ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩০ শতাংশ শেয়ারধারনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-বিএসইসি চেয়ারম্যান

  • পোস্ট হয়েছে : ০৭:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারধারন না করার জন্য এরইমধ্যে ১৭ জন পরিচালককে অপসারন করা হয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারনের আল্টিমেটাম দেওয়া সময় শেষের দিকে। এক্ষেত্রেও কঠোর অবস্থান নেবে কমিশন। কারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা এই মার্কেটটাকে শক্তিশালী মার্কেটে রুপান্তর করতে চাই।

সোমবার (০৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান।

আরও পড়ুন….
এখনো ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনে আগ্রহী হয়নি ব্যর্থরা

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে সম্মানের সঙ্গে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারা শেয়ারবাজারের প্রধান অংশ। তবে বাজারের স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী খুবই প্রয়োজন। অনেক চেষ্টা করেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি, তা সেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে।

আজকের অনুষ্ঠানে গেম্বলিং নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন উল্লেখ করে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমরাও অনেক আগে থেকেই গেম্বলিং শব্দটি শুনে আসছি। আসলে এই জিনিসটি সেকেন্ডারি মার্কেট থেকেই শুনে আসছি। ইক্যুইটিভিত্তিক মার্কেটের কারনে সেকেন্ডোরি মার্কেটে গেম্বলিং হয়। তবে বন্ড, ডেরিভিটিবসসহ মার্কেটটাকে সত্যিকার অর্থে বড় করতে পারলে, আজ আমাদেরকে সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হতো না।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে আমরা ৬-৭ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন বন্ডের অনুমোদন দিয়েছি। সেখানে ভালো কোম্পানির বন্ড দেওয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, প্রাণ, আমরার মতো কোম্পানিকে বন্ড অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সামনে আরও ভালো ভালো কোম্পানিকে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সুকুক বন্ড আনার কাজ করছি। সুতরাং ক্রমানয়ে বন্ড মার্কেটটি খুব ইন্টারেস্টিং হয়ে যাবে।

ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি সত্যিই আমাদের জন্য বড় সমস্যা বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। এটা সমাধানে বিআইসিএম এবং বিএএসএমকে শক্তিশালী করার জন্য কমিশন খুবই গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি খুবই দ্রুত বিনিয়োগকারীদের ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে জোড়ালোভাবে কাজ শুরু করবে।

তিনি বলেন, আইপিও নিয়ে অনেকেই কথা বলে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিগত ১-৩ বছরের পুরোনো সব আইপিও জমা ছিল। যে কোম্পানিগুলো বারবার অ্যাকাউন্টস জমা দিচ্ছিল। এতে করে প্রতিবার ৫-২০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু ওইসময়টায় আইপিও দেওয়া হয় নাই। এখন আমরা আইপিও দেই বা না দেই, সেটাতো কোম্পানিগুলোকে জানাতে হবে। এজন্য আমরা যাদের দেওয়ার, তাদের দিয়ে দিচ্ছি। আর অন্যদের বাদ দিয়ে দিচ্ছি। আমরা কোম্পানিগুলোকে আইপিওর জন্য নতুন করে অ্যাকাউন্টস জমা দেওয়াতে চাই না। তারা এরইমধ্যে ১-৫ বার অ্যাকাউন্টস জমা দিয়েছে। আমরা মোটামুটি আইপিও ক্লিয়ার করে নিয়ে আসছি। আশা করছি ১ মাসের মধ্যে পুরোনো সব আইপিও আবেদন ক্লিয়ার করে ফেলব।

তিনি আরও বলেন, বাজারে ভালো পরিবেশ ও সুশাসন থাকলে ভালোরা আসে। অন্যরা তখন আসতে চা্য় না। কারন তারা জানে লাভ হবে না। ওদিকে গেলে আরও সুশাসনের কারনে ঝামেলায় পড়তে হবে। যারা সত্যিকার অর্থে ভালোভাবে কাজ করতে চায়, তারাই আসবে।

বিএসইসির এই চেয়ারম্যান বলেন, ভালো ভালো কোম্পানিকে দ্রুত আইপিও দিয়ে দেব। আমাদেরকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িদের দিক বিবেচনা করতে হবে। যারা ব্যবসা করতে আসেন, তাদের যদি আইপিও দেওয়া বন্ধ করে দেই, তাহলে তারা যাবে কোথায়। তাহলে আবার ব্যাংকে যেতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে হবে। এতে করে ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়বে। একইসঙ্গে অনেক কোম্পানি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হবে।

শেয়ারবাজার বিনিয়োগের ভালো মাধ্যম বলে আশ্বস্ত করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তাই এখানে বিনিয়োগের আহবান করেছেন তিনি। শুধু সেকেন্ডারি মার্কেট তাকিয়ে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রাইমারি মার্কেটে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বলেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শক হুসাইন সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও অধ্যাপক আবু আহমেদ। এতে বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম, কমিশনার ড. মিজানুর রহমান, কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও কমিশনার খোন্দকার কামালউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। আর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

বিজনেস আওয়ার/০৫ অক্টোবর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

৩০ শতাংশ শেয়ারধারনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-বিএসইসি চেয়ারম্যান

পোস্ট হয়েছে : ০৭:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারধারন না করার জন্য এরইমধ্যে ১৭ জন পরিচালককে অপসারন করা হয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারনের আল্টিমেটাম দেওয়া সময় শেষের দিকে। এক্ষেত্রেও কঠোর অবস্থান নেবে কমিশন। কারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা এই মার্কেটটাকে শক্তিশালী মার্কেটে রুপান্তর করতে চাই।

সোমবার (০৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান।

আরও পড়ুন….
এখনো ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনে আগ্রহী হয়নি ব্যর্থরা

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে সম্মানের সঙ্গে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারা শেয়ারবাজারের প্রধান অংশ। তবে বাজারের স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী খুবই প্রয়োজন। অনেক চেষ্টা করেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি, তা সেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে।

আজকের অনুষ্ঠানে গেম্বলিং নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন উল্লেখ করে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমরাও অনেক আগে থেকেই গেম্বলিং শব্দটি শুনে আসছি। আসলে এই জিনিসটি সেকেন্ডারি মার্কেট থেকেই শুনে আসছি। ইক্যুইটিভিত্তিক মার্কেটের কারনে সেকেন্ডোরি মার্কেটে গেম্বলিং হয়। তবে বন্ড, ডেরিভিটিবসসহ মার্কেটটাকে সত্যিকার অর্থে বড় করতে পারলে, আজ আমাদেরকে সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হতো না।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে আমরা ৬-৭ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন বন্ডের অনুমোদন দিয়েছি। সেখানে ভালো কোম্পানির বন্ড দেওয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, প্রাণ, আমরার মতো কোম্পানিকে বন্ড অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সামনে আরও ভালো ভালো কোম্পানিকে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সুকুক বন্ড আনার কাজ করছি। সুতরাং ক্রমানয়ে বন্ড মার্কেটটি খুব ইন্টারেস্টিং হয়ে যাবে।

ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি সত্যিই আমাদের জন্য বড় সমস্যা বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। এটা সমাধানে বিআইসিএম এবং বিএএসএমকে শক্তিশালী করার জন্য কমিশন খুবই গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি খুবই দ্রুত বিনিয়োগকারীদের ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে জোড়ালোভাবে কাজ শুরু করবে।

তিনি বলেন, আইপিও নিয়ে অনেকেই কথা বলে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিগত ১-৩ বছরের পুরোনো সব আইপিও জমা ছিল। যে কোম্পানিগুলো বারবার অ্যাকাউন্টস জমা দিচ্ছিল। এতে করে প্রতিবার ৫-২০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু ওইসময়টায় আইপিও দেওয়া হয় নাই। এখন আমরা আইপিও দেই বা না দেই, সেটাতো কোম্পানিগুলোকে জানাতে হবে। এজন্য আমরা যাদের দেওয়ার, তাদের দিয়ে দিচ্ছি। আর অন্যদের বাদ দিয়ে দিচ্ছি। আমরা কোম্পানিগুলোকে আইপিওর জন্য নতুন করে অ্যাকাউন্টস জমা দেওয়াতে চাই না। তারা এরইমধ্যে ১-৫ বার অ্যাকাউন্টস জমা দিয়েছে। আমরা মোটামুটি আইপিও ক্লিয়ার করে নিয়ে আসছি। আশা করছি ১ মাসের মধ্যে পুরোনো সব আইপিও আবেদন ক্লিয়ার করে ফেলব।

তিনি আরও বলেন, বাজারে ভালো পরিবেশ ও সুশাসন থাকলে ভালোরা আসে। অন্যরা তখন আসতে চা্য় না। কারন তারা জানে লাভ হবে না। ওদিকে গেলে আরও সুশাসনের কারনে ঝামেলায় পড়তে হবে। যারা সত্যিকার অর্থে ভালোভাবে কাজ করতে চায়, তারাই আসবে।

বিএসইসির এই চেয়ারম্যান বলেন, ভালো ভালো কোম্পানিকে দ্রুত আইপিও দিয়ে দেব। আমাদেরকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িদের দিক বিবেচনা করতে হবে। যারা ব্যবসা করতে আসেন, তাদের যদি আইপিও দেওয়া বন্ধ করে দেই, তাহলে তারা যাবে কোথায়। তাহলে আবার ব্যাংকে যেতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে হবে। এতে করে ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়বে। একইসঙ্গে অনেক কোম্পানি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হবে।

শেয়ারবাজার বিনিয়োগের ভালো মাধ্যম বলে আশ্বস্ত করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তাই এখানে বিনিয়োগের আহবান করেছেন তিনি। শুধু সেকেন্ডারি মার্কেট তাকিয়ে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রাইমারি মার্কেটে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বলেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শক হুসাইন সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও অধ্যাপক আবু আহমেদ। এতে বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম, কমিশনার ড. মিজানুর রহমান, কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও কমিশনার খোন্দকার কামালউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। আর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

বিজনেস আওয়ার/০৫ অক্টোবর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: