শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করেও বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নামে সংগঠন করে সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন এ.কে.এম মিজানুর রশীদ চৌধুরী। যিনি শেয়ারবাজারে মন্দাবস্থা দেখা দিলেই রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিংশ্ব হয়ে গেছেন, রাস্তার ফকির হয়ে গেছেন, বিভিন্ন জনের পদত্যাগ চাই ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করেন। অথচ শেয়ারবাজারে নিজের বিনিয়োগ মাত্র বেক্সিমকো লিমিটেডের ২০০ শেয়ার বা ৩ হাজার টাকা। এই বিনিয়োগ সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এমনটি করেন বলে দাবি করা হলেও এর পেছনে দূরভীসন্ধি নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন রয়েছে।
শেয়ারবাজারে ইস্যুতে মিজানুর রশীদ রাস্তায় নামলেও তাতে বিনিয়োগকারীদের সাড়া থাকে না। দেশে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষ হলেও ওই বিক্ষোভ এবং মানববন্ধনে ১০-১৫ জনের বেশি হয় না। তারপরেও নামধারী কয়েকজন বিনিয়োগকারীকে নিয়ে তিনি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যান। পুলিশি বাধা, সাধারন ডায়েরী (জিডি) ইত্যাদি তোয়াক্কা করেন না। এক্ষেত্রে তার তথা ঐক্য পরিষদের পেছনে একটি চক্র কাজ করে বলে বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ আছে। যারা শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য মিজানুর রশীদ চৌধুরীকে সামনে রেখে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে মিজানুর রশীদ ব্যক্তি স্বার্থে তাদের হয়ে কাজ করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। তবে শেয়ারবাজারে নামমাত্র বিনিয়োগ সেই সন্দেহকে প্রমাণিত করেছে বলে দাবি বাজার সংশ্লিষ্টদের।
এই দুই বিও হিসাবে মিজানুর রশীদ চৌধুরীর কোন শেয়ার নেই-
![](https://businesshour24.com/wp-content/uploads/2020/05/Mizan1-1024x768.jpg)
এ বিষয়ে মিজানুর রশীদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কারো পোর্টফোলিওতে ১টি শেয়ার থাকলেও সে বিনিয়োগকারী। আমার পোর্টফোলিওতে ২০০ শেয়ার আছে। তাই আমাকে আইনগতভাবে বিনিয়োগকারী না বলার সুযোগ নেই। তারপরেও একটি গোষ্ঠি আমাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে আমার সংগঠনের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ডিএসই ২০১৫ সাল থেকে আমার পোর্টফোলিও নিয়মিতভাবে চেক করে। তারা বিএসইসির নির্দেশনায় এ কাজটি করে থাকে। একসময় আমি যে কোম্পানিরই শেয়ার কিনতাম, একটি চক্র কৃত্রিমভাবে সেই শেয়ারের দামই ফেলে দিত। এতে আমার অনেক লোকসান হয়েছে। যে কারনে আমি সব শেয়ার থেকে বেরিয়ে গেছি।
রাস্তায় বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ ও মিছিল নিয়ে অনেক আগেই প্রশ্ন তুলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ১০-২০ জন বিনিয়োগকারী দিয়ে বিক্ষোভ করানোর নেপথ্যে নায়ক রয়েছে। যাদের শেয়ারবাজারে কোন ভূমিকা নেই। এরা অযৌক্তিক কারনে রাস্তায় নেমে মিছিল করে। এরা দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন কারনে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও মিছিল করে কমিশনের বিরুদ্ধে। এদের দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে মিছিল করানো হয়। এর নেপথ্য নায়কেরা তাদের রাস্তায় নামায়।
মিজানুর রশীদ চৌধুরীর বর্তমানে ৩টি বেনিফিশয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। এরমধ্যে আজম সিকিউরিটিজে ২টি ও হাবিবুর সিকিউরিটিজে ১টি বিও হিসাব রয়েছে। এরমধ্যে আজম সিকিউরিটিজে ২টি বিও খোলার ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন মিজানুর রশীদ। একই ব্রোকারেজ হাউজে একাধিক বিও খোলার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা থাকায়, সে নামের বানানে পার্থক্য দিয়েছে। এক্ষেত্রে একটি হিসাবে নাম দিয়েছেন A.K.M MIIZAN-UR RASHID CHOWDHURY এবং অপরটিতে AKM MIZAN UR RASHID CHOWDHURY। এই দুই বানানে রয়েছে সামান্য পার্থক্য।
এদিকে নিজের নামের পাশাপাশি বাবা মায়ের নামও পরিবর্তন করেছেন। একটিতে বাবার নাম হিসাবে ALHAZ LAKIUT ULLAH CHY এবং অপরটিতে AL-HAJ LAKI UTULLAH ব্যবহার করেছেন। আর মায়ের নামের ক্ষেত্রে HAJRA KHATUN CHOWDHURY এবং HAZRA BEGUM CHOWDHURY ব্যবহার করেছেন।
মিজানের ৩টি বিও হিসাবের মধ্যে ২টিতে কোন বিনিয়োগ নেই। আজম সিকিউরিটিজে তার ১২০৩০৬০০২৭৩১৩২৫৬ নম্বরের বিও হিসাবে মাত্র ২০০ বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কেনা রয়েছে। যেগুলোর বাজার দর মাত্র ৩ হাজার ৮০ টাকা।
এই বিও হিসাবে মিজানুর রশীদ চৌধুরীর শুধুমাত্র ২০০ শেয়ার রয়েছে-
![](https://businesshour24.com/wp-content/uploads/2020/05/Mizan2-1024x768.jpg)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজার বিশ্লেষক বিজনেস আওয়ারকে বলেন, মিজানুর রশীদরা মূলত বিনিয়োগকারী না। এরা কয়েকজন মিলে শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে থাকে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা ওইসব কর্মসূচী পালন করে। যারা সরকারকে বিব্রত করতে চায়। যদিও বিনিয়োগকারীরা তাদের কর্মসূচীতে সাড়া দেয় না, তারপরেও ভবিষ্যতে তাদের থেকে সকল বিনিয়োগকারীকে সাবধান থাকতে হবে।
এদিকে মিজানুর রশীদদের অযৌক্তিক কর্মকান্ডে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় মতিঝিল থানায় গত ২৭ আগস্ট সাধারন ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য হয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। ওইসব বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের কারনে ডিএসইর সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত ও অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যঘাত ঘটে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। যার বেশ কিছুদিন যাবত এ বিক্ষোভ করে আসছে। এছাড়া শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্মানহানিকর মন্তব্য করে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
জিডিতে আরও বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের এ ধরনের কার্যকলাপ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ শেয়াবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ফলে বিদেশীরা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় জাতীয় ও জনস্বার্থে এবং শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে মতিঝিল থানার অফিসার ইনচার্জকে করণীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জিডিতে অনুরোধ করা হয়।
বিজনেস আওয়ার/১৯ নভেম্বর, ২০১৯/আরএ
3 thoughts on “বিনিয়োগকারীদের নেতা মিজানের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ মাত্র ৩ হাজার টাকা”