ঢাকা , শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তওবা যেভাবে মানুষকে পবিত্র করে

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩
  • 2

ধর্ম ডেস্ক: তওবা মানুষের জীবনকে পবিত্র করে। মনেপ্রাণে তওবাকারী সব পাপ ধুয়েমুছে নিষ্পাপ শিশুর মতো নিষ্কলুষ হয়ে যায়। কোরআন ও হাদিসে মুসলিম জাতিকে বারবার তওবা ও ইস্তেগফারের কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাদেরও ভালোবাসেন যারা পবিত্র থাকে।’ -(সুরা বাকারা, আয়াত, ২২২)

হজরত আবু নুজাইদ ইমরান ইবনে হুসাইন আল-খুযায়ী থেকে বর্ণিত, একবার জুহাইনাহ গোত্রের একজন নারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি কাছে এলেন। তিনি গর্ভবতী ছিলেন, জেনার কারণে তার গর্ভে এই সন্তান এসেছিলো। তবে এই নারী তার কৃতকর্মের কারণে লজ্জিত ছিল। তিনি তার পাপ সম্পর্কে বুঝতে পারার পর তওবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন।

তিনি আল্লাহর রাসূলের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ (শরীয়ত নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি) এর উপযোগী হয়েছি। আমার ওপর তা কার্যকর করুন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার ওপর শরীয়ত নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি আরোপ করতে অনুরোধ করলেন। এখানে হদ্দ বলতে রজমকে (ইসলামি বিধানমতে পাথর মেরে মৃত্যু) বুঝানো হয়েছে; কারণ, সেই নারী বিবাহিত ছিলেন।

এ কথা জানার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকলেন এবং বললেন, ‘তাকে ভালোভাবে দেখাশুনা কর। এরপর সে যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভালোভাবে দেখাশুনা করার নির্দেশ দেওয়ার কারণ ছিলো- তার ওপর তার আপনজনদের পক্ষ থেকে ক্ষতির আশংকা ছিল। কারণ, তার জন্যে তাদের কলঙ্ক লেগেছে, ফলে তারা নিজেদের আত্মসম্মানবোধ ও লাঞ্ছিত হওয়ার কারণে তাকে কষ্ট দিতে পারত।

এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবকদের বিশেষভাবে সর্তক করে দিয়েছেন, যেন তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা না হয় এবং তার সঙ্গে সদাচারণ করতে বললেন। কারণ, এই নারী তার নিজের পাপাচারের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এবং তওবার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে বলার আরেকটি কারণ ছিলো- এ ধরণের কাজের কারণে মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায় এবং তারা তাকে কষ্টদায়ক কথাবার্তা বলে।

নির্ধারিত সময় পরে সেই নারী সন্তান প্রসব করলেন। সন্তান প্রসবের পর তিনি আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং নিজের পাপের শাস্তি প্রয়োগ করতে বললেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সন্তানের দুধপান শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। সেই নারীর সন্তান দুধ পান ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং নিজের পাপ থেকে তওবার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামি বিধানমতে তার অপরাধের শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিলেন।

শাস্তি বাস্তবায়নের আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শক্তভাবে তার কাপড় বেঁধে নিতে বললেন, যেনো রজমের (শরীয়ত নির্ধারিত বিবাহিত নারীর ব্যভিচারের শাস্তি) সময় তার সতর খুলে না যায়। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হলো।

অবশেষে তিনি মারা গেলেন। শাস্তি কার্যকর শেষে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নারীর জানাজার নামাজ পড়ালেন এবং তার জন্য অন্যান্য মৃত ব্যক্তির মতো দোয়া করলেন।

তখন উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহর রাসূলকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার জানাজার নামাজ পড়লেন, অথচ সে যে জেনা করেছে?’

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জানালেন, ‘এ নারী এমন বিশুদ্ধ তাওবা করেছে, যদি তা মদীনার ৭০টি অপরাধী লোকের মধ্যে ভাগ করা হয় তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তাদের উপকার হবে। কারণ, এই নারী আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবং ব্যভিচারের গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে। এর থেকে মহান আর কী হতে পারে? (মুসলিম শরিফ)

বিজনেস আওয়ার/১১ অক্টোবর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

তওবা যেভাবে মানুষকে পবিত্র করে

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩

ধর্ম ডেস্ক: তওবা মানুষের জীবনকে পবিত্র করে। মনেপ্রাণে তওবাকারী সব পাপ ধুয়েমুছে নিষ্পাপ শিশুর মতো নিষ্কলুষ হয়ে যায়। কোরআন ও হাদিসে মুসলিম জাতিকে বারবার তওবা ও ইস্তেগফারের কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাদেরও ভালোবাসেন যারা পবিত্র থাকে।’ -(সুরা বাকারা, আয়াত, ২২২)

হজরত আবু নুজাইদ ইমরান ইবনে হুসাইন আল-খুযায়ী থেকে বর্ণিত, একবার জুহাইনাহ গোত্রের একজন নারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি কাছে এলেন। তিনি গর্ভবতী ছিলেন, জেনার কারণে তার গর্ভে এই সন্তান এসেছিলো। তবে এই নারী তার কৃতকর্মের কারণে লজ্জিত ছিল। তিনি তার পাপ সম্পর্কে বুঝতে পারার পর তওবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন।

তিনি আল্লাহর রাসূলের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ (শরীয়ত নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি) এর উপযোগী হয়েছি। আমার ওপর তা কার্যকর করুন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার ওপর শরীয়ত নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি আরোপ করতে অনুরোধ করলেন। এখানে হদ্দ বলতে রজমকে (ইসলামি বিধানমতে পাথর মেরে মৃত্যু) বুঝানো হয়েছে; কারণ, সেই নারী বিবাহিত ছিলেন।

এ কথা জানার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকলেন এবং বললেন, ‘তাকে ভালোভাবে দেখাশুনা কর। এরপর সে যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভালোভাবে দেখাশুনা করার নির্দেশ দেওয়ার কারণ ছিলো- তার ওপর তার আপনজনদের পক্ষ থেকে ক্ষতির আশংকা ছিল। কারণ, তার জন্যে তাদের কলঙ্ক লেগেছে, ফলে তারা নিজেদের আত্মসম্মানবোধ ও লাঞ্ছিত হওয়ার কারণে তাকে কষ্ট দিতে পারত।

এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবকদের বিশেষভাবে সর্তক করে দিয়েছেন, যেন তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা না হয় এবং তার সঙ্গে সদাচারণ করতে বললেন। কারণ, এই নারী তার নিজের পাপাচারের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এবং তওবার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে বলার আরেকটি কারণ ছিলো- এ ধরণের কাজের কারণে মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায় এবং তারা তাকে কষ্টদায়ক কথাবার্তা বলে।

নির্ধারিত সময় পরে সেই নারী সন্তান প্রসব করলেন। সন্তান প্রসবের পর তিনি আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং নিজের পাপের শাস্তি প্রয়োগ করতে বললেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সন্তানের দুধপান শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। সেই নারীর সন্তান দুধ পান ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং নিজের পাপ থেকে তওবার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামি বিধানমতে তার অপরাধের শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিলেন।

শাস্তি বাস্তবায়নের আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শক্তভাবে তার কাপড় বেঁধে নিতে বললেন, যেনো রজমের (শরীয়ত নির্ধারিত বিবাহিত নারীর ব্যভিচারের শাস্তি) সময় তার সতর খুলে না যায়। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হলো।

অবশেষে তিনি মারা গেলেন। শাস্তি কার্যকর শেষে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নারীর জানাজার নামাজ পড়ালেন এবং তার জন্য অন্যান্য মৃত ব্যক্তির মতো দোয়া করলেন।

তখন উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহর রাসূলকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার জানাজার নামাজ পড়লেন, অথচ সে যে জেনা করেছে?’

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জানালেন, ‘এ নারী এমন বিশুদ্ধ তাওবা করেছে, যদি তা মদীনার ৭০টি অপরাধী লোকের মধ্যে ভাগ করা হয় তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তাদের উপকার হবে। কারণ, এই নারী আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবং ব্যভিচারের গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে। এর থেকে মহান আর কী হতে পারে? (মুসলিম শরিফ)

বিজনেস আওয়ার/১১ অক্টোবর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: