ঢাকা , রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী বছর ডলারের রেট হবে ১২৪ টাকা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
  • 401

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের বিনিময় হার, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রাসহ এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।

ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে আগামী বছরের মধ্যে ডলারের দাম ১২৪ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আইএমএফকে এসব পরিকল্পনার কথা জানানো হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

বাজেটের আগে ঋণের শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল।

প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে যাচ্ছে।

এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ডলারের দর ও মূল্যস্ফীতি কমানোসহ অর্থনীতির প্রধান নির্দেশকসমূহ সম্পর্কে জানতে চান আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আইএমএফের প্রতিনিধিদলকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং দেশে ফসল উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হলে পণ্যের দাম কমে যাবে।

এতে আগামী বছর থেকে মূল্যস্ফীতি ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আর ডলারের সরবরাহ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিদেশ থেকে অফশোর ব্যাংকিংসহ প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি মাত্রায় ডলার আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ডলারের জোগান বাড়লে ক্রমান্বয়ে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।

তবে তা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হবে না। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে আগামী বছর থেকে ডলারের দর ১২৪ টাকা করার প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফকে আরো জানায়, রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে করদাতার সংখ্যা। দুই-তিন বছরের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়বে। আর ঋণখেলাপি কমাতে ক্রাশ প্রোগাম হাতে নেওয়া হয়েছে। খেলাপি কমলে তারল্য বাড়বে। ব্যাংক খাতে দুর্বল ব্যাংক কমাতে ১০ ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়া আরো কিছু ব্যাংকের লাল, হলুদ এবং সবুজ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ব্যাংকে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের মধ্যেই গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় করার পরামর্শ দিয়েছেন আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, একবার এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের বাহ্যিক হিসাবে বড় আকারের স্থিতিশীলতা আসবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডলারের দাম আগামী বছর ১২৪ টাকা না করে উপায় থাকবে না। এটা বাজারের চাহিদার কাছাকাছি। দর আটকে রাখলে হুন্ডি আরও বাড়বে এবং অর্থ পাচারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

তবে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ থেকে ৫.৫০ শতাংশ করা সম্ভব না। বিষয়টি আইএমএফের সদস্যরাও উপলব্ধি করতে পারেন। এটা নিয়ম রক্ষার পরিকল্পনা বলা যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ডলার, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, খেলাপি ঋণসহ অর্থনৈতিক নির্ধারকসমূহ নিয়ে তথ্য লেনদেন হচ্ছে। এসব নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অংশীজনদের বৈঠক চলমান রয়েছে।

আগামী ৮ মে বৈঠক শেষে ব্রিফ করলে বিস্তারিত জানানো হবে।’

বিজনেস আওয়ার/০১ মে/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

আগামী বছর ডলারের রেট হবে ১২৪ টাকা

পোস্ট হয়েছে : ০৬:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের বিনিময় হার, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রাসহ এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।

ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে আগামী বছরের মধ্যে ডলারের দাম ১২৪ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আইএমএফকে এসব পরিকল্পনার কথা জানানো হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

বাজেটের আগে ঋণের শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল।

প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে যাচ্ছে।

এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ডলারের দর ও মূল্যস্ফীতি কমানোসহ অর্থনীতির প্রধান নির্দেশকসমূহ সম্পর্কে জানতে চান আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আইএমএফের প্রতিনিধিদলকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং দেশে ফসল উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হলে পণ্যের দাম কমে যাবে।

এতে আগামী বছর থেকে মূল্যস্ফীতি ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আর ডলারের সরবরাহ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিদেশ থেকে অফশোর ব্যাংকিংসহ প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি মাত্রায় ডলার আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ডলারের জোগান বাড়লে ক্রমান্বয়ে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।

তবে তা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হবে না। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে আগামী বছর থেকে ডলারের দর ১২৪ টাকা করার প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফকে আরো জানায়, রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে করদাতার সংখ্যা। দুই-তিন বছরের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়বে। আর ঋণখেলাপি কমাতে ক্রাশ প্রোগাম হাতে নেওয়া হয়েছে। খেলাপি কমলে তারল্য বাড়বে। ব্যাংক খাতে দুর্বল ব্যাংক কমাতে ১০ ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়া আরো কিছু ব্যাংকের লাল, হলুদ এবং সবুজ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ব্যাংকে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের মধ্যেই গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় করার পরামর্শ দিয়েছেন আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, একবার এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের বাহ্যিক হিসাবে বড় আকারের স্থিতিশীলতা আসবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডলারের দাম আগামী বছর ১২৪ টাকা না করে উপায় থাকবে না। এটা বাজারের চাহিদার কাছাকাছি। দর আটকে রাখলে হুন্ডি আরও বাড়বে এবং অর্থ পাচারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

তবে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ থেকে ৫.৫০ শতাংশ করা সম্ভব না। বিষয়টি আইএমএফের সদস্যরাও উপলব্ধি করতে পারেন। এটা নিয়ম রক্ষার পরিকল্পনা বলা যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ডলার, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, খেলাপি ঋণসহ অর্থনৈতিক নির্ধারকসমূহ নিয়ে তথ্য লেনদেন হচ্ছে। এসব নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অংশীজনদের বৈঠক চলমান রয়েছে।

আগামী ৮ মে বৈঠক শেষে ব্রিফ করলে বিস্তারিত জানানো হবে।’

বিজনেস আওয়ার/০১ মে/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: