ঢাকা , শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁস : আরো ৬ চিকিৎসক গ্রেফতার

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 4

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চলমান অভিযানে আবারো মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ও ছয় ডাক্তারসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রোববার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূল হোতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার টিম।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডি সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদুর রহমান।

গ্রেফতার সাতজন হলেন মাকসুদা আক্তার মালা (৫২), ডা. কে এম বশিরুল হক (৪৮), ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু (৩৩), জাকিয়া ফারইভা ইভানা (৩৫), সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী (২৫), জাকারিয়া আশরাফ (২৬) ও মৈত্রী সাহা (২৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জব্দ করে।

সিআইডি জানায়, গ্রেফতার মাকসুদা আক্তার মালা ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা। ২০১৫ সালে নিজের মেয়ে ইকরাসহ আরো সাতজন শিক্ষার্থীকে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যালে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন।

গ্রেফতার ডা. কে এম বশিরুল হক ‘থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার’-এর পরিচালক।

দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সাথে জড়িত তিনি। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। গ্রেফতারকৃত একাধিক আসামির সিআরপিসি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে ডা. বশিরুল হকের নাম রয়েছে। এ ছাড়াও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীমের গোপন ডায়েরিতে নাম রয়েছে।

গ্রেফতার ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন মেডিক্যাল অফিসার। ২০১৫ সালে ১০ জন শিক্ষার্থীকে ফাঁসকৃত প্রশ্ন পড়িয়েছেন। এদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন মেডিক্যালে চান্স পায়।

জাকিয়া ফারইভা ইভানা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ডা. ইভানা ২০০৬-০৭ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ৬০তম স্থান অর্জন করেন।

মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূল হোতা ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধানের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পান।

গ্রেফতার সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তার অভিযুক্ত ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে চান্স পায়। এ ছাড়া গ্রেপ্তার জাকারিয়া আশরাফ ও মৈত্রী সাহা ২০১৫-১৬ সেশনের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী। এ দুজনও অভিযুক্ত ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পায়।

গ্রেফতারদেরকে মিরপুর মডেল থানার চলতি বছরের ২০ জুলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২২(২)/৩৩(২) তৎসহ পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর ৪/১৩ এর আওতায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ৩০ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত ১২ ডাক্তারসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের মধ্যে ১০ জন মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার আসামিদের কাছে থেকে মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্য ও মেডিক্যাল প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া অনেক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এ ছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁস : আরো ৬ চিকিৎসক গ্রেফতার

পোস্ট হয়েছে : ০৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চলমান অভিযানে আবারো মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ও ছয় ডাক্তারসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রোববার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূল হোতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার টিম।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডি সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদুর রহমান।

গ্রেফতার সাতজন হলেন মাকসুদা আক্তার মালা (৫২), ডা. কে এম বশিরুল হক (৪৮), ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু (৩৩), জাকিয়া ফারইভা ইভানা (৩৫), সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী (২৫), জাকারিয়া আশরাফ (২৬) ও মৈত্রী সাহা (২৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জব্দ করে।

সিআইডি জানায়, গ্রেফতার মাকসুদা আক্তার মালা ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা। ২০১৫ সালে নিজের মেয়ে ইকরাসহ আরো সাতজন শিক্ষার্থীকে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যালে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন।

গ্রেফতার ডা. কে এম বশিরুল হক ‘থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার’-এর পরিচালক।

দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সাথে জড়িত তিনি। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। গ্রেফতারকৃত একাধিক আসামির সিআরপিসি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে ডা. বশিরুল হকের নাম রয়েছে। এ ছাড়াও প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীমের গোপন ডায়েরিতে নাম রয়েছে।

গ্রেফতার ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন মেডিক্যাল অফিসার। ২০১৫ সালে ১০ জন শিক্ষার্থীকে ফাঁসকৃত প্রশ্ন পড়িয়েছেন। এদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন মেডিক্যালে চান্স পায়।

জাকিয়া ফারইভা ইভানা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ডা. ইভানা ২০০৬-০৭ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ৬০তম স্থান অর্জন করেন।

মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূল হোতা ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধানের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পান।

গ্রেফতার সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তার অভিযুক্ত ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে চান্স পায়। এ ছাড়া গ্রেপ্তার জাকারিয়া আশরাফ ও মৈত্রী সাহা ২০১৫-১৬ সেশনের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী। এ দুজনও অভিযুক্ত ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পায়।

গ্রেফতারদেরকে মিরপুর মডেল থানার চলতি বছরের ২০ জুলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২২(২)/৩৩(২) তৎসহ পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর ৪/১৩ এর আওতায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ৩০ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত ১২ ডাক্তারসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের মধ্যে ১০ জন মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার আসামিদের কাছে থেকে মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্য ও মেডিক্যাল প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া অনেক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এ ছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: