বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। দেশে দেশে এখনো চলছে লকডাউন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। কোভিড-১৯ অতিমারি চিকিৎসাক্ষেত্রে শতাব্দির সবচেয়ে বড় উদ্বেগগুলোর মধ্যে একটি। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাকালে এই চ্যালেঞ্জ আরও উদ্বেগজনক। এসময়ে বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়ে যাচ্ছে। যথাযথ উপায়ে পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করায় দেশের পরিবেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

করোনাপূর্ব এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে দৈনিক প্রায় ৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হতো। কিন্তু করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এই হার বহুগুণে বেড়ে গেছে। এখন ঢাকা শহরে প্রতিদিন কোভিড-১৯ এর বর্জ্যই উৎপাদিত হচ্ছে ২০৬ টনের কাছাকাছি।

করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে হাসপাতাল, অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই মাস্ক, গøাভস, গাউন এবং অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন। যেগুলো ব্যবহারের পর বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। এসব বর্জ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা বেশি। বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির বর্জ্য যখন সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে যায় তখন এ বিষয়টি পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আরো উদ্বেগ সৃস্টি করে।

এই নভেল ভাইরাসটির জীবন রহস্য সুনির্দিষ্টভাবে এখনো উম্মোচন করা সম্ভব হয়নি। ভাইরাসটি নিয়ে গবেষণা চলমান। তবে ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, যেকোনো বস্তুতে এই ভাইরাস কমপক্ষে ৯ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। আবার প্ল্যাস্টিক, টেক্সটাইল এবং অন্যান্য ধাতব পদার্থে বা পণ্যে কিংবা কাঠ ও কাপড়-চোপড়েও টিকে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।

জনবহুল দেশ আমাদের। এখানে স্বাস্থ্যসেবা সীমিত। এখানে এমনিতেই পৌর বর্জ্যগুলো যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয় না। তার মধ্যে কোভিড-১৯-এর বর্জ্য যোগ হয়ে একটা বিভীষিকার মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে। যখন কোভিড-১৯-এর বর্জ্য নগরের সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তখন তার মাধ্যমে যেমন এখাতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তেমনি তাদের পরিরাবারের সদস্যরাও থাকেন উচ্চ ঝুঁকিতে।

কোভিড-১৯ বর্জ্যগুলো যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। না হলে এগুলো যত্রতত্র ডাম্পিং করা হবে, কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। যা জনস্বাস্থ্যের ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বর্জ্য ও দূষিত পানির মাধ্যমেই মূলত রোগ বেশি ছড়ায়। করোনাভাইরাস ছড়ায় আরো দ্রæত গতিতে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যেসব এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল এবং মানুষ খোলা নর্দমার পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয় এসব এলাকার মানুষই দ্রুত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন।

আরো একটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। মাস্ক এবং গ্ল্যাভসের মতো মেডিক্যাল প্রোডাক্ট যা প্লাস্কিট এবং টেক্সটাইলের মতো দ্রব্যাদির মাধ্যমে তৈরি সেগুলো ড্রেনে কিংবা উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখা হয়। এটা আরো উদ্বেগজনক। করোনাভাইরাস এবং অন্যান্য রোগের প্রাদূর্ভাব থেকে বাঁচতে চাই সর্বমহলের সচেতনতা। দরকার সরকারি নীতিমালা ও আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন। কোভিড-১৯-এর বর্জ্য অন্যান্য সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে কোনোভাবেই মেশানো যাবে না।

ডিসপোজ্যাবল জিনিসপত্র যেমন পানির বোতল, গ্ল্যাস এবং প্লেট এগুলো কোয়ারেন্টাইনে থাকা কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা উচিৎ নয়। পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষের পবিরবর্তে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর বর্জ্য সংগ্রহ করা শ্রেয়।

হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তিকে কম বর্জ্য উৎপাদন করতে হবে। খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা যাবে না। আমাদের উচিৎ সমাধানের সঙ্গী হওয়া। দূষণের নয়। পরিবেশের প্রতিটি উপাদান একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি দূষিত হলে পুরো পরিবেশটাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এক পর্যায়ে আক্রান্ত হতে থাকে মানুষ। সুতরাং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের আরো আন্তরিক হতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা আমাদের চারপাশকে বাসযোগ্য করে তুলতে পারবো।

লেখক: হাবিবা আক্তার হ্যাপী, শিক্ষার্থী- এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয়
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজনেস আওয়ার/১৯ মে, ২০২১/এ