ঢাকা , শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবার মরদেহ আটকে রেখে সন্তানদের সম্পত্তি ভাগাভাগি

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
  • 7

বিজনেস আওয়ার প্রতিনিধি: বাবার মরদেহ আটকে রেখে সাত ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি করার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (০৮ মার্চ) যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত ব্যক্তিকে দাফনের আগেই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে ডেকে সালিশি বৈঠক বসিয়ে জমিজমার সুষ্ঠু বণ্টনের রাজি হয়ে স্টাম্পে সই-সাক্ষরের পর রাতে দাফন করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার স্ত্রী, সাত ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ। তিনি রেখে গেছেন ৪৫ বিঘা জমি। মৃত্যুর পরপরই যা ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্টি হয় মরদেহ দাফনের জটিলতা।

প্রতিবেশীরা জানান, মানুষের মৃত্যুর পর পরিবারের সবাই তার দাফন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু আব্দুল মজিদের মৃত্যুর পর তার চার ছেলে আব্দুল মান্নান, আব্দুল হাকিম, আব্দুস সালাম ও আব্দুল আহাদ অভিযোগ করেন, বাবাকে ভুল বুঝিয়ে অপর তিন ভাই আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুস সামাদ ও আসাদুজ্জামান পাঁচ বিঘা জমি লিখে নিয়েছেন। এছাড়া বাবার জমি বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। ফলে জমি এবং টাকার সঠিক হিসাব না হওয়া পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফন করা হবে না।

মৃতের ছেলে আব্দুল আহাদ জানান, তার বাবা স্ট্রোকজনিত রোগে অসুস্থ ছিলেন। এই সুযোগে তার তিন ভাই আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুস সামাদ ও আসাদুজ্জামান বাবার কাছে থেকে এক বিঘা করে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। আমরা যখন জানতে পেরে তাদের জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলি। কিন্তু অনেক দিন ধরে তারা জমি ফেরত দিতে চেয়েও দেয় না। এ জন্য বিষয়টি আজকেই সমাধান হতে হবে। এটি না হলে ওরা এই জমি আর কোনোদিন ফেরত দেবে না। বাবার সম্পত্তি সবাই সমান ভাগীদার। তারা কেন বেশি নেবে।

বিষয়টি নিয়ে বিকেলে মৃতের বাড়িতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক সালিশি বৈঠক বসে। তাতে উপস্থিত ছিলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী আব্দুস ছাত্তার খাঁ, মিজানুর রহমান, সোহরাব হোসেন, ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম, ইউপি সদস্য গোলাম রসুল, ইউপি সদস্য এরশাদ আলী, মহিলা ইউপি সদস্য রেহেনা খাতুন, সাবেক ইউপি সদস্য আবু সামা, সাবেক ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান, জাকির হোসেন, হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। বৈঠকে সাত ভাই ও তিন বোনকে ডেকে সিদ্ধান্ত করা হয়, বাবার সম্পদ সমান বণ্টন হবে। কেউ বেশি নিতে পারবে না। সবাই এ সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রকাশ করলে সবাইকে স্টাম্পে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয় এবং পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সদস্যরা খুব দ্রুত তাদের ভাই বোনদের নিয়ে বসে সঠিক বণ্টন করবেন এবং যাদের নামে বেশি জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে, তারা অন্য ভাইদের জমি ফেরত দেবেন। এরপর মৃত বাবাকে রাতে দাফন করা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, সব ভাই-বোনের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত আমরা তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবো। তবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই না এমন ঘটনা আর কোনো পরিবারে ঘটুক।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাবার মরদেহ আটকে রেখে সন্তানদের সম্পত্তি ভাগাভাগি

পোস্ট হয়েছে : ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিনিধি: বাবার মরদেহ আটকে রেখে সাত ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি করার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (০৮ মার্চ) যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত ব্যক্তিকে দাফনের আগেই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে ডেকে সালিশি বৈঠক বসিয়ে জমিজমার সুষ্ঠু বণ্টনের রাজি হয়ে স্টাম্পে সই-সাক্ষরের পর রাতে দাফন করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার স্ত্রী, সাত ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ। তিনি রেখে গেছেন ৪৫ বিঘা জমি। মৃত্যুর পরপরই যা ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্টি হয় মরদেহ দাফনের জটিলতা।

প্রতিবেশীরা জানান, মানুষের মৃত্যুর পর পরিবারের সবাই তার দাফন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু আব্দুল মজিদের মৃত্যুর পর তার চার ছেলে আব্দুল মান্নান, আব্দুল হাকিম, আব্দুস সালাম ও আব্দুল আহাদ অভিযোগ করেন, বাবাকে ভুল বুঝিয়ে অপর তিন ভাই আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুস সামাদ ও আসাদুজ্জামান পাঁচ বিঘা জমি লিখে নিয়েছেন। এছাড়া বাবার জমি বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। ফলে জমি এবং টাকার সঠিক হিসাব না হওয়া পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফন করা হবে না।

মৃতের ছেলে আব্দুল আহাদ জানান, তার বাবা স্ট্রোকজনিত রোগে অসুস্থ ছিলেন। এই সুযোগে তার তিন ভাই আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুস সামাদ ও আসাদুজ্জামান বাবার কাছে থেকে এক বিঘা করে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। আমরা যখন জানতে পেরে তাদের জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলি। কিন্তু অনেক দিন ধরে তারা জমি ফেরত দিতে চেয়েও দেয় না। এ জন্য বিষয়টি আজকেই সমাধান হতে হবে। এটি না হলে ওরা এই জমি আর কোনোদিন ফেরত দেবে না। বাবার সম্পত্তি সবাই সমান ভাগীদার। তারা কেন বেশি নেবে।

বিষয়টি নিয়ে বিকেলে মৃতের বাড়িতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক সালিশি বৈঠক বসে। তাতে উপস্থিত ছিলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী আব্দুস ছাত্তার খাঁ, মিজানুর রহমান, সোহরাব হোসেন, ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম, ইউপি সদস্য গোলাম রসুল, ইউপি সদস্য এরশাদ আলী, মহিলা ইউপি সদস্য রেহেনা খাতুন, সাবেক ইউপি সদস্য আবু সামা, সাবেক ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান, জাকির হোসেন, হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। বৈঠকে সাত ভাই ও তিন বোনকে ডেকে সিদ্ধান্ত করা হয়, বাবার সম্পদ সমান বণ্টন হবে। কেউ বেশি নিতে পারবে না। সবাই এ সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রকাশ করলে সবাইকে স্টাম্পে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয় এবং পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সদস্যরা খুব দ্রুত তাদের ভাই বোনদের নিয়ে বসে সঠিক বণ্টন করবেন এবং যাদের নামে বেশি জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে, তারা অন্য ভাইদের জমি ফেরত দেবেন। এরপর মৃত বাবাকে রাতে দাফন করা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, সব ভাই-বোনের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত আমরা তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবো। তবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই না এমন ঘটনা আর কোনো পরিবারে ঘটুক।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: