ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতকে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
  • 152

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ভারত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহারে দেশটির সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল এবং যারা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চায়, তাদের ‘সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির বিষয়টি’ বিবেচনা করা উচিত।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, নয়াদিল্লি ও তেহরান গতকাল সোমবার ভারতের চাবাহার বন্দরের বিষয়টি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। মূলত ওমান উপসাগরের তীরে অবস্থিত এই বন্দর ব্যবহার করে ভারত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে চায়। এ ছাড়া, পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছার একটি পথ তৈরি হবে এর মধ্য দিয়ে।

চাবাহার বন্দর ব্যবহারে ভারতের ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড এবং পোর্ট ম্যারিটাইম অর্গানাইজেশন অব ইরানের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড চাবাহারে সরাসরি ১২০ মিলিয়ন ডলার এবং ঋণ পরিষেবার মাধ্যমে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

এই প্রথম ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্য কোনো দেশের একটি বন্দর অবকাঠামোর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে। ভারতের আশা, এর ফলে ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাবাহার বন্দরে বিনিয়োগের জন্য ১০০ কোটি রুপির অনুমোদন দিয়েছে।

কৌশলগত বিবেচনায় ভারতের জন্য চাবাহার বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বন্দর হয়ে ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ ট্রান্সপোর্ট করিডর হয়ে ভারতের জন্য ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এমনকি ইউরোপেও পৌঁছানো সহজ হবে।

ভারতের তরফ থেকে চাবাহার বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি প্রথম আলোচিত হয়, ২০০৩ সালে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির ভারত সফরের সময়। ২০১৩ সালে ভারত চাবাহার বন্দরে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে ২০১৫ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পরে ২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইরান সফরের সময় চূড়ান্ত চুক্তি হয়।

উল্লেখ্য, ইরানের চাবাহার বন্দরটি ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটের কান্ডলা বন্দর থেকে ৫৫০ নটিক্যাল মাইল এবং মুম্বাই বন্দর থেকে ৭৮৬ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত।

এদিকে, ইরান-ভারত চাবাহার বন্দর ব্যবহারের চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অবগত যে, ইরান ও ভারত চাবাহার বন্দরসংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভারত তার নিজস্ব বৈদেশিক নীতিমালা বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জনে চাবাহার বন্দরের বিষয়ে ইরানের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কী করবে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমি শুধু বলব, যেহেতু এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এবং আমরা সেগুলোর প্রয়োগ অব্যাহত রাখব। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’

বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘যদি কেউ ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি বিবেচনা করে, তবে তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে যে, তারা নিজেদের নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকির মুখে উন্মুক্ত করে তুলছে।’ এ সময় বেদান্ত প্যাটেল জানান, এসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

বিজনেস আওয়ার/১৪ মে/ হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ভারতকে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

পোস্ট হয়েছে : ০৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ভারত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহারে দেশটির সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল এবং যারা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চায়, তাদের ‘সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির বিষয়টি’ বিবেচনা করা উচিত।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, নয়াদিল্লি ও তেহরান গতকাল সোমবার ভারতের চাবাহার বন্দরের বিষয়টি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। মূলত ওমান উপসাগরের তীরে অবস্থিত এই বন্দর ব্যবহার করে ভারত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে চায়। এ ছাড়া, পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছার একটি পথ তৈরি হবে এর মধ্য দিয়ে।

চাবাহার বন্দর ব্যবহারে ভারতের ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড এবং পোর্ট ম্যারিটাইম অর্গানাইজেশন অব ইরানের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড চাবাহারে সরাসরি ১২০ মিলিয়ন ডলার এবং ঋণ পরিষেবার মাধ্যমে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

এই প্রথম ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্য কোনো দেশের একটি বন্দর অবকাঠামোর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে। ভারতের আশা, এর ফলে ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাবাহার বন্দরে বিনিয়োগের জন্য ১০০ কোটি রুপির অনুমোদন দিয়েছে।

কৌশলগত বিবেচনায় ভারতের জন্য চাবাহার বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বন্দর হয়ে ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ ট্রান্সপোর্ট করিডর হয়ে ভারতের জন্য ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এমনকি ইউরোপেও পৌঁছানো সহজ হবে।

ভারতের তরফ থেকে চাবাহার বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি প্রথম আলোচিত হয়, ২০০৩ সালে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির ভারত সফরের সময়। ২০১৩ সালে ভারত চাবাহার বন্দরে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে ২০১৫ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পরে ২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইরান সফরের সময় চূড়ান্ত চুক্তি হয়।

উল্লেখ্য, ইরানের চাবাহার বন্দরটি ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটের কান্ডলা বন্দর থেকে ৫৫০ নটিক্যাল মাইল এবং মুম্বাই বন্দর থেকে ৭৮৬ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত।

এদিকে, ইরান-ভারত চাবাহার বন্দর ব্যবহারের চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অবগত যে, ইরান ও ভারত চাবাহার বন্দরসংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভারত তার নিজস্ব বৈদেশিক নীতিমালা বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জনে চাবাহার বন্দরের বিষয়ে ইরানের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কী করবে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমি শুধু বলব, যেহেতু এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এবং আমরা সেগুলোর প্রয়োগ অব্যাহত রাখব। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’

বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘যদি কেউ ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি বিবেচনা করে, তবে তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে যে, তারা নিজেদের নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকির মুখে উন্মুক্ত করে তুলছে।’ এ সময় বেদান্ত প্যাটেল জানান, এসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

বিজনেস আওয়ার/১৪ মে/ হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: