বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে আকাশ পথে বিজনেস ক্লাসের নারী যাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কেবিন ক্রু লুৎফর রহমান ফারুকি ওরফে বাবুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনার পর পুরো বিমানে তোলপাড় চলছে এখনো। গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটির কাজও প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
কেবিন ক্রুর বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (প্রশাসন) সিদ্দিকুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কুপ্রস্তাবের বিষয়টি সত্যতা পাওয়া গেছে। বিমানের প্রধান নির্বাহী ও সিও দেশে আসার পরপরই বাবুকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে আশা করছি।
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটে গত ১১ জুলাই রাত সোয়া ৮টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শারজাহর উদ্দেশ্যে যায় বিজি-২৫১ ফ্লাইটে। বিজনেস ক্লাসের একমাত্র যাত্রী ছিলেন এক নারী। আর এই সুযোগে তার পাশে গিয়ে বসেন ফ্লাইটের কেবিন ক্রু লুৎফুর রহমান ফারুকি ওরফে বাবু। যৌন বিষয়ে কথা বলতে থাকলে অস্বস্তিতে পড়েন তরুণী। একপর্যায়ে সিটের ওপরে থাকা আলো নিভিয়ে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। এমনকি শারজাহ একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করার প্রস্তাব দিয়ে বসেন বাবু। ১৫ জুলাই বিমানের এমডি বরাবর ‘ফ্লাইট হ্যারাজমেন্ট’ শিরোনামের ওই যাত্রীর অভিযোগ করা ই-মেইলটি বিমান কর্তৃপক্ষের হাতে আসে। জরুরি ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে চিঠিটি গ্রাহকসেবা বিভাগে পাঠানো হয় ১৭ জুলাই। প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (কার্গো) রাশেদুল ইসলামকে।
চিঠিতে ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে লিখেছেন- ওই দিন বিমানের বিজি-২৫১ ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসে তিনি একমাত্র যাত্রী ছিলেন। রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেট থেকে উড্ডয়নের পরপরই ফ্লাইট পার্সার বাবু তার সঙ্গে অসংলগ্ন কথাবার্তা শুরু করেন। ২৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফ্লাইট পার্সার তাকে জানান-তিনি নৃত্যকলায় পারদর্শী। তার সঙ্গে নাচ করার প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে সামনের বিজনেস কেবিনের আলো নিভিয়ে দিয়ে পাশের সিটে এসে বসেন তিনি। পুরোটা সময়ই একের পর এক অসংলগ্ন ও ব্যক্তি গোপনীয় প্রশ্ন করে গেছেন ওই ফ্লাইট পার্সার। কথার ফাঁকে ফাঁকে তাকে বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাবও দেন তিনি। এক সময় তাকে বিমানের সামনের অন্ধকার গ্যালিতে আসার প্রস্তাব দিলে ওই নারী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং গ্যালিতে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
তখন অভিযুক্ত ফ্লাইট পার্সার বাবু ওই নারীকে জানান, শারজাহতে তিনি এসিটি হোটেলে থাকবেন। নারী যাত্রীকে সেই হোটেলে আসার প্রস্তাবও দেন বাবু। ফ্লাইটের শেষের দিকে বিমানের একজন নারী কর্মী বিজনেস ক্লাসে এলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয় এবং ওই ফ্লাইট পার্সার আচরণ বদলে ফেলেন। নিরাপত্তার অভাবে যাত্রাপথে ফ্লাইট পার্সারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ওই যাত্রী।
চিঠিতে আরও বলেছেন, তিনি আর কোনো দিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভ্রমণ করবেন না। পাশাপাশি দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ করেছেন তিনি। তার মতো যাতে আরও কোন যাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা আর না ঘটে তাও বলেছেন চিঠিতে।
বিজনেস আওয়ার/ ২৭ জুলাই,২০২৩/এএইচএ