ঢাকা , শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রফতানির আড়ালে পাচার ৩০০ কোটি টাকা

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 3

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : দশ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ফ্রান্স, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, কানাডা, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে পোশাক রফতানির আড়ালে ওই পরিমান অর্থ পাচার করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

সোমবার দুপুরে তথ্যটি নিশ্চিত করেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক শামসুল আরেফিন। আরও বলেন, অর্থ পাচারের উল্লেখিত ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকার ৭টি, গাজীপুরের ২টি ও সাভারের ১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ২৩৪টি পণ্য চালানে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন জালিয়াতি করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, অর্থ পাচারের সাথে জড়িত দশ প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, থ্রি স্ট্রার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার, স্টাইলজ বিডি, ইডেন স্টাইল টেক্স, পিক্সি নিট ওয়্যারস, হংকং ফ্যাশনস এবং প্রজ্ঞা ফ্যাশন।প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট প্রভৃতি পণ্য উল্লেখিত দেশে জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচার করে। যা বাংলাদেশি ৩০০ কোটি টাকা। প্রতি ডলার ধরা হয়েছে ৮৪ টাকা ৮২ পয়সা।

তদন্তে বলা হয়েছে, রপ্তানিকৃত পণ্যের প্রতি পিসের ওজন দেখানো হয়েছে ৫শ/৮শ/এক হাজার গ্রাম বা তারও বেশি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে প্রতি কেজি নিট ফেব্রিক্স দিয়ে কমপক্ষে ৩ থেকে ৬টি লং হাতা আই সাইজ টি-শার্ট হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় প্রতিটি টি-শার্টের গড় ওজন ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম ধরে রপ্তানিকৃত টি শার্টের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু কিছু পণ্য চালানে রপ্তানি পণ্যের মূল্য খুবই কম ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সমসাময়িক রপ্তানি চালানের সমজাতীয় পণ্যের মূল্য বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্য রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট বিল অব এক্সপোর্টে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। এছাড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিক লেনদেনে বিশেষ রপ্তানির জন্য প্রযোজ্য কোড ২০ ব্যবহার করেছে, অথচ তাদের কারো ক্ষেত্রেই ওই সিপিসি কোড প্রযোজ্য নয়। সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পারিক সহযোগিতা ও যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা পাচার করে। ইএক্সপির কার্যকারিতা না থাকায় বৈধ পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই । এর মানে দাঁড়ায় এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং হয়েছে। উল্লিখিত ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জানা যায়, সাভার আশুরিয়ায় প্রজ্ঞা ফ্যাশন নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে ৩৮৩টি এবং ২০২০ সালে ৮টি সহ ৩৯১টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির চালানগুলোতে ৩ হাজার ৮০ মে.টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৯২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৪৫ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত চট্টগ্রামের সি এন্ড এফ এজেন্ট, এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জে জে এসোসিয়েটস ও এক্সপ্রেস ফরোয়ার্ডারস।

রাজধানীর গুলশানে ফ্যাশন ট্রেড নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৭৩টি, ২০১৯ সালে ১১৬টি, ২০১৮ সালে ৫৭টি সহ ২৪৬ টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির চালানগুলোতে ১৭৭৯ মে.টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ফলিপাইন, নাইজরোয়া, সঙ্গিাপুর, অস্ট্রলেয়িা, থাইল্যান্ড, সুদান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৩৬ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

রাজধানীর উত্তরায় এম ডি এস ফ্যাশন নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১৮২টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ১ হাজার ৩৭৬ মে. টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও ফিলিপাইন রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৪৪ কোটি ১ হাজার ৫৫১ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী।

গাজীপুরের টঙ্গিতে হংকং ফ্যাশনস নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ১৫৬টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির চালানগুলোতে ১১৬১ মে.টন টি-শার্ট পন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৪০ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী, পরাগ এসএমএস, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স এ কে এন্টারপ্রাইজ।

রাজধানীর বনানীতে থ্রি-স্টার ট্রেডিং নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১২০টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ৮১৬ মে. টন টি-শার্ট পন্য মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, কানাডা, মিসর প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ৮৬৯ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী, কে আর এস সি এন্ড এফ ও এ এন্ড ঞ্জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

রাজধানীর মিরপুরে ফরচুন ফ্যাশন নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ৫৯টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ৪৩৫ মে. টন টি-শার্ট পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, মিশর, কানাডা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৩ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এম/ এস এ. কে এন্টারপ্রাইজ।

ঢাকার কচুক্ষেতে অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৪২টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ১৯৫ মে. টন টি-শার্ট পন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০৩ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট পান বেঙ্গল এজেন্সী, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জে জে এসোসিয়েট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, এন এইচ কর্পোরেশন।

গাজীপুরের টঙ্গিতে পিক্সি নিট ওয়্যারস নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ২০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ১৭০ মে.টন টি-শার্ট পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, ফিলিপাইনস, নাইজেরিয়া, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৪১ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, এন এইচ কর্পোরেশন।

ঢাকার শাহবাগে স্টাইলাইজ বিডির নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত পণ্য চালানগুলোতে ৬৬.৮ মে.টন টি-শার্ট পণ্য ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৯০২ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী, কে আর এস সি এন্ড এফ।

ঢাকার খিলক্ষেতে ইডেন স্টাইল টেক্স নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৮টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ৪২ মে.টন টি-শার্ট পণ্য টোঙ্গা, ওমান, রুনাই, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা।প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী এবং কে আর এস সি এন্ড এফ।

বিজনেস আওয়ার/৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

রফতানির আড়ালে পাচার ৩০০ কোটি টাকা

পোস্ট হয়েছে : ০১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : দশ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ফ্রান্স, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, কানাডা, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে পোশাক রফতানির আড়ালে ওই পরিমান অর্থ পাচার করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

সোমবার দুপুরে তথ্যটি নিশ্চিত করেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক শামসুল আরেফিন। আরও বলেন, অর্থ পাচারের উল্লেখিত ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকার ৭টি, গাজীপুরের ২টি ও সাভারের ১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ২৩৪টি পণ্য চালানে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন জালিয়াতি করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, অর্থ পাচারের সাথে জড়িত দশ প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, থ্রি স্ট্রার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার, স্টাইলজ বিডি, ইডেন স্টাইল টেক্স, পিক্সি নিট ওয়্যারস, হংকং ফ্যাশনস এবং প্রজ্ঞা ফ্যাশন।প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট প্রভৃতি পণ্য উল্লেখিত দেশে জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচার করে। যা বাংলাদেশি ৩০০ কোটি টাকা। প্রতি ডলার ধরা হয়েছে ৮৪ টাকা ৮২ পয়সা।

তদন্তে বলা হয়েছে, রপ্তানিকৃত পণ্যের প্রতি পিসের ওজন দেখানো হয়েছে ৫শ/৮শ/এক হাজার গ্রাম বা তারও বেশি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে প্রতি কেজি নিট ফেব্রিক্স দিয়ে কমপক্ষে ৩ থেকে ৬টি লং হাতা আই সাইজ টি-শার্ট হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় প্রতিটি টি-শার্টের গড় ওজন ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম ধরে রপ্তানিকৃত টি শার্টের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু কিছু পণ্য চালানে রপ্তানি পণ্যের মূল্য খুবই কম ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সমসাময়িক রপ্তানি চালানের সমজাতীয় পণ্যের মূল্য বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্য রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট বিল অব এক্সপোর্টে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। এছাড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিক লেনদেনে বিশেষ রপ্তানির জন্য প্রযোজ্য কোড ২০ ব্যবহার করেছে, অথচ তাদের কারো ক্ষেত্রেই ওই সিপিসি কোড প্রযোজ্য নয়। সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পারিক সহযোগিতা ও যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা পাচার করে। ইএক্সপির কার্যকারিতা না থাকায় বৈধ পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই । এর মানে দাঁড়ায় এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং হয়েছে। উল্লিখিত ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জানা যায়, সাভার আশুরিয়ায় প্রজ্ঞা ফ্যাশন নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে ৩৮৩টি এবং ২০২০ সালে ৮টি সহ ৩৯১টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির চালানগুলোতে ৩ হাজার ৮০ মে.টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৯২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৪৫ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত চট্টগ্রামের সি এন্ড এফ এজেন্ট, এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জে জে এসোসিয়েটস ও এক্সপ্রেস ফরোয়ার্ডারস।

রাজধানীর গুলশানে ফ্যাশন ট্রেড নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৭৩টি, ২০১৯ সালে ১১৬টি, ২০১৮ সালে ৫৭টি সহ ২৪৬ টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির চালানগুলোতে ১৭৭৯ মে.টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ফলিপাইন, নাইজরোয়া, সঙ্গিাপুর, অস্ট্রলেয়িা, থাইল্যান্ড, সুদান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৩৬ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

রাজধানীর উত্তরায় এম ডি এস ফ্যাশন নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১৮২টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ১ হাজার ৩৭৬ মে. টন টি-শার্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও ফিলিপাইন রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৪৪ কোটি ১ হাজার ৫৫১ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী।

গাজীপুরের টঙ্গিতে হংকং ফ্যাশনস নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ১৫৬টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির চালানগুলোতে ১১৬১ মে.টন টি-শার্ট পন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৪০ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী, পরাগ এসএমএস, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স এ কে এন্টারপ্রাইজ।

রাজধানীর বনানীতে থ্রি-স্টার ট্রেডিং নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১২০টি রপ্তানি চালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ৮১৬ মে. টন টি-শার্ট পন্য মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, কানাডা, মিসর প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ৮৬৯ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী, কে আর এস সি এন্ড এফ ও এ এন্ড ঞ্জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

রাজধানীর মিরপুরে ফরচুন ফ্যাশন নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ৫৯টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ৪৩৫ মে. টন টি-শার্ট পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, মিশর, কানাডা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৩ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এম/ এস এ. কে এন্টারপ্রাইজ।

ঢাকার কচুক্ষেতে অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৪২টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ১৯৫ মে. টন টি-শার্ট পন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০৩ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট পান বেঙ্গল এজেন্সী, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জে জে এসোসিয়েট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, এন এইচ কর্পোরেশন।

গাজীপুরের টঙ্গিতে পিক্সি নিট ওয়্যারস নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ২০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ১৭০ মে.টন টি-শার্ট পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, ফিলিপাইনস, নাইজেরিয়া, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৪১ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, এন এইচ কর্পোরেশন।

ঢাকার শাহবাগে স্টাইলাইজ বিডির নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত পণ্য চালানগুলোতে ৬৬.৮ মে.টন টি-শার্ট পণ্য ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৯০২ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী, কে আর এস সি এন্ড এফ।

ঢাকার খিলক্ষেতে ইডেন স্টাইল টেক্স নামীয় প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৮টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকৃত চালানগুলোতে ৪২ মে.টন টি-শার্ট পণ্য টোঙ্গা, ওমান, রুনাই, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্য চালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা।প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী এবং কে আর এস সি এন্ড এফ।

বিজনেস আওয়ার/৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: