ঢাকা , শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাবিবার অর্থ কবিরের পকেটে!

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৩
  • 10

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে এসএমই সেক্টরে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের মৃত পরিচালক রফিকুল ইসলামের শেয়ার বিক্রি করে ওই অর্থ আত্মসাতের রহস্য আরও দ্রবীভূত হচ্ছে। ওই পরিমান অর্থ আত্মসাত বিষয়টি নিয়ে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) একে অপরকে দোষারোপ করেছে। সব ভূল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ওই অর্থ আত্মসাতের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি কবির হোসেনের দিকে শেষ তীর ছুড়লেন বিনিয়োগকারী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন (উম্মে হাবিবা)। যদিও এ প্রসঙ্গে কবির হোসেন বলেন, আমাকে নিয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি নির্দোষ।

অপরদিকে অভিযোগের পর এক মাস পার হলেও এবিষয়ে কোন সুরাহা করতে পাচ্ছে না বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে, নেই তার সময় সীমা। এতে করে তৈরি হচ্ছে নানা রকমের জটিলতা।

মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের শেয়ার বিক্রির ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২৪ জুলাই মৃত পরিচালকের স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন (উম্মে হাবিবা) প্রথম দফায় সন্দেহের তীর ছুড়ে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে। উম্মে হাবিবা সিকিউরিটিজটির একজন বিনিয়োগকারী (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স)। এবিষয়ে অভিযোগ চিঠি আকারে বিএসইসিতে দেন তিনি।

পরবর্তীতে উম্মে হাবিবা তার ভুল বুঝতে পারেন, যে মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে তার সন্দেহ সঠিক নয়। এ ব্যাপারে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি কবির হোসেন তাকে ভুল বুঝিয়েছে। অনেকটা বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্য দিকে ধাবিত করেছেন। এও জানান, বিএসইসিতে ফাস্ট ক্যাপিটালের সিইওর নামে কোন অভিযোগ দেইনি তিনি। তার নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি শেয়ার আত্মসাত করেছেন। তার প্রমাণ আছে। নির্দ্বিধায় জানান, মাস্টার ফিডের শেয়ার বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের মাস্টার মাইন্ড কোম্পানির এমডি নিজেই। ফলে ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফায় অভিযোগের সঠিক তীর ছুড়েন মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি কবির হোসেনের বিরুদ্ধে। এরপর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে চিঠি বিএসইসি দিয়েছেন উম্মে হাবিবা।

দুই দফায় অভিযোগকালে বিনিয়োগকারী উম্মে হাবিবা গণমাধ্যমে কথা বললেও এখন কথা বলতে নারাজ। অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন। তার মুঠোফোনে কল করলে গণমাধ্যম পরিচয় দিলে কল কেটে দেন। পূনরায় কল করলে রিসিভ করেন না। একবার এমনও হয়েছে মুঠোফোনে উম্মে হাবিবা পরিচয়ে কথা বলেন, অন্য কেউ। একই প্রসঙ্গে উম্মে হাবিবার বাবা মোস্তাক আরেফিনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনিও গণমাধ্যমে কথা বলতে নারাজ। গণমাধ্যম পরিচয় পেয়ে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে কল দিলেও আর রিসিভ করেনি।

অর্থ আত্মসাত প্রসঙ্গে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন এবিষয়ে বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোন প্রলোভনে উম্মে হাবিবা এসব বলছে, জানি না। আগে কিন্তু এসব বলেনি। বর্তমানে আমার ফোন তিনি ধরছেন না। তার বাবাও ফোন ধরছেন না। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণই মিথ্যা। আমাকে নিয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি নির্দোষ।

আরও বলেন, উম্মে হাবিবার নামে ফাস্ট ক্যাপিটালে বিও হিসাব করা হয়েছে। সেই বিওতে শেয়ার বিক্রি করে উনার মালিবাগ শাখার সাউথইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা গেছে। অ্যাকাউন্টের অর্থ সেই তুলতে পারবেন। সে বলতে পারবেন অর্থ কোথায় আছে।

উম্মে হাবিবার পক্ষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, স্বামী রফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর উম্মে হাবিবা নানান জটিলতায় সময় পাড় করছেন। এর মধ্যেও মৃত স্বামীকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের আপত্তিকর কথা বলাবলি হচ্ছে। শেয়ার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত বিষয়টিতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে তিনি। যদিও অর্থ আত্মসাত বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বিএসইসি। এনিয়ে তদন্ত কমিটিও হয়েছে। এক মাস পার হলেও অর্থ আত্মসাত বিষয়ে বিএসইসি থেকে কোন সমাধান আসছে। সবকিছু মিলিয়ে আর্থিক ও মানষিক ভাবে কষ্টে রয়েছেন। তাই এখন অনেক কিছুই এড়িয়ে যাচ্ছেন উম্মে হাবিবা।

একই প্রসঙ্গে সোমবার বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম মুঠোফোনে বিজনেস আওয়ারকে বলেন, মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের মৃত পরিচালক রফিকুল ইসলামের শেয়ার বিক্রি করে ওই অর্থ আত্মসাতের দুই অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ দুইটি দিয়েছেন উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন। তার শেষ অভিযোগে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডির কবির হোসেনের বিরুদ্ধে ছিল। সবকিছুই খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। শেষ হলে আত্মসাত কিভাবে হয়েছে, বেড়িয়ে আসবে। আরও বলেন, তদন্ত কবে শেষ হবে, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। অনেক তদন্ত খুব অল্প সময়ে রিপোর্ট বেরিয়ে আছে। আবার অনেক অভিযোগের তদন্ত অনেক সময় লাগে।

একই বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, অর্থ আত্মসাতের দুইটি অভিযোগ ডিএসইতেও এসেছে। প্রথম দফায় অভিযোগ ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থাকলেও পরের অভিযোগ ছিল মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিরুদ্ধে। বিষয়টি জটিল। আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

এদিকে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের শেয়ার বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুনের দিকে প্রথমে তীর ছুড়েছিলেন বিনিয়োগকারী উম্মে হাবিবা। ওইসময় তিনি বলেন, আমার সঙ্গে অশোভন আচরন করেছে সিইও কাওসার আল মামুন। শেয়ার বিক্রয়ের তার প্রাপ্ত অর্থ ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি, আমার পরিচয় নিয়ে সন্দেহ ও অশোভন আচরনের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুলাই বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে ওইচিঠি দিয়েছিলো। একই অভিযোগ পত্র ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন পর ভুল বুঝতে পেরে ৩০ জুলাই বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে আরেক অভিযোগের তীর উল্টো দিকে আসলো। ওই অভিযোগে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির হোসেনের দিকে তীর ছুড়েন।

ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগকারী উম্মে হাবিবা জানিয়েছেন তিনি অভিযোগ করেননি। তাঁর নাম ব্যবহার করে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন চক্র এ অভিযোগ দিয়েছে। আরও বলেন, উম্মে হাবিবার পাসপোর্ট, নিকাহনামা দেখে আমি তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। উম্মে হাবিবার আগের স্বামী ছিলেন মোকাদ্দেম হোসাইন। তাদের তালাকের কাগজপত্র আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তীতে তিনিই মৃত রফিকুল ইসলামকে বিয়ে করেন। উম্মে হাবিবাই রফিকুল ইসলামের শেয়ারের উত্তরাধিকারী। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে, প্রকৃত মালিককে শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া।

উল্লেখ্য রফিকুল ইসলাম গত বছরের (২০২২ সাল) ১৫ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি মাস্টার ফিডের পরিচালক ছিলেন। তাঁর কাছে কোম্পানির ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ছিল, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৯ কোটি টাকা। বর্তমানে রফিকুল ইসলামের শেয়ার আত্নসাতের ষড়যন্ত্র চলছে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৭ আগস্ট,২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

হাবিবার অর্থ কবিরের পকেটে!

পোস্ট হয়েছে : ০৬:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে এসএমই সেক্টরে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের মৃত পরিচালক রফিকুল ইসলামের শেয়ার বিক্রি করে ওই অর্থ আত্মসাতের রহস্য আরও দ্রবীভূত হচ্ছে। ওই পরিমান অর্থ আত্মসাত বিষয়টি নিয়ে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) একে অপরকে দোষারোপ করেছে। সব ভূল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ওই অর্থ আত্মসাতের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি কবির হোসেনের দিকে শেষ তীর ছুড়লেন বিনিয়োগকারী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন (উম্মে হাবিবা)। যদিও এ প্রসঙ্গে কবির হোসেন বলেন, আমাকে নিয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি নির্দোষ।

অপরদিকে অভিযোগের পর এক মাস পার হলেও এবিষয়ে কোন সুরাহা করতে পাচ্ছে না বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে, নেই তার সময় সীমা। এতে করে তৈরি হচ্ছে নানা রকমের জটিলতা।

মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের শেয়ার বিক্রির ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২৪ জুলাই মৃত পরিচালকের স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন (উম্মে হাবিবা) প্রথম দফায় সন্দেহের তীর ছুড়ে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে। উম্মে হাবিবা সিকিউরিটিজটির একজন বিনিয়োগকারী (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স)। এবিষয়ে অভিযোগ চিঠি আকারে বিএসইসিতে দেন তিনি।

পরবর্তীতে উম্মে হাবিবা তার ভুল বুঝতে পারেন, যে মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে তার সন্দেহ সঠিক নয়। এ ব্যাপারে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি কবির হোসেন তাকে ভুল বুঝিয়েছে। অনেকটা বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্য দিকে ধাবিত করেছেন। এও জানান, বিএসইসিতে ফাস্ট ক্যাপিটালের সিইওর নামে কোন অভিযোগ দেইনি তিনি। তার নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি শেয়ার আত্মসাত করেছেন। তার প্রমাণ আছে। নির্দ্বিধায় জানান, মাস্টার ফিডের শেয়ার বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের মাস্টার মাইন্ড কোম্পানির এমডি নিজেই। ফলে ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফায় অভিযোগের সঠিক তীর ছুড়েন মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডি কবির হোসেনের বিরুদ্ধে। এরপর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে চিঠি বিএসইসি দিয়েছেন উম্মে হাবিবা।

দুই দফায় অভিযোগকালে বিনিয়োগকারী উম্মে হাবিবা গণমাধ্যমে কথা বললেও এখন কথা বলতে নারাজ। অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন। তার মুঠোফোনে কল করলে গণমাধ্যম পরিচয় দিলে কল কেটে দেন। পূনরায় কল করলে রিসিভ করেন না। একবার এমনও হয়েছে মুঠোফোনে উম্মে হাবিবা পরিচয়ে কথা বলেন, অন্য কেউ। একই প্রসঙ্গে উম্মে হাবিবার বাবা মোস্তাক আরেফিনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনিও গণমাধ্যমে কথা বলতে নারাজ। গণমাধ্যম পরিচয় পেয়ে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে কল দিলেও আর রিসিভ করেনি।

অর্থ আত্মসাত প্রসঙ্গে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন এবিষয়ে বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোন প্রলোভনে উম্মে হাবিবা এসব বলছে, জানি না। আগে কিন্তু এসব বলেনি। বর্তমানে আমার ফোন তিনি ধরছেন না। তার বাবাও ফোন ধরছেন না। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণই মিথ্যা। আমাকে নিয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি নির্দোষ।

আরও বলেন, উম্মে হাবিবার নামে ফাস্ট ক্যাপিটালে বিও হিসাব করা হয়েছে। সেই বিওতে শেয়ার বিক্রি করে উনার মালিবাগ শাখার সাউথইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা গেছে। অ্যাকাউন্টের অর্থ সেই তুলতে পারবেন। সে বলতে পারবেন অর্থ কোথায় আছে।

উম্মে হাবিবার পক্ষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, স্বামী রফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর উম্মে হাবিবা নানান জটিলতায় সময় পাড় করছেন। এর মধ্যেও মৃত স্বামীকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের আপত্তিকর কথা বলাবলি হচ্ছে। শেয়ার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত বিষয়টিতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে তিনি। যদিও অর্থ আত্মসাত বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বিএসইসি। এনিয়ে তদন্ত কমিটিও হয়েছে। এক মাস পার হলেও অর্থ আত্মসাত বিষয়ে বিএসইসি থেকে কোন সমাধান আসছে। সবকিছু মিলিয়ে আর্থিক ও মানষিক ভাবে কষ্টে রয়েছেন। তাই এখন অনেক কিছুই এড়িয়ে যাচ্ছেন উম্মে হাবিবা।

একই প্রসঙ্গে সোমবার বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম মুঠোফোনে বিজনেস আওয়ারকে বলেন, মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের মৃত পরিচালক রফিকুল ইসলামের শেয়ার বিক্রি করে ওই অর্থ আত্মসাতের দুই অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ দুইটি দিয়েছেন উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন। তার শেষ অভিযোগে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের এমডির কবির হোসেনের বিরুদ্ধে ছিল। সবকিছুই খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। শেষ হলে আত্মসাত কিভাবে হয়েছে, বেড়িয়ে আসবে। আরও বলেন, তদন্ত কবে শেষ হবে, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। অনেক তদন্ত খুব অল্প সময়ে রিপোর্ট বেরিয়ে আছে। আবার অনেক অভিযোগের তদন্ত অনেক সময় লাগে।

একই বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, অর্থ আত্মসাতের দুইটি অভিযোগ ডিএসইতেও এসেছে। প্রথম দফায় অভিযোগ ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থাকলেও পরের অভিযোগ ছিল মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিরুদ্ধে। বিষয়টি জটিল। আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

এদিকে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের শেয়ার বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুনের দিকে প্রথমে তীর ছুড়েছিলেন বিনিয়োগকারী উম্মে হাবিবা। ওইসময় তিনি বলেন, আমার সঙ্গে অশোভন আচরন করেছে সিইও কাওসার আল মামুন। শেয়ার বিক্রয়ের তার প্রাপ্ত অর্থ ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি, আমার পরিচয় নিয়ে সন্দেহ ও অশোভন আচরনের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুলাই বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে ওইচিঠি দিয়েছিলো। একই অভিযোগ পত্র ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন পর ভুল বুঝতে পেরে ৩০ জুলাই বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে আরেক অভিযোগের তীর উল্টো দিকে আসলো। ওই অভিযোগে মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির হোসেনের দিকে তীর ছুড়েন।

ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও কাউসার আল মামুন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগকারী উম্মে হাবিবা জানিয়েছেন তিনি অভিযোগ করেননি। তাঁর নাম ব্যবহার করে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন চক্র এ অভিযোগ দিয়েছে। আরও বলেন, উম্মে হাবিবার পাসপোর্ট, নিকাহনামা দেখে আমি তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। উম্মে হাবিবার আগের স্বামী ছিলেন মোকাদ্দেম হোসাইন। তাদের তালাকের কাগজপত্র আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তীতে তিনিই মৃত রফিকুল ইসলামকে বিয়ে করেন। উম্মে হাবিবাই রফিকুল ইসলামের শেয়ারের উত্তরাধিকারী। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে, প্রকৃত মালিককে শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া।

উল্লেখ্য রফিকুল ইসলাম গত বছরের (২০২২ সাল) ১৫ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি মাস্টার ফিডের পরিচালক ছিলেন। তাঁর কাছে কোম্পানির ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ছিল, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৯ কোটি টাকা। বর্তমানে রফিকুল ইসলামের শেয়ার আত্নসাতের ষড়যন্ত্র চলছে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৭ আগস্ট,২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: