ঢাকা , সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোকসানি লিগ্যাসির দর লাগামহীন, অভিযোগ কারসাজি

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩
  • 7

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : লোকসানে পড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত লিগ্যাসি ফুওয়্যারের শেয়ার দর লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। গত পাঁচ মাসে দুর্বল (বি ক্যাটাগরি) ও স্বল্প মূলধনী এই কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২২০ শতাংশ। শেয়ার কারসাজি করে এই বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। একারনে কোম্পানিটির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সুখবর নয় বলে জানিয়েছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। অপরদিক এই কোম্পানির শেয়ার দর কেন বাড়ছে, তার প্রকৃত কারন জানে না লিগ্যাসি ফুওয়্যারের কর্তৃপক্ষ।

গত পাঁচ মাসে লিগ্যাসি ফুওয়্যারের মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ১১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অপরদিক এই সময়ে ধারন করা বিনিয়োগকারীদের (সাধারন ও প্রাতিষ্ঠানিক) শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সাধারন ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার ধারন করেছে। শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছ‍ুক কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, লিগ্যাসি ফুওয়্যারের শেয়ার দর বৃদ্ধি কারন জানিনা। এই মুহুর্ত্বে কোম্পানির শেয়ার বৃদ্ধির ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। তবে আমাদের পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করা হবে। এ লক্ষে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। যা কোম্পানির চলতি মূলধনের ঘাটতি পূরণ করবে।

অনুসন্ধানে, গত বুধবার কোম্পানির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১২৫ টাকা। এর আগে ১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৯ টাকা। গত পাঁচ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮৬ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০টি। সেই হিসাবে গত বুধবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে হয়েছে ১৬৩ কোটি ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ১ মার্চ মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে ছিল ৫১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ২২০ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ১১২ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ২৮০ টাকা।

আরও জানা যায়, লিগ্যাসি ফুওয়্যারের মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ধারন করেছে সাধারন বিনিয়োগকারী। আর ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ ধারন করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। সেই হিসেবে তাদের (সাধারন ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী) শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ৭৮ কোটি ৭৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৯৬ টাকা। লাগামহীন কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির কারন জানান জন্য রেগুলেটরদের (বিএসইসি) দৃষ্টি আকর্ষন করেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। তার বলছেন, অনেকদিন ধরে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে একটি চক্র কারসাজি করে শেয়ার দর বৃদ্ধি করেছে। গত ১ মে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৯ টাকা। আর গত বুধবার এসে দাড়ায় ১২৫ টাকা। আজ (বৃহস্পতিবার) দিনশেষে শেয়ারটির দর আরও বাড়ে। ৫ মাসের ব্যবধানে শেয়ার দর ২২০ দশমিক ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়।

তথ্য মতে, চলতি বছরের ৩০ জুন লিগ্যাসি ফুওয়্যারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারন ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত ৩১ জুলাই তাদের শেয়ার ধারন দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। অপরদিকে গত ৩০ জুন সাধরন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারন ছিল ৬০ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত ৩১ জুলাই তাদের শেয়ার ধারন দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারন কমেছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। কোম্পানি কোডে শেয়ার ক্রয়ের কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। আর এর সাথে কোম্পানির যোগসাজশ রয়েছে বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগও।

তথ্য মতে, আলোচিত ওই ৫ মাসে সাধারন বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৮১টি শেয়ার বিক্রয় করেছে। একই সময় সেই পরিমান শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্রয় করেছে। ফলে ধারন দিক দিয়ে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আলোচিত সময় উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারনে কোন পরিবর্তন হয়নি। মানে গত জুন মাসে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারন ছিল ৩০ শতাংশ। জুলাই মাসেও সেই শেয়ার ধারন অবস্থা একই ছিল।

কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে কোম্পানিটিকে গত মে মাসে শেষদিকে ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। সেই শেয়ার দর বৃদ্ধি এখনো থামেনি। বরং বেড়েই চলছে। সামনে আরও বাড়বে বলেও হাউজগুলোতে তথ্য চালাচালি হচ্ছে। তবে ওইসব তথ্যের কোন ভিত্তি খুজে পাওয়া যায়নি।

দেখা যায়, আলোচিত পাঁচ মাসে সাধারন বিনিয়োগকারীরা যে পরিমান শেয়ার বিক্রয় করছেন। একই সময়ে সেই পরিমান শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিকরা ক্রয় করেছেন। কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ অবশ্য উত্তম জানিয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, শেয়ারটির দর দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। কারা এই বিনিয়োগ করছে, সেই বিষয়ে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের বিশেষ দৃষ্টি রাখা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নিরীহ বিনিয়োগকারীরা বিপদে পড়বে।

কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। একই কথা সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকেও (ডিএসই) আমরা তাই জানিয়েছি। দাবি নিয়ে বলতে পারি, শেয়ার দর বৃদ্ধিতে আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত নেই। দর বৃদ্ধির আলোচিত পাঁচ মাসে শেয়ারবাজারে আমাদের কোন পরিচালক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে নাই জানিয়ে তিনি বলেন, শেয়ার দর বাড়া কমা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।

অতি বৃদ্ধির ব্যাখা যারা শেয়ার কিনছে তারাই বলতে পারবে মন্তব্যে করে এই কর্মকর্তা বলেন, গত পাঁচ মাসে ২২০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। কেন বেড়েছে সেটা আমার জানা নেই। যারা এতো দরে শেয়ারটি কিনছে, সেটা কেবল তারাই (প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী) বলতে পারবে, কেন বাড়তি দামে কিনছে।

শেয়ার দর বৃদ্ধির বিযয়টি খতিয়ে দেখছি জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, লিগ্যাসি ফুওয়্যারের শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। বিষয়টি দেখছে কমিশন। আরও বলেন, শেয়ারটির দর বাড়ানো ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে, কোম্পানির বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য গত অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) লিগ্যাসি ফুওয়্যারের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির লোকসান পড়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা। আগের বছর (২০২১-২০২২) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৫ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৩ পয়সা। আলোচ্য সময় কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো ছিল নেগেটিভ ২২ পয়সা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) হিসেবে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা। আগের অর্থবছর (২০২১-২০২২) একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৬ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/১০ আগস্ট, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

লোকসানি লিগ্যাসির দর লাগামহীন, অভিযোগ কারসাজি

পোস্ট হয়েছে : ০৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : লোকসানে পড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত লিগ্যাসি ফুওয়্যারের শেয়ার দর লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। গত পাঁচ মাসে দুর্বল (বি ক্যাটাগরি) ও স্বল্প মূলধনী এই কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২২০ শতাংশ। শেয়ার কারসাজি করে এই বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। একারনে কোম্পানিটির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সুখবর নয় বলে জানিয়েছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। অপরদিক এই কোম্পানির শেয়ার দর কেন বাড়ছে, তার প্রকৃত কারন জানে না লিগ্যাসি ফুওয়্যারের কর্তৃপক্ষ।

গত পাঁচ মাসে লিগ্যাসি ফুওয়্যারের মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ১১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অপরদিক এই সময়ে ধারন করা বিনিয়োগকারীদের (সাধারন ও প্রাতিষ্ঠানিক) শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সাধারন ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার ধারন করেছে। শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছ‍ুক কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, লিগ্যাসি ফুওয়্যারের শেয়ার দর বৃদ্ধি কারন জানিনা। এই মুহুর্ত্বে কোম্পানির শেয়ার বৃদ্ধির ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। তবে আমাদের পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করা হবে। এ লক্ষে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। যা কোম্পানির চলতি মূলধনের ঘাটতি পূরণ করবে।

অনুসন্ধানে, গত বুধবার কোম্পানির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১২৫ টাকা। এর আগে ১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৯ টাকা। গত পাঁচ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮৬ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০টি। সেই হিসাবে গত বুধবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে হয়েছে ১৬৩ কোটি ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ১ মার্চ মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে ছিল ৫১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ২২০ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ১১২ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ২৮০ টাকা।

আরও জানা যায়, লিগ্যাসি ফুওয়্যারের মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ধারন করেছে সাধারন বিনিয়োগকারী। আর ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ ধারন করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। সেই হিসেবে তাদের (সাধারন ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী) শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ৭৮ কোটি ৭৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৯৬ টাকা। লাগামহীন কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির কারন জানান জন্য রেগুলেটরদের (বিএসইসি) দৃষ্টি আকর্ষন করেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। তার বলছেন, অনেকদিন ধরে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে একটি চক্র কারসাজি করে শেয়ার দর বৃদ্ধি করেছে। গত ১ মে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৯ টাকা। আর গত বুধবার এসে দাড়ায় ১২৫ টাকা। আজ (বৃহস্পতিবার) দিনশেষে শেয়ারটির দর আরও বাড়ে। ৫ মাসের ব্যবধানে শেয়ার দর ২২০ দশমিক ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়।

তথ্য মতে, চলতি বছরের ৩০ জুন লিগ্যাসি ফুওয়্যারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারন ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত ৩১ জুলাই তাদের শেয়ার ধারন দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। অপরদিকে গত ৩০ জুন সাধরন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারন ছিল ৬০ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত ৩১ জুলাই তাদের শেয়ার ধারন দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারন কমেছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। কোম্পানি কোডে শেয়ার ক্রয়ের কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। আর এর সাথে কোম্পানির যোগসাজশ রয়েছে বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগও।

তথ্য মতে, আলোচিত ওই ৫ মাসে সাধারন বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৮১টি শেয়ার বিক্রয় করেছে। একই সময় সেই পরিমান শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্রয় করেছে। ফলে ধারন দিক দিয়ে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আলোচিত সময় উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারনে কোন পরিবর্তন হয়নি। মানে গত জুন মাসে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারন ছিল ৩০ শতাংশ। জুলাই মাসেও সেই শেয়ার ধারন অবস্থা একই ছিল।

কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে কোম্পানিটিকে গত মে মাসে শেষদিকে ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। সেই শেয়ার দর বৃদ্ধি এখনো থামেনি। বরং বেড়েই চলছে। সামনে আরও বাড়বে বলেও হাউজগুলোতে তথ্য চালাচালি হচ্ছে। তবে ওইসব তথ্যের কোন ভিত্তি খুজে পাওয়া যায়নি।

দেখা যায়, আলোচিত পাঁচ মাসে সাধারন বিনিয়োগকারীরা যে পরিমান শেয়ার বিক্রয় করছেন। একই সময়ে সেই পরিমান শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিকরা ক্রয় করেছেন। কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ অবশ্য উত্তম জানিয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, শেয়ারটির দর দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। কারা এই বিনিয়োগ করছে, সেই বিষয়ে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের বিশেষ দৃষ্টি রাখা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নিরীহ বিনিয়োগকারীরা বিপদে পড়বে।

কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। একই কথা সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকেও (ডিএসই) আমরা তাই জানিয়েছি। দাবি নিয়ে বলতে পারি, শেয়ার দর বৃদ্ধিতে আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত নেই। দর বৃদ্ধির আলোচিত পাঁচ মাসে শেয়ারবাজারে আমাদের কোন পরিচালক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে নাই জানিয়ে তিনি বলেন, শেয়ার দর বাড়া কমা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।

অতি বৃদ্ধির ব্যাখা যারা শেয়ার কিনছে তারাই বলতে পারবে মন্তব্যে করে এই কর্মকর্তা বলেন, গত পাঁচ মাসে ২২০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। কেন বেড়েছে সেটা আমার জানা নেই। যারা এতো দরে শেয়ারটি কিনছে, সেটা কেবল তারাই (প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী) বলতে পারবে, কেন বাড়তি দামে কিনছে।

শেয়ার দর বৃদ্ধির বিযয়টি খতিয়ে দেখছি জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, লিগ্যাসি ফুওয়্যারের শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। বিষয়টি দেখছে কমিশন। আরও বলেন, শেয়ারটির দর বাড়ানো ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে, কোম্পানির বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য গত অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) লিগ্যাসি ফুওয়্যারের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির লোকসান পড়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা। আগের বছর (২০২১-২০২২) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৫ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৩ পয়সা। আলোচ্য সময় কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো ছিল নেগেটিভ ২২ পয়সা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) হিসেবে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা। আগের অর্থবছর (২০২১-২০২২) একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৬ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/১০ আগস্ট, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: