্ব ক্ষতিসহ তৃতীয়পক্ষের জানমালের ক্ষতির কাভারেজ করা থাকে।
আইডিআরএ জানায়, বাংলাদেশে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মোটরচালিত প্রায় ৬০ লাখ নিবন্ধিত যানবাহন প্রাইভেট ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকি এড্রেস করে নতুন নতুন বিমা পলিসি প্রণয়ন করে বাজারজাত করা হলে জিডিপিতে বিমার পেনিট্রেশন বাড়বে। তাই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মোটরের নতুন নতুন বিমা পলিসি তৈরি করে পাঠানোর জন্য সব সাধারণ বিমা কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জনা গেছে, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে, নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮তে তৃতীয়পক্ষের বিমা তুলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যানবাহনের বিমা মালিকের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ একজন ইচ্ছা করলে তার যানবাহনের বিমা করতে পারেন। আবার না করলেও কোনো সমস্যা নেই।
একই বিষয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকেই মূলত মালিকরা পরিবহনের বিমা করা প্রায় বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যেসব পরিবহন চলাচল করছে তার সিংহভাগেই বিমা নেই। বিশেষ করে বিমা ছাড়াই চলাচল করছে মোটরসাইকেল।
তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেওয়ার পর যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান বিমা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্সে বাধ্যতামূলক করার সুযোগ না থাকায় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন বিমা সংশ্লিষ্টরা। এনিয়ে বিমা মালিকদের অংশগ্রহণে একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে হয়েছে। সেখানে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমার আদলে নতুন একটি বিমা প্রোডাক্ট চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা যায়, মোটরযান বিমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে যে সুপারিশ এসেছে, সেখানে এর পক্ষে কিছু যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়। ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মোটরযানের বিমা আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এবিষয়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আইডিআরএর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এ মোটরযানের ক্ষেত্রে কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্সে অথবা অ্যাক্ট লাইবেলিটি ইন্স্যুরেন্স (থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স) বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। আইনে বর্ণিত বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অনুরোধ করা হবে। এলক্ষ্যে মোটরযানের বিমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথাযথ যৌক্তিকতাসহ সুস্পষ্ট প্রস্তাব প্রয়োজন।
এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ নিতে ফেব্রুয়ারি মাসে আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বিমা না করলে গাড়ির মালিকদের ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত জারিমানা দিতে হবে। এরপর ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখবো, যথাযথ বিমা ছাড়া সড়কে কোনো যানবাহন যেন না চলে। এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন মন্তব্য আসার পর এখন দেশে ব্যবসা করা সব সাধারণ বিমা কোম্পানিকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মোটরের নতুন নতুন বিমা পলিসি তৈরি নির্দেশ দিলো আইডিআরএ।
বিজনেস আওয়ার/২১ মে, ২০২৩/এমএজেড