ঢাকা , সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফর্মে ফিরতে মরিয়া অধিনায়ক নাজমুল শান্ত

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • 12

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। চারদিন পার হয়ে গেলেও এই পর্বে এখনও পর্যন্ত একটি দল মাঠে নামেনি। সিলেট স্ট্রাইকার্স চট্টগ্রাম পর্বে প্রথম মাঠে নামবে ১৭ ফেব্রুয়ারি, শনিবার ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের ক্রিকেটাররাও চট্টগ্রামে এসেছে সবার পরে, ১৩ ফেব্রুয়ারি। এখানে এসে প্রথম অনুশীলন করে ১৫ ফেব্রুয়ারি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটার অংশে। সিলেটের আনুষ্ঠানিক অনুশীলনে সবাই খুঁজেছে শুধু একজনকেই। তিনি নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক অফিসিয়াল প্র্যাকটিস ডে’তে মাঠে হাজির ছিলেন না।

তবে, আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট স্ট্রাইকার্সের ছিল আনঅফিসিয়াল তথা ঐচ্ছিক প্র্যাকটিসের সূচি। তবুও সকাল ১১টায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটারে দলের প্রায় সব ক্রিকেটারই হাজির হয়ে যান। যেখানে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তও। যারা আগেরদিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ককে খুজেছিলেন, তারা এবার অনায়াসে তার অনুশীলন দেখলেন।

অনুশীলনের শুরু থেকেই বেশ সিরিয়াস বাংলাদশে দলেল নতুন অধিনায়ক। নেটে দীর্ঘক্ষণ স্পিনার এবং পেসারদের বোলিংয়ের সামনে নিজেকে ঝালাই করে নিলেন। বার বার নেট পরিবর্তন করে কখনো স্পিনার, কখনো পেসারদের মোকাবেলা করলেন। দীর্ঘক্ষণ প্র্যাকটিস করে সতীর্থ ব্যাটারদের নেট ছেড়ে দিলেন তিনি।

কিন্তু নাজমুল শান্তর ব্যাটিং প্র্যাকটিসের ক্ষুদা তখনও কমেনি। প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের একেবারে উত্তর কোনে এসে একজন টিম বয়ের ছুড়ে দেয়া বলে এককভাবে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন। টিম বয় একসঙ্গে ৮-১০টি বল হাতে নিয়ে একটা একটা করে ছুড়ে দিচ্ছিলেন শান্তর দিকে, আর বাঁ-হাতি এই ব্যাটার দিক পরিবর্তন করে করে অনেকক্ষণ শট প্র্যাকটিস চালিয়ে গেলেন। সবশেষে পুরো দলের অনুশীলন পর্ব যখন শেষ হচ্ছিল, তখন গিয়ে শান্তকে দেখা গেলো বিশ্রাম নিতে।

২০২৩ এবং ২০২৪ বিপিএল তার জন্য পুরোপুরি ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। ২০২৩ বিপিএলে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ১৫ ম্যাচে ৩৯.৬৯ গড়ে রান করেছেন ৫১৬। চারটি হাফ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৬.৭৪; কিন্তু এবার একই দলের হয়ে নাজমুল শান্তর ব্যাটে যেন পুরোপুরি জং ধরে গেছে। ৯ ম্যাচে ১৩.৭৭ গড়ে সর্বমোট রান করেছেন ১২৪টি। স্ট্রাইক রেট ৯৬.১২। কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৩৬। তাও বিপিএলের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামের বিপক্ষে করেছিলেন তিনি।

উপরের এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, শান্তর বর্তমান অফফর্মের অবস্থা। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন শান্ত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট জয়, নিউজিল্যান্ডের মাঠে গিয়ে তাদেরই বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জয়ে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

নেতৃত্ব দেয়ার গুণই মূলত সাকিব পরবর্তীযুগে শান্তকে বাংলাদেশ দলের তিন ফরম্যাটেই পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হতে সহায়তা করেছে; কিন্তু বিপিএলে সেই শান্তর ব্যাটই অশান্ত। বড় কোনো রান নেই। একটি হাফ সেঞ্চুরি পর্যন্ত নেই। ৯ ম্যাচের মধ্যে দুই অংকের ঘরে পৌছালেন মাত্র ৪বার। ৫ বারই তার নামের পাশে সিঙ্গেল ডিজিট- ৫, ৫, ৯, ৩, ১।

বাংলাদেশ দলের পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রাক্কালে শান্তর এমন পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তিত সবাই। বিপিএল শেষেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ। এরপর জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে নতুন অধিনায়কের রানে ফেরাটা যে খুব জরুরি? বিষয়টা অনুধাবন করছেন নাজমুল শান্ত নিজেও। আজ (শুক্রবার) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটারে টানা ব্যাটিং অনুশীলনই বুঝিয়ে দিচ্ছে, তিনি রানে ফিরতে কতটা মরিয়া।

সর্বশেষ দুই ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৩৩ এবং খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে খেলেছেন ১৮ রানের ইনিংস। খুলনার কোচ রাজিন সালেহ এবং টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল আশাবাদী, শান্তর ব্যাট কথা বলতে শুরু করেছে। এবার হয়তো পুরোপুরি ফর্মে ফিরে আসবে। আর শান্ত ফর্মে ফেরা মানেই দলটির বাকি তিন ম্যাচে জয়লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া এবং শেষ চারের সম্ভাবনাও তৈরি হওয়া।

আগেরদিন (বৃহস্পতিবার) মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সিলেটের কোচ রাজিন সালেহ শান্তর অফ ফর্ম নিয়ে বলেছিলেন, ‘ওর সাথে সব সময় আমাদের কথা হয় বা আমি নিজে কথা বলি। আমার মনে হয় না, রান না পাওয়ায় সে মানসিকভাব পিছিয়ে পড়েছে। একটা খেলোয়াড়ের অফ ফর্ম যেতেই পারে। তবে আমরা সব সময় তার সাপোর্টে আছি।’

‘আমার মনে হয়, নাজমুল শান্ত যদি রান করতো, তাহলে আমাদের খেলাটা হয়তো ভিন্ন হতে পারতো। হয়তো আমাদের দলের পজিশনটাও অন্য জায়গায় থাকতো। যদিও সে শেষ দুটা ম্যাচে কিছু রান করেছে, আমরা মনে করি, ১৭ তারিখে যে ম্যাচ আছে, সেখান থেকে সে ফিরে আসবে।’

পরের তিন ম্যাচেই শান্তর ফর্মে ফেরার আশা রাজিন সালেহ’র। তিনি বলেন, ‘শেষ দুটা ম্যাচ দেখেন, একটা ম্যাচে ৩০-৩৫ রান করেছিলো সে (শান্ত), আরেকটা ম্যাচে ১৭-১৮ করেছিলো। এমন না যে সে টাচে নাই, টাচে আছে। আমরা মনে করি, আরও তিনটা ম্যাচ আছে, সে ইনশাআল্লাহ এখান থেকে ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ দলেও ভালো সার্ভিস দেবে সে। ’

সিলেট স্ট্রাইকার্সের টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবালও আজ (শুক্রবার) মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে উত্তর দিতে হয় শান্তর ফর্মের ফেরার বিষয়ে। তার অফ ফর্মের বিষয়টা তোলা হলে নাফিস ইকবাল বলেন, ‘শেষ দুটা ইনিংস ভালো ছিল শান্তর। এটা দেখে আমরা আশাবাদী। টুর্নামেন্টের শুরুটা তার ভালো হয়নি। কিন্তু শেষ দুটা ম্যাচে তাকে বেশ ভালো অবস্থায় দেখা গেছে। অনেক কঠোর পরিশ্রমও করে যাচ্ছে গত কয়েকদিন।’

নাফিস ইকবাল আশাবাদী, শেষ তিনটা ম্যাচ যদি ভালো করেন শান্ত, তাহলে তাদের দলের জন্যও সেটা হতে পারে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য শেষ তিনটা ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন ম্যাচে সে যদি ভালো ডেলিভারি দিতে পারে, তাহলে আমরা হয়তো ভালো পজিশনে থাকতে পারবো। ’

‘আপনারা দেখেছেন যে, শেষ চারটা ম্যাচে আমরা তিনটা জিতেছি। সুতরাং, মোমেন্টাম আমাদের সাথে আছে। আবার একই সময়ে একটা বড় ব্রেকও পেয়েছি আমরা। আগামীকালের খেলাটা (ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে) আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচটা যদি জিততে পারি, তাহলে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও অনেক বেড়ে যাবে। আর নাজমুল শান্ত হচ্ছে আমাদের আইকনিক খেলোয়াড়। এই ম্যাচে তার ক্লিক করাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

নাফিস ইকবালের প্রতি প্রশ্ন ছিল, শান্তকে তো আজ দেখা গেলো কঠোর পরিশ্রম করছেন। দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং প্র্যাকটিস করছেন। তিনি যখন রান পাচ্ছেন না, তখন কী তার মধ্যে এটা কোনো চাপ তৈরি করে কি না যে, সময় হয়েছে- আমার রানে ফেরা উচিৎ এখন?

নাফিস ইকবাল বলেন, ‘শুধু শান্ত কেন, এটা তো সব ক্রিকেটারের জন্যই সত্য। ধারাবাহিক খেলোয়াড় যাদেরকে দেখছেন, যারা বাংলাদেশের টপ ক্লাস ক্রিকেট খেলছেন, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানে। সে (শান্ত) কিন্তু তার রুটিন ফলো করে সব সময়। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে, সব সময়ই সব পরিস্থিতিতে সে শান্ত থাকে। আমার মনে হয়, সে ভালো দিন কিংবা খারাপ দিন- সব সময় একরকম ব্যালেন্স করে চলতে পারে। ওর কাছ থেকে আজ যে কাজটা (অনুশীলন) দেখছেন, সেটা কিন্তু অন অ্যান্ড অফ- সব সময়ই এমন কাজ করে থাকে। সে তার রুটিন সম্পর্কে জানে এবং আমার বিশ্বাস সে খুব দ্রুতই ফর্মে ফিরে আসবে ও ভালো ইনিংস খেলবে। কারণ, তার যে সে কোয়ালিটি আছে, এটা আমরা সবাই জানি।’

বিজনেস আওয়ার/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ফর্মে ফিরতে মরিয়া অধিনায়ক নাজমুল শান্ত

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। চারদিন পার হয়ে গেলেও এই পর্বে এখনও পর্যন্ত একটি দল মাঠে নামেনি। সিলেট স্ট্রাইকার্স চট্টগ্রাম পর্বে প্রথম মাঠে নামবে ১৭ ফেব্রুয়ারি, শনিবার ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের ক্রিকেটাররাও চট্টগ্রামে এসেছে সবার পরে, ১৩ ফেব্রুয়ারি। এখানে এসে প্রথম অনুশীলন করে ১৫ ফেব্রুয়ারি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটার অংশে। সিলেটের আনুষ্ঠানিক অনুশীলনে সবাই খুঁজেছে শুধু একজনকেই। তিনি নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক অফিসিয়াল প্র্যাকটিস ডে’তে মাঠে হাজির ছিলেন না।

তবে, আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট স্ট্রাইকার্সের ছিল আনঅফিসিয়াল তথা ঐচ্ছিক প্র্যাকটিসের সূচি। তবুও সকাল ১১টায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটারে দলের প্রায় সব ক্রিকেটারই হাজির হয়ে যান। যেখানে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তও। যারা আগেরদিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ককে খুজেছিলেন, তারা এবার অনায়াসে তার অনুশীলন দেখলেন।

অনুশীলনের শুরু থেকেই বেশ সিরিয়াস বাংলাদশে দলেল নতুন অধিনায়ক। নেটে দীর্ঘক্ষণ স্পিনার এবং পেসারদের বোলিংয়ের সামনে নিজেকে ঝালাই করে নিলেন। বার বার নেট পরিবর্তন করে কখনো স্পিনার, কখনো পেসারদের মোকাবেলা করলেন। দীর্ঘক্ষণ প্র্যাকটিস করে সতীর্থ ব্যাটারদের নেট ছেড়ে দিলেন তিনি।

কিন্তু নাজমুল শান্তর ব্যাটিং প্র্যাকটিসের ক্ষুদা তখনও কমেনি। প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের একেবারে উত্তর কোনে এসে একজন টিম বয়ের ছুড়ে দেয়া বলে এককভাবে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন। টিম বয় একসঙ্গে ৮-১০টি বল হাতে নিয়ে একটা একটা করে ছুড়ে দিচ্ছিলেন শান্তর দিকে, আর বাঁ-হাতি এই ব্যাটার দিক পরিবর্তন করে করে অনেকক্ষণ শট প্র্যাকটিস চালিয়ে গেলেন। সবশেষে পুরো দলের অনুশীলন পর্ব যখন শেষ হচ্ছিল, তখন গিয়ে শান্তকে দেখা গেলো বিশ্রাম নিতে।

২০২৩ এবং ২০২৪ বিপিএল তার জন্য পুরোপুরি ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। ২০২৩ বিপিএলে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ১৫ ম্যাচে ৩৯.৬৯ গড়ে রান করেছেন ৫১৬। চারটি হাফ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৬.৭৪; কিন্তু এবার একই দলের হয়ে নাজমুল শান্তর ব্যাটে যেন পুরোপুরি জং ধরে গেছে। ৯ ম্যাচে ১৩.৭৭ গড়ে সর্বমোট রান করেছেন ১২৪টি। স্ট্রাইক রেট ৯৬.১২। কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৩৬। তাও বিপিএলের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামের বিপক্ষে করেছিলেন তিনি।

উপরের এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, শান্তর বর্তমান অফফর্মের অবস্থা। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন শান্ত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট জয়, নিউজিল্যান্ডের মাঠে গিয়ে তাদেরই বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জয়ে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

নেতৃত্ব দেয়ার গুণই মূলত সাকিব পরবর্তীযুগে শান্তকে বাংলাদেশ দলের তিন ফরম্যাটেই পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হতে সহায়তা করেছে; কিন্তু বিপিএলে সেই শান্তর ব্যাটই অশান্ত। বড় কোনো রান নেই। একটি হাফ সেঞ্চুরি পর্যন্ত নেই। ৯ ম্যাচের মধ্যে দুই অংকের ঘরে পৌছালেন মাত্র ৪বার। ৫ বারই তার নামের পাশে সিঙ্গেল ডিজিট- ৫, ৫, ৯, ৩, ১।

বাংলাদেশ দলের পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রাক্কালে শান্তর এমন পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তিত সবাই। বিপিএল শেষেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ। এরপর জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে নতুন অধিনায়কের রানে ফেরাটা যে খুব জরুরি? বিষয়টা অনুধাবন করছেন নাজমুল শান্ত নিজেও। আজ (শুক্রবার) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটারে টানা ব্যাটিং অনুশীলনই বুঝিয়ে দিচ্ছে, তিনি রানে ফিরতে কতটা মরিয়া।

সর্বশেষ দুই ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৩৩ এবং খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে খেলেছেন ১৮ রানের ইনিংস। খুলনার কোচ রাজিন সালেহ এবং টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল আশাবাদী, শান্তর ব্যাট কথা বলতে শুরু করেছে। এবার হয়তো পুরোপুরি ফর্মে ফিরে আসবে। আর শান্ত ফর্মে ফেরা মানেই দলটির বাকি তিন ম্যাচে জয়লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া এবং শেষ চারের সম্ভাবনাও তৈরি হওয়া।

আগেরদিন (বৃহস্পতিবার) মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সিলেটের কোচ রাজিন সালেহ শান্তর অফ ফর্ম নিয়ে বলেছিলেন, ‘ওর সাথে সব সময় আমাদের কথা হয় বা আমি নিজে কথা বলি। আমার মনে হয় না, রান না পাওয়ায় সে মানসিকভাব পিছিয়ে পড়েছে। একটা খেলোয়াড়ের অফ ফর্ম যেতেই পারে। তবে আমরা সব সময় তার সাপোর্টে আছি।’

‘আমার মনে হয়, নাজমুল শান্ত যদি রান করতো, তাহলে আমাদের খেলাটা হয়তো ভিন্ন হতে পারতো। হয়তো আমাদের দলের পজিশনটাও অন্য জায়গায় থাকতো। যদিও সে শেষ দুটা ম্যাচে কিছু রান করেছে, আমরা মনে করি, ১৭ তারিখে যে ম্যাচ আছে, সেখান থেকে সে ফিরে আসবে।’

পরের তিন ম্যাচেই শান্তর ফর্মে ফেরার আশা রাজিন সালেহ’র। তিনি বলেন, ‘শেষ দুটা ম্যাচ দেখেন, একটা ম্যাচে ৩০-৩৫ রান করেছিলো সে (শান্ত), আরেকটা ম্যাচে ১৭-১৮ করেছিলো। এমন না যে সে টাচে নাই, টাচে আছে। আমরা মনে করি, আরও তিনটা ম্যাচ আছে, সে ইনশাআল্লাহ এখান থেকে ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ দলেও ভালো সার্ভিস দেবে সে। ’

সিলেট স্ট্রাইকার্সের টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবালও আজ (শুক্রবার) মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে উত্তর দিতে হয় শান্তর ফর্মের ফেরার বিষয়ে। তার অফ ফর্মের বিষয়টা তোলা হলে নাফিস ইকবাল বলেন, ‘শেষ দুটা ইনিংস ভালো ছিল শান্তর। এটা দেখে আমরা আশাবাদী। টুর্নামেন্টের শুরুটা তার ভালো হয়নি। কিন্তু শেষ দুটা ম্যাচে তাকে বেশ ভালো অবস্থায় দেখা গেছে। অনেক কঠোর পরিশ্রমও করে যাচ্ছে গত কয়েকদিন।’

নাফিস ইকবাল আশাবাদী, শেষ তিনটা ম্যাচ যদি ভালো করেন শান্ত, তাহলে তাদের দলের জন্যও সেটা হতে পারে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য শেষ তিনটা ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন ম্যাচে সে যদি ভালো ডেলিভারি দিতে পারে, তাহলে আমরা হয়তো ভালো পজিশনে থাকতে পারবো। ’

‘আপনারা দেখেছেন যে, শেষ চারটা ম্যাচে আমরা তিনটা জিতেছি। সুতরাং, মোমেন্টাম আমাদের সাথে আছে। আবার একই সময়ে একটা বড় ব্রেকও পেয়েছি আমরা। আগামীকালের খেলাটা (ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে) আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচটা যদি জিততে পারি, তাহলে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও অনেক বেড়ে যাবে। আর নাজমুল শান্ত হচ্ছে আমাদের আইকনিক খেলোয়াড়। এই ম্যাচে তার ক্লিক করাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

নাফিস ইকবালের প্রতি প্রশ্ন ছিল, শান্তকে তো আজ দেখা গেলো কঠোর পরিশ্রম করছেন। দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং প্র্যাকটিস করছেন। তিনি যখন রান পাচ্ছেন না, তখন কী তার মধ্যে এটা কোনো চাপ তৈরি করে কি না যে, সময় হয়েছে- আমার রানে ফেরা উচিৎ এখন?

নাফিস ইকবাল বলেন, ‘শুধু শান্ত কেন, এটা তো সব ক্রিকেটারের জন্যই সত্য। ধারাবাহিক খেলোয়াড় যাদেরকে দেখছেন, যারা বাংলাদেশের টপ ক্লাস ক্রিকেট খেলছেন, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানে। সে (শান্ত) কিন্তু তার রুটিন ফলো করে সব সময়। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে, সব সময়ই সব পরিস্থিতিতে সে শান্ত থাকে। আমার মনে হয়, সে ভালো দিন কিংবা খারাপ দিন- সব সময় একরকম ব্যালেন্স করে চলতে পারে। ওর কাছ থেকে আজ যে কাজটা (অনুশীলন) দেখছেন, সেটা কিন্তু অন অ্যান্ড অফ- সব সময়ই এমন কাজ করে থাকে। সে তার রুটিন সম্পর্কে জানে এবং আমার বিশ্বাস সে খুব দ্রুতই ফর্মে ফিরে আসবে ও ভালো ইনিংস খেলবে। কারণ, তার যে সে কোয়ালিটি আছে, এটা আমরা সবাই জানি।’

বিজনেস আওয়ার/বিএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: