ঢাকা , শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী নির্বাচন সন্ধ্যা রাতে, না নিশি রাতে সেটাই জনগণের জিজ্ঞাসা : রিজভী

  • পোস্ট হয়েছে : ০৮:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩
  • 8

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ‘নির্বাচনে যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে এবং ৯৯ শতাংশ ভোট না পড়লেও তা আইনগতভাবে বৈধ হবে।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের মনোভাব যদি এমনই হয়, তাহলে আগামী নির্বাচন সন্ধ্যা রাতে হবে নাকি নিশিরাতে সেটাই এখন জনগণের বিরাট জিজ্ঞাসা।

বুধবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী দুঃশাসন গোটা দেশে অন্ধকার নামিয়ে এনেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রাহ্য নির্বাচন হয়নি। সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অনাচারের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দেয়া হবে, বিএনপি’র আন্দোলনের টাকার উৎস খুঁজে বের করতে হবে, তত্ত্বাবধায়কের কথা কেউ বলেনি, প্রতিদিন একটু একটু করে লোডশেডিংয়ের কথা বলেছি। এছাড়াও কেটে দেব, সব আটকিয়ে দেব এগুলো ক্রমাগতভাবে বলেই যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব কথা শুনলে মনে হয়, তিনি বাংলাদেশকে নিজের নামে মৌরসীপাট্টা করে ফেলেছেন। তার বক্তব্যে মনে হয়, বাংলাদেশে সবাই যেন তার প্রজা। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলার অধিকার কারো নেই। যারা বলবে তাদের ঠিকানা হবে কারাগার। এ দেশে শেখ হাসিনার কোনো কিছুতেই কোনো সফলতা না থাকলেও তিনি সার্থকতা লাভ করেছেন কেবলমাত্র গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়ে। তিনি একজন সফল জেলার বা কারারক্ষক। সরকারের অত্যাচার ও লুটতরাজের বিরুদ্ধে কথা বলায় শেখ হাসিনা আরো বেশি ক্রুদ্ধ ও বেপরোয়া হয়ে উঠে নিজের সাজানো আদালতকে লেলিয়ে দেয়। গণতন্ত্রকামী মানুষকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আওয়ামী আদালত জুলুমের ভীতি তৈরি করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান ডিসি-এসপিরা প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছে। যেখানে আমলা, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি সরকারের অনাচারের সহযোগী সেখানে এরা কতটুকু সাধারণ জনগণের পক্ষ নেবে, তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, এক শতাংশ ভোট কাষ্ট হলেই আইনত: বৈধ হবে নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের মনোভাব যদি এ রকমই হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ নির্বাচন সন্ধ্যা রাতে নাকি নিশিরাতে হবে সেটাই জনগণের বিরাট জিজ্ঞাসা। সুতরাং হাসিনার অধীনে সামনে নির্বাচন যে ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন এবং আওয়ামী ক্যাডার গোষ্ঠী সকল ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ যে ফাঁকা করার পরিকল্পনা করেছে, তার আলামত ইতোমধ্যে পরিস্কার হয়ে উঠছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার কোনো তোয়াক্কা করে না শেখ হাসিনা। বর্তমান নির্বাচনী আইন পরিবর্তনের পর কমিশনের ক্ষমতা আছে ২০ শতাংশেরও কম। আর বাকি ৮০ শতাংশ ক্ষমতা সরকারের হাতে। সুতরাং এই নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলকে মাঠছাড়া করার জন্য হিংসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্যই শুরু হয়েছে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের সাঁড়াশি অভিযান। তারা এক তরফা নির্বাচনের জন্য দমবন্ধ করা এক পরিবেশ তৈরি করছে। তারা দেশের ভেন্টিলেশনের ঢাকনা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আন্দোলনরত গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান গণবিরোধী শক্তি আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই-সংগ্রামে বদ্ধপরিকর।

তিনি আরো বলেন, নতুন করে গায়েবি মামলা দিয়ে গভীর রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার হিড়িক শুরু হয়েছে। গতকাল গভীর রাতে পুলিশ বাসার দরজা ভেঙে বিএনপির প্রচার সম্পাদক, মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব, সাবেক সংসদ সদস্য ও লক্ষীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে। এরপর তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এ সময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কতৃর্ক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।

বিজনেস আওয়ার/১১ অক্টোবর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

আগামী নির্বাচন সন্ধ্যা রাতে, না নিশি রাতে সেটাই জনগণের জিজ্ঞাসা : রিজভী

পোস্ট হয়েছে : ০৮:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ‘নির্বাচনে যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে এবং ৯৯ শতাংশ ভোট না পড়লেও তা আইনগতভাবে বৈধ হবে।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের মনোভাব যদি এমনই হয়, তাহলে আগামী নির্বাচন সন্ধ্যা রাতে হবে নাকি নিশিরাতে সেটাই এখন জনগণের বিরাট জিজ্ঞাসা।

বুধবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী দুঃশাসন গোটা দেশে অন্ধকার নামিয়ে এনেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রাহ্য নির্বাচন হয়নি। সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অনাচারের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দেয়া হবে, বিএনপি’র আন্দোলনের টাকার উৎস খুঁজে বের করতে হবে, তত্ত্বাবধায়কের কথা কেউ বলেনি, প্রতিদিন একটু একটু করে লোডশেডিংয়ের কথা বলেছি। এছাড়াও কেটে দেব, সব আটকিয়ে দেব এগুলো ক্রমাগতভাবে বলেই যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব কথা শুনলে মনে হয়, তিনি বাংলাদেশকে নিজের নামে মৌরসীপাট্টা করে ফেলেছেন। তার বক্তব্যে মনে হয়, বাংলাদেশে সবাই যেন তার প্রজা। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলার অধিকার কারো নেই। যারা বলবে তাদের ঠিকানা হবে কারাগার। এ দেশে শেখ হাসিনার কোনো কিছুতেই কোনো সফলতা না থাকলেও তিনি সার্থকতা লাভ করেছেন কেবলমাত্র গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়ে। তিনি একজন সফল জেলার বা কারারক্ষক। সরকারের অত্যাচার ও লুটতরাজের বিরুদ্ধে কথা বলায় শেখ হাসিনা আরো বেশি ক্রুদ্ধ ও বেপরোয়া হয়ে উঠে নিজের সাজানো আদালতকে লেলিয়ে দেয়। গণতন্ত্রকামী মানুষকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আওয়ামী আদালত জুলুমের ভীতি তৈরি করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান ডিসি-এসপিরা প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছে। যেখানে আমলা, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি সরকারের অনাচারের সহযোগী সেখানে এরা কতটুকু সাধারণ জনগণের পক্ষ নেবে, তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, এক শতাংশ ভোট কাষ্ট হলেই আইনত: বৈধ হবে নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের মনোভাব যদি এ রকমই হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ নির্বাচন সন্ধ্যা রাতে নাকি নিশিরাতে হবে সেটাই জনগণের বিরাট জিজ্ঞাসা। সুতরাং হাসিনার অধীনে সামনে নির্বাচন যে ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন এবং আওয়ামী ক্যাডার গোষ্ঠী সকল ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ যে ফাঁকা করার পরিকল্পনা করেছে, তার আলামত ইতোমধ্যে পরিস্কার হয়ে উঠছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার কোনো তোয়াক্কা করে না শেখ হাসিনা। বর্তমান নির্বাচনী আইন পরিবর্তনের পর কমিশনের ক্ষমতা আছে ২০ শতাংশেরও কম। আর বাকি ৮০ শতাংশ ক্ষমতা সরকারের হাতে। সুতরাং এই নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলকে মাঠছাড়া করার জন্য হিংসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্যই শুরু হয়েছে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের সাঁড়াশি অভিযান। তারা এক তরফা নির্বাচনের জন্য দমবন্ধ করা এক পরিবেশ তৈরি করছে। তারা দেশের ভেন্টিলেশনের ঢাকনা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আন্দোলনরত গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান গণবিরোধী শক্তি আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই-সংগ্রামে বদ্ধপরিকর।

তিনি আরো বলেন, নতুন করে গায়েবি মামলা দিয়ে গভীর রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার হিড়িক শুরু হয়েছে। গতকাল গভীর রাতে পুলিশ বাসার দরজা ভেঙে বিএনপির প্রচার সম্পাদক, মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব, সাবেক সংসদ সদস্য ও লক্ষীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে। এরপর তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এ সময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কতৃর্ক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।

বিজনেস আওয়ার/১১ অক্টোবর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: