ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 5

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে শুক্রবার বৈঠকে বসছে বিশ্বসংস্থাটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংগঠন নিরাপত্তা পরিষদ। যেখানে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ভোটাভুটি হবে।

এর আগে বুধবার প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সনদের আর্টিকেল ৯৯ আহ্বান করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

এদিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হোসে জাভিয়ের দে লা গাসকা লোপেজ ডোমিংগুয়েজকেকে উদ্দেশ্য করে আর্টিকেল ৯৯ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে চিঠি লিখেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। ২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবার তিনি এ সনদের আশ্রয় নিয়েছেন।

চিঠিতে গুতেরেস বলেন, পরিস্থিতি দ্রুততার সঙ্গে অবনতি হচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনিদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা এবং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। গাজায় মানবিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় আমি মানবিক বিপর্যয় রোধে সাহায্য করতে এবং একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতিসংঘের ৯৯ অনুচ্ছেদ এমন একটি সনদ যা সংকটকালীন মুহূর্তে ব্যবহার করা হয়। মহাসচিব যদি মনে করেন কোনো ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণে ৯৯ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করতে পারেন। বিগত কয়েক দশকের ইতিহাসে এটি ব্যবহারের নজির নেই।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক আশা প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি মনে করেন নিরাপত্তা পরিষদ গুতেরেসের আহ্বানকে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবে এবং ভোটের মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতিতে একমত হবে। ডুজারিক আরও জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ নিজেদের মধ্যেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছে ইসরায়েল। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেন এক্সে লিখেছেন, অ্যান্তেনিও গুতেরেস গাজায় যুদ্ধবিরতির যে আহ্বান জানিয়েছেন তা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ দেয়া তার সমর্থন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগও দাবি করে কোহেন বলেন, গুতেরেস নতুন করে নৈতিকতার নিচে নেমে গেছেন। যুদ্ধবিরতির আহ্বানের অর্থই হলো গাজায় হামাসকে তাদের ‘সন্ত্রাসের’ রাজত্ব করতে দেয়া। মহাসচিবের এমন অবস্থানের কারণে গাজায় যুদ্ধ শুধু দীর্ঘায়িত হবে। কারণ, তার এমন আহ্বানের ফলে হামাস আশার আলো দেখতে পাবে এবং তারা টিকে থাকতে পারবে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। মাঝে হামাসের সাথে এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক বিরতির পর গত শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবার অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১৭ হাজার ১৭৭ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। আহত হয়েছেন আরও ৪৬ হাজার মানুষ’। এই পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের ঠেকাতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক থেকে কি সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা দেখার বিষয়।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের মারডক ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিভাগের প্রভাষক ইয়ান উইলসন বলেছেন, আজকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

উইলসন আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘যতই সতর্কতার সাথে কথা বলা হোক না কেন, যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো যেকোনো প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেবে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দেয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ৪৬টি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, যার মধ্যে গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের অবৈধ দখলের নিন্দা প্রস্তাব।’

উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য নিয়ে গঠিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী পাঁচ পরাশক্তি – চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ী সদস্য। এই স্থায়ী সদস্যদের যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এছাড়াও ১০ জন অস্থায়ী সদস্য আছে, যারা নিদিষ্ট অঞ্চল থেকে ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ

পোস্ট হয়েছে : ১২:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে শুক্রবার বৈঠকে বসছে বিশ্বসংস্থাটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংগঠন নিরাপত্তা পরিষদ। যেখানে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ভোটাভুটি হবে।

এর আগে বুধবার প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সনদের আর্টিকেল ৯৯ আহ্বান করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

এদিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হোসে জাভিয়ের দে লা গাসকা লোপেজ ডোমিংগুয়েজকেকে উদ্দেশ্য করে আর্টিকেল ৯৯ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে চিঠি লিখেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। ২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবার তিনি এ সনদের আশ্রয় নিয়েছেন।

চিঠিতে গুতেরেস বলেন, পরিস্থিতি দ্রুততার সঙ্গে অবনতি হচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনিদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা এবং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। গাজায় মানবিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় আমি মানবিক বিপর্যয় রোধে সাহায্য করতে এবং একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতিসংঘের ৯৯ অনুচ্ছেদ এমন একটি সনদ যা সংকটকালীন মুহূর্তে ব্যবহার করা হয়। মহাসচিব যদি মনে করেন কোনো ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণে ৯৯ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করতে পারেন। বিগত কয়েক দশকের ইতিহাসে এটি ব্যবহারের নজির নেই।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক আশা প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি মনে করেন নিরাপত্তা পরিষদ গুতেরেসের আহ্বানকে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবে এবং ভোটের মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতিতে একমত হবে। ডুজারিক আরও জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ নিজেদের মধ্যেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছে ইসরায়েল। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেন এক্সে লিখেছেন, অ্যান্তেনিও গুতেরেস গাজায় যুদ্ধবিরতির যে আহ্বান জানিয়েছেন তা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ দেয়া তার সমর্থন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগও দাবি করে কোহেন বলেন, গুতেরেস নতুন করে নৈতিকতার নিচে নেমে গেছেন। যুদ্ধবিরতির আহ্বানের অর্থই হলো গাজায় হামাসকে তাদের ‘সন্ত্রাসের’ রাজত্ব করতে দেয়া। মহাসচিবের এমন অবস্থানের কারণে গাজায় যুদ্ধ শুধু দীর্ঘায়িত হবে। কারণ, তার এমন আহ্বানের ফলে হামাস আশার আলো দেখতে পাবে এবং তারা টিকে থাকতে পারবে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। মাঝে হামাসের সাথে এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক বিরতির পর গত শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবার অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১৭ হাজার ১৭৭ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। আহত হয়েছেন আরও ৪৬ হাজার মানুষ’। এই পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের ঠেকাতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক থেকে কি সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা দেখার বিষয়।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের মারডক ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিভাগের প্রভাষক ইয়ান উইলসন বলেছেন, আজকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

উইলসন আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘যতই সতর্কতার সাথে কথা বলা হোক না কেন, যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো যেকোনো প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেবে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দেয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ৪৬টি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, যার মধ্যে গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের অবৈধ দখলের নিন্দা প্রস্তাব।’

উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য নিয়ে গঠিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী পাঁচ পরাশক্তি – চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ী সদস্য। এই স্থায়ী সদস্যদের যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এছাড়াও ১০ জন অস্থায়ী সদস্য আছে, যারা নিদিষ্ট অঞ্চল থেকে ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: