ঢাকা , বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোরাচালান বন্ধ হলে স্বর্ণশিল্প এগিয়ে যাবে

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • 76

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চোরাচালান বন্ধ হলে দেশের স্বর্ণশিল্প এগিয়ে যাবে। জুয়েলারিশিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে। বৈধ পথে স্বর্ণালংকার বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। তাই প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা, সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঠিক নজরদারি।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে বাজুস আয়োজিত ‘সোনা চোরাচালান বন্ধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উপস্থিত বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলজেন্স ইউনিটের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন হোছাইনী বলেন, স্বর্ণশীল্প বিকাশে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় অন্তরায় চোরাচালান।

বাংলাদেশে ৩০ সালে সোনার মার্কেট ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে ১০ শতাংশ স্বর্ণের জোগান আসে পুরনো স্বর্ণ থেকে।

আর ৯০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যাগেজ রুলের আওতায়। বাকি চোরাচালানের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বেসরকারি গবেষণা বলছে, ’২৩ সালে ১৫০ টন সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে এসেছে। ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে কিছু সোনা আসছে।

বাজারে সোনার চাহিদা ৪০ টন, তাহলে বাকি সোনা কোথায় যায়? নিশ্চয়ই চোরাচালানের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে ’২৩ সালে ৩১ টনের বেশি সোনা ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আর এই ব্যাগেজ রুলের সুবিধাটাকে ব্যবহার করে চোরাচালানিরা। তারা মাসে কয়েকবার বিদেশে গিয়েও স্বর্ণ নিয়ে আসছে। প্রতিবারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ করছে।

ব্যাগেজ রুলের আওতায় বৈধভাবে আনা সোনা অবৈধ চ্যানেলে পাচার হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপপ্রধান কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বর্ডারগুলো অরক্ষিত।

তাই মাদক আর অস্ত্র আসছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির সময় ঘোষণা দেন পাঁচ টন। কাস্টমসের অসত্ কর্মকর্তার যোগসাজশে পণ্য আনছে ১০ টন। তখন এই বাকি পাঁচ টনের মূল্য পরিশোধ কিভাবে করবে? তখন স্বর্ণের মাধ্যমে এর মূল্য পরিশোধ করা হয়। আমাদের উচিত বর্ডার আরো সুরক্ষিত করা।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর নূর দুলাল বলেন, ‘আমি আজ এখানে না এলে বুঝতামই না স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা নির্দোষ। বিনা কারণে আপনাদের অপবাদ দেওয়া হয়। চোরাচালানের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক নেই, তাই আপনাদের যেকোনো সময় সহায়তায় আমি পাশে আছি।’

বাজুসের সহসভাপতি রিপনুল হাসান বলেন, ‘যে স্মাগলিং করছে সে সোনা নিয়ে আসছে শর্ট টাইমে, সেটা ক্যাশ করে বের হয়ে যাচ্ছে। আর আমার বৈধভাবে সোনা আনতে সময় লাগছে ১৫ দিন।’

বাজুসের সাবেক সভাপতি দীলিপ কুমার রায় বলেন, চোরাচালানে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের জড়িতের অপবাদ নিয়ে আমরা যুগের পর যুগ ভুগছি। যুগের পর যুগ ধরে চলা এই চুরির দায় থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

বাজুসের কোষাধ্যক্ষ উত্তম বণিক বলেন, চোরাচালানের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ী জড়িত না। যদি কোনো ব্যবসায়ী জড়িতের খবর বাজুস জানে, তাহলে তাঁকে বাজুস থেকে বহিষ্কার করে আইনের হাতে তুলে দেবে।

বাজুস যশোর জেলার প্রতিনিধি সঞ্জয় বলেন, ‘আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর আসার পরে অনেক ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। পণ্য এখানে উত্পাদন হলে এমনিতেই চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে।’

বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আলী হোসেন বলেন, ‘সোনা প্রাচীন একটা শীল্প, কিন্তু এটাকে নিয়ে আমরা ভয়ে ভয়ে ব্যবসা করি। কখন যেন কী হয় আতঙ্ক আমাদের মধ্যে।’

বাজুসের সাবেক সভাপতি আমিন জুয়েলার্সের কর্ণধার কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চোরাচালানের ৯৯ শতাংশ সোনাই পাশের দেশে চলে যায়, কারণ আমাদের বর্ডার একদম আলগা। চোরাচালানের একটা গ্রুপই আছে আলাদা, এর সঙ্গে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কোনো সম্পর্কই নেই।’

ডিআরইউয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো খাতের সমস্যা সমাধান করতে তথ্য লাগবে। আমি মনে করি, একটি গবেষণা হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে দেশে সোনার চাহিদা, ব্যবহার ও উৎস সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসবে। আর বাজুসের উচিত এ কাজটি করা।’

বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। স্বর্ণ চোরাচালানে বাজুসের কোনো ব্যবসায়ী জড়িত না।

বাজুসের সহসম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সোনা আমদানির সময় করটা যদি সহজীকরণ করা হয়, শিথিল করা হয়, তাহলে আর কোনো ধরনের সমস্যাই হবে না। এতে আমাদের স্বর্ণ শিল্পও এগিয়ে যাবে।’

বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক।

বাজুসের সহসভাপতি মো. মাসুদ বলেন, চোরাচালান বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তত্পর হতে হবে। ব্যাগেজ রোলের পরিবর্তন করতে হবে।

বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনটির সহসভাপতি গুলজার আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

চোরাচালান বন্ধ হলে স্বর্ণশিল্প এগিয়ে যাবে

পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চোরাচালান বন্ধ হলে দেশের স্বর্ণশিল্প এগিয়ে যাবে। জুয়েলারিশিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে। বৈধ পথে স্বর্ণালংকার বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। তাই প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা, সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঠিক নজরদারি।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে বাজুস আয়োজিত ‘সোনা চোরাচালান বন্ধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উপস্থিত বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলজেন্স ইউনিটের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন হোছাইনী বলেন, স্বর্ণশীল্প বিকাশে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় অন্তরায় চোরাচালান।

বাংলাদেশে ৩০ সালে সোনার মার্কেট ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে ১০ শতাংশ স্বর্ণের জোগান আসে পুরনো স্বর্ণ থেকে।

আর ৯০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যাগেজ রুলের আওতায়। বাকি চোরাচালানের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বেসরকারি গবেষণা বলছে, ’২৩ সালে ১৫০ টন সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে এসেছে। ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে কিছু সোনা আসছে।

বাজারে সোনার চাহিদা ৪০ টন, তাহলে বাকি সোনা কোথায় যায়? নিশ্চয়ই চোরাচালানের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে ’২৩ সালে ৩১ টনের বেশি সোনা ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আর এই ব্যাগেজ রুলের সুবিধাটাকে ব্যবহার করে চোরাচালানিরা। তারা মাসে কয়েকবার বিদেশে গিয়েও স্বর্ণ নিয়ে আসছে। প্রতিবারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ করছে।

ব্যাগেজ রুলের আওতায় বৈধভাবে আনা সোনা অবৈধ চ্যানেলে পাচার হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপপ্রধান কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বর্ডারগুলো অরক্ষিত।

তাই মাদক আর অস্ত্র আসছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির সময় ঘোষণা দেন পাঁচ টন। কাস্টমসের অসত্ কর্মকর্তার যোগসাজশে পণ্য আনছে ১০ টন। তখন এই বাকি পাঁচ টনের মূল্য পরিশোধ কিভাবে করবে? তখন স্বর্ণের মাধ্যমে এর মূল্য পরিশোধ করা হয়। আমাদের উচিত বর্ডার আরো সুরক্ষিত করা।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর নূর দুলাল বলেন, ‘আমি আজ এখানে না এলে বুঝতামই না স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা নির্দোষ। বিনা কারণে আপনাদের অপবাদ দেওয়া হয়। চোরাচালানের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক নেই, তাই আপনাদের যেকোনো সময় সহায়তায় আমি পাশে আছি।’

বাজুসের সহসভাপতি রিপনুল হাসান বলেন, ‘যে স্মাগলিং করছে সে সোনা নিয়ে আসছে শর্ট টাইমে, সেটা ক্যাশ করে বের হয়ে যাচ্ছে। আর আমার বৈধভাবে সোনা আনতে সময় লাগছে ১৫ দিন।’

বাজুসের সাবেক সভাপতি দীলিপ কুমার রায় বলেন, চোরাচালানে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের জড়িতের অপবাদ নিয়ে আমরা যুগের পর যুগ ভুগছি। যুগের পর যুগ ধরে চলা এই চুরির দায় থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

বাজুসের কোষাধ্যক্ষ উত্তম বণিক বলেন, চোরাচালানের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ী জড়িত না। যদি কোনো ব্যবসায়ী জড়িতের খবর বাজুস জানে, তাহলে তাঁকে বাজুস থেকে বহিষ্কার করে আইনের হাতে তুলে দেবে।

বাজুস যশোর জেলার প্রতিনিধি সঞ্জয় বলেন, ‘আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর আসার পরে অনেক ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। পণ্য এখানে উত্পাদন হলে এমনিতেই চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে।’

বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আলী হোসেন বলেন, ‘সোনা প্রাচীন একটা শীল্প, কিন্তু এটাকে নিয়ে আমরা ভয়ে ভয়ে ব্যবসা করি। কখন যেন কী হয় আতঙ্ক আমাদের মধ্যে।’

বাজুসের সাবেক সভাপতি আমিন জুয়েলার্সের কর্ণধার কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চোরাচালানের ৯৯ শতাংশ সোনাই পাশের দেশে চলে যায়, কারণ আমাদের বর্ডার একদম আলগা। চোরাচালানের একটা গ্রুপই আছে আলাদা, এর সঙ্গে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কোনো সম্পর্কই নেই।’

ডিআরইউয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো খাতের সমস্যা সমাধান করতে তথ্য লাগবে। আমি মনে করি, একটি গবেষণা হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে দেশে সোনার চাহিদা, ব্যবহার ও উৎস সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসবে। আর বাজুসের উচিত এ কাজটি করা।’

বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। স্বর্ণ চোরাচালানে বাজুসের কোনো ব্যবসায়ী জড়িত না।

বাজুসের সহসম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সোনা আমদানির সময় করটা যদি সহজীকরণ করা হয়, শিথিল করা হয়, তাহলে আর কোনো ধরনের সমস্যাই হবে না। এতে আমাদের স্বর্ণ শিল্পও এগিয়ে যাবে।’

বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক।

বাজুসের সহসভাপতি মো. মাসুদ বলেন, চোরাচালান বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তত্পর হতে হবে। ব্যাগেজ রোলের পরিবর্তন করতে হবে।

বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনটির সহসভাপতি গুলজার আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: