শুভ জন্মদিন বাংলা সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ

বিনোদন ডেস্ক : পাঠককে এতটা পরিব্যপ্ত করে আর কেউ ছুঁতে পারেনি আগে। সাবলীল বাক্যে অজস্র গল্প নদীর মতো বয়ে চলছে। মাঝরাতে হিমুর রাস্তায় ঘুরাঘুরি, ছাদে দাঁড়িয়ে রুপার অপেক্ষা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকানো মিসির আলি, শুভ্র এবং বাকের ভাই।
কোনো দিন বুঝি শেষ হবে না; বরং কেটে যাবে কৈশোর এবং তারুণ্য। মধ্যবিত্ত বাঙালির আনন্দ-বেদনার অপরূপ রূপকার তিনি। হুমায়ূন আহমেদ তিনি, বাংলা সাহিত্যের জাদুকর।
প্রায়াত এই কথাসাহিত্যিক ও নন্দিত নির্মাতার ৭১তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ নানার বাড়িতে জন্ম নেন তিনি। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে তার পিতার বাড়ী।
পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসাবেও কর্মরত ছিলেন। কর্তব্যরত অবস্থাতেই পাকবাহিনীর হাতে নিহত হন।
পারিবারিকভাবেই সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠা হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখিতে আগ্রহ ছিল ব্যাপক। ‘দীপ নেভা যার ঘরে’ শিরোনামে তার পিতার একটি বই প্রকাশিত হয় বগুড়ায় থাকাকালে।
ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিশু-কিশোর এবং সায়েন্স ফিকশন লেখক হিসাবে জনপ্রিয়। আরেক ভাই আহসান হাবীব রম্যলেখক ও কার্টুন ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক। মা আশেয়া ফয়েজের ‘আত্মজীবনী’ প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে।
এসব থেকে অন্তত তার পারিবারিক শিকড় সম্পর্কে ধারণা আসে। ছেলেমেয়েদের নিত্য নাম পরিবর্তনের অদ্ভুত এক খেয়াল ছিল ফজলুর রহমানের। খোদ হুমায়ূন আহমেদের নামই রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান।
হুমায়ূন আহমেদ অবশ্য স্বীকার করেছেন; পিতা বেঁচে থাকলে হয়তো আরো কয়েক দফা নামের পরিবর্তন ঘটত। সে যা-ই হোক, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে হুমায়ূন সবার বড়।
সরকারি চাকরির জন্য কোথাও থিতু হতে পারেনি তাঁর পরিবার। এজন্য শিক্ষাজীবনের সূচনা সিলেটের কিশোরীমোহন পাঠশালায় হলেও ম্যাট্রিক পাশ করেন বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে।
তারপরে ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি। পেশাজীবনে প্রথমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। পুরোপুরি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ ১৯৯০ সাল থেকে।
১৯৭৩ সালে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন গুলতেকিনের সাথে। ২০০৩ সালে বিচ্ছেদের আগে পর্যন্ত তিন মেয়ে, এক ছেলে। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন মেহের আফরোজ শাওনকে। সেই সংসারে দুই পুত্র।
ছাত্রজীবনেই লেখা ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগমন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে পাঠকের হাতে তুলে দিতে থাকেন একের পর এক স্বতন্ত্র নির্মাণ।
সাহিত্যের গতানুগতিক দেয়াল এবং নিয়মকে ডিঙিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন নিজের পৃথিবীকে। রচনা করতে থাকেন গল্প, উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন, শিশুতোষ রচনা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ এবং আত্মজীবনী।
নাটক এবং চলচ্চিত্রেও সোনা ফলালেন হাত ভরে। শুধু গ্রন্থের সংখ্যাই তিন শতাধিক। তাঁকে বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃত বললেও ভুল হবে না।
'বাদশাহ নামদার'র মতো ঐতিহাসিক রচনা, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’র মতো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস কিংবা ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’র মতো সায়েন্স ফিকশন পরবর্তীকালে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আদর্শ হিসাবে বিবেচিত হয়।
তাঁর নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’ এতটাই দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে যে; অন্যতম প্রধান চরিত্র বাকের ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তার প্রতিবাদে ঢাকায় মিছিল বের হয়।
‘শ্যামল ছায়া’ চলচ্চিত্রটি সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচিত হয়। সফল এবং সুস্থ ধারার সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে দর্শকদের পুনরায় হলমুখী করেন তিনি।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাসি-কান্নাগুলো হুমায়ূন আহমেদের কলমে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়া, সাফল্য-ব্যর্থতা কিংবা অভিমান-হতাশা তাঁর ক্যানভাসে বিম্বিত হয়েছে সফল এবং সাবলীলভাবে।
তাঁর মুনশিয়ানা দেখা যায় মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা এবং পারিবারিক জীবনের খুঁটিনাটি তুলে আনতে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঘরোয়া ঢঙে গল্পের নাটকীয় এগিয়ে চলা। 'মধ্যাহ্ন' কিংবা 'কবি' থেকে শুরু করে ইতিহাস আশ্রয়ী 'বাদশাহী নামদার' অব্দি তার বাক্যগঠনের নিজস্বতা পরিদৃষ্ট হয়।
বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের অনন্য অবদান কয়েকটি চরিত্র। তার গল্পের চরিত্রগুলো প্রায়শ মনে হয় আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ। সেখানে উঠে আসে ডাকাতের ভেতরকার দয়ার্দ্রতার লক্ষণ আবার পরম ভদ্র মানুষটির ভেতরের দুর্বলতা।
যেন আমাদের সমাজেরই বিম্ব। তাদের কেই পাগলাটে, কেউ বদমেজাজী, কেউ কথা বেশি বলে, কারো বাতের ব্যথা কিংবা কেউ আধিভৌতিক ক্ষমতাসম্পন্ন। খুব সম্ভবত একারণেই তার চিত্রিত চরিত্রগুলোর বড় একটা অংশ পাঠককে বুঁদ করে রাখে।
হিমু এক খেয়ালি বেকার যুবকের নাম। হলুদ জামা গায়ে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ানো, কিছুটা উদ্ভট কথাবার্তা এবং যুক্তির বাইরে গিয়ে জীবনকে যাপন করতে চাওয়া এক তরুণ। হিমুরা মিথ্যে বলে না, কিন্তু তাদের কথায় আপাত বিরোধিতা লক্ষ করা যায়।
বৈষয়িক বিষয়ের বাইরে হিমুর চেতনাবোধ বিশাল এবং বিস্তৃত। মানুষের ভেতরকার ইতিবাচক দিকটাকেই কেবল উঠিয়ে আনা হয়নি এখানে। ব্যস্ত এবং যান্ত্রিক শহুরে সভ্যতায় যুক্তির বাইরে গিয়ে চরমতম সত্যকে স্পর্শ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
সে দিক থেকে মিসির আলি অনেকাংশে হিমুর বিপরীত। তিনি যুক্তির বাইরে আর কিছু মানতে নারাজ। চারপাশের সত্যকে জানার জন্য তার প্রচেষ্টা বিজ্ঞান এবং যুক্তিনির্ভর।
মোটা চোখে দেখলে, হিমু এবং মিসির আলি একই ব্যক্তির পৃথক দুটি সত্তা। শুভ্র এবং বাকের ভাই চরিত্রের ক্ষেত্রেও হুমায়ূনের মুনশিয়ানা নজরে আসার মতো।
লোকায়ত জীবন এবং লোকজ জীবন তুলে আনার জন্য বড় ভূমিকা পালন করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার হাত ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা পরিচিত হয়েছে দেশ জুড়ে। সেখানকার আঞ্চলিক ভাষা পর্যন্ত স্থান পেয়েছে নাটকে এবং চলচ্চিত্রে।
বারী সিদ্দিকী এবং কুদ্দুস বয়াতীর মতো গায়কেরা এজন্যই তার নাটকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বাউল, ফকির কিংবা সাধক শ্রেণির উপস্থাপন এবং ভাষা প্রয়োগ এবং রূপকের ব্যবহার তাকে আধ্যাত্মচেতনায় সচেতনতার প্রমাণ দেয়।
এতকিছুর বাইরে এসেও তিনি রচনা করেছেন বেশকিছু গান; যার অনেকাংশই জনপ্রিয়। 'চাঁদনি পসর রাতে যেন আমার মরণ হয়', 'আমার আছে জল', 'মনে বড় আশা ছিল', 'মাথায় পড়েছি সাদা ক্যাপ' প্রভৃতি গান জনমনে প্রভাব ফেলেছে দারুণভাবে।
অনবদ্য সৃষ্টির স্বীকৃতিও পেয়েছেন ঢের। লেখক শিবির পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কারসহ দেশ ও বিদেশের অনেক সম্মাননা তাঁর পকেটে।
তবে খুব সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলা ভাষায় বিশাল এক পাঠক সমাজ তৈরি করা। পাঠকদের অধিকাংশ তরুণ বয়সী হবার কারণে একথাও বলা যায়—তিনি তরুণ প্রজন্মকে বইয়ের দিকে টেনে এনেছেন।
কয়েক প্রজন্ম আগেও বাংলা ভাষার পাঠকেরা বেড়ে উঠত পশ্চিম বঙ্গের বই পড়ে। হুমায়ূন ঢাকাকেন্দ্রিক সফল সাহিত্যিক, যার লেখায় পূর্ব বাংলার সমাজ সংস্কৃতি এবং জীবনবোধ উঠেছে পূর্ব বাংলার পাঠকের জন্য। তার জনপ্রিয়তার অন্যতম গোপনসূত্র এখানে রক্ষিত।
বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের অগ্রগতিতে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার কল্যাণেই প্রায় মুখ থুবড়ে পড়া প্রকাশনা আবার উঠে দাঁড়ায়। কথাসাহিত্যিকরা অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। প্রকাশকেরা পায় বই প্রকাশের সাহস।
প্রকৃতিপ্রেমী ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। গাজীপুরে ‘নুহাশ পল্লী’ এবং সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে ‘সমুদ্র বিলাস’ তার অন্যতম উদাহরণ। নীরবে নিভৃতে বসে লিখে গেছেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।
কিন্তু তাঁর গল্পগুলোর মতোই বড় অসময়ে অনেক কথা বাকি রেখেই সমাপ্তি ঘটল হুমায়ূনের জীবনের। ১৯ জুলাই ২০১২ সালে নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি।
বিজনেস আওয়ার/১৩ নভেম্বর, ২০১৯/এ
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
- বাজারে পেঁয়াজের ছড়াছড়ি, তবু দামে অস্থিরতা! ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯
- আমার মেয়ে আত্মহত্যাকে ঘৃণা করতঃ রুম্পার মা ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- রাজধানীতে পৃথক ২ স্থানে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- থানার পাশে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে আইএস ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- নেপালকে ৪৪ রানে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- আজ চুয়াডাঙ্গা শত্রুমুক্ত দিবস ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- যমুনা ব্যাংকের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, ঔষধ-কম্বল বিতরণ ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- বঙ্গবন্ধুকে ‘ড. অব ল’ সম্মাননা দেবে ঢাবি ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- সপ্তম স্বর্ণ উপহার দিলেন ফেন্সিংয়ের ফাতেমা ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- শেয়ার দর সর্বোচ্চ কমেছে স্টাইলক্রাফটের ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- কাল দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- 'ঘন কুয়াশার কারণেই ২ লঞ্চের সংঘর্ষ' ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- 'বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে' ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন’ হতে যাচ্ছেঃ তথ্যমন্ত্রী ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- অভিনেতা খলিলের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- শেয়ারবাজারের মন্দায় লোকসানে আইসিবি ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন সিয়াম-পরী ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- হানিমুনে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন মিথিলা-সৃজিত ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- একই পরিবারের ৩ মরদেহ উদ্ধার, পুলিশ বলছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- পেট্রোবাংলা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- চলতি সপ্তাহে ৩০ কোম্পানির এজিএম ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- মেঘনায় দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- রাজধানীর যেসব এলাকায় আজ গ্যাস থাকবে না ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯
- চুয়াডাঙ্গায় র্যাবের অভিযানে ফেন্সিডিলসহ দুই সহোদর আটক ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- ডিসেম্বরেই বসছে মেট্রোরেলের লাইন ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- ক্যাসিনো নিয়ে ব্যস্ত নিরব ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- ফের অপু বিশ্বাসের বিয়ের গুঞ্জন ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- হানিমুনে কোথায় যাচ্ছেন সৃজিত-মিথিলা? ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- 'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ' ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- 'ভারত আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার মতো কিছু করবে না' ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- বাজারে পেঁয়াজের ছড়াছড়ি, তবু দামে অস্থিরতা! ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯