ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে বিরল রোগ ‘উইলসন ডিজিজ’র নতুন মিউটেশন শনাক্ত

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
  • 119

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশে বিরল রোগ ‘উইলসন ডিজিজ’র নতুন দুটি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির নিউরোলজি ও অ্যানাটমি বিভাগের যৌথ গবেষণায় নতুন এ ধরনের বিষয়টি উঠে এসেছে।

এছাড়াও এই বিরল উইলসন ডিজিজের চিকিৎসা টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে বিএসএমএমইউ আয়োজিত ‘বাংলাদেশি উইলসেন্স রোগীদের মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন এবং এর স্নায়বিক উপসর্গ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব হেলাল এবং অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু।

প্রতিবেদন তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু বলেন, গবেষণায় আমাদের মোট রোগীর সংখ্যা ছিলেন ৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২৮ জন এবং নারী ২২ জন। তাদের ছয়জন রোগীর মধ্যে তিনটি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দুটিই বাংলাদেশে নতুন। তাদের টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা চলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতি ৩০ হাজার জনের মধ্যে একজনের উইলসন ডিজিজ রয়েছে। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা হবে ছয় হাজারের মতো। বিএসএমএমইউয়ে এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ২০০ জনের চিকিৎসা দিয়েছি। কারও মধ্যে রোগটি শনাক্ত হলে তাকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। একজন রোগীর মাসে দেড় হাজার টাকার মতো ওষুধের প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে সারাজীবন ভালো থাকার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এই চিকিৎসক আরও বলেন, পরিবারের একজনের যদি রোগটি শনাক্ত হয়, তাহলে অন্য সদস্যদের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।

এসময় ডা. আহসান হাবিব হেলাল বলেন, এই গবেষণায় নিউরোলজি বিভাগের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ক্লিনিক এবং অন্তঃবিভাগ থেকে রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোগী থেকে তিন মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করে অ্যানাটমি বিভাগের জেনেটিক ল্যাবে পাঠিয়ে এনালাইসিস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের রোগীদের বয়সসীমা ছিল নয় থেকে ৬০ বছর। অধিকাংশ রোগী পাওয়া গেছে নয় থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং এর সংখ্যা ছিল ৪৩ জন। গবেষণায় প্রথম জেনারেশনের আত্মীয়দের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন সাত জন। এই রোগের কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছে ২৬ শিশুকে।

রোগীদের উপসর্গ প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, আমরা যেই রোগীগুলো পেয়েছি, তাদের মধ্যে ভেতরে ঢোক গিলতে সমস্যা ছিল ২৭ জনের, হাত-পায়ের কম্পন ছিল ২৮ জনের, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ছিল ২১ জনের, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানো সমস্যা ছিল ১৪ জনের, অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১১ জনের, নৃত্যের মতো অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ছিল চারজনের।

রোগটি কাদের হতে পারে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাবা-মা দুজনেরই যদি এই রোগের জিন থাকে, তাহলে সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে। এজন্য আমরা নিকটাত্মীয়র মধ্যে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক। এ সময় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পারিবারিকভাবে উইলসন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া চারজন রোগীকে হাজির করা হয়।

বিজনেস আওয়ার/১৫ মে/ রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দেশে বিরল রোগ ‘উইলসন ডিজিজ’র নতুন মিউটেশন শনাক্ত

পোস্ট হয়েছে : ০১:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশে বিরল রোগ ‘উইলসন ডিজিজ’র নতুন দুটি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির নিউরোলজি ও অ্যানাটমি বিভাগের যৌথ গবেষণায় নতুন এ ধরনের বিষয়টি উঠে এসেছে।

এছাড়াও এই বিরল উইলসন ডিজিজের চিকিৎসা টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে বিএসএমএমইউ আয়োজিত ‘বাংলাদেশি উইলসেন্স রোগীদের মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন এবং এর স্নায়বিক উপসর্গ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব হেলাল এবং অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু।

প্রতিবেদন তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু বলেন, গবেষণায় আমাদের মোট রোগীর সংখ্যা ছিলেন ৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২৮ জন এবং নারী ২২ জন। তাদের ছয়জন রোগীর মধ্যে তিনটি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দুটিই বাংলাদেশে নতুন। তাদের টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা চলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতি ৩০ হাজার জনের মধ্যে একজনের উইলসন ডিজিজ রয়েছে। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা হবে ছয় হাজারের মতো। বিএসএমএমইউয়ে এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ২০০ জনের চিকিৎসা দিয়েছি। কারও মধ্যে রোগটি শনাক্ত হলে তাকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। একজন রোগীর মাসে দেড় হাজার টাকার মতো ওষুধের প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে সারাজীবন ভালো থাকার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এই চিকিৎসক আরও বলেন, পরিবারের একজনের যদি রোগটি শনাক্ত হয়, তাহলে অন্য সদস্যদের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।

এসময় ডা. আহসান হাবিব হেলাল বলেন, এই গবেষণায় নিউরোলজি বিভাগের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ক্লিনিক এবং অন্তঃবিভাগ থেকে রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোগী থেকে তিন মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করে অ্যানাটমি বিভাগের জেনেটিক ল্যাবে পাঠিয়ে এনালাইসিস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের রোগীদের বয়সসীমা ছিল নয় থেকে ৬০ বছর। অধিকাংশ রোগী পাওয়া গেছে নয় থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং এর সংখ্যা ছিল ৪৩ জন। গবেষণায় প্রথম জেনারেশনের আত্মীয়দের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন সাত জন। এই রোগের কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছে ২৬ শিশুকে।

রোগীদের উপসর্গ প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, আমরা যেই রোগীগুলো পেয়েছি, তাদের মধ্যে ভেতরে ঢোক গিলতে সমস্যা ছিল ২৭ জনের, হাত-পায়ের কম্পন ছিল ২৮ জনের, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ছিল ২১ জনের, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানো সমস্যা ছিল ১৪ জনের, অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১১ জনের, নৃত্যের মতো অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ছিল চারজনের।

রোগটি কাদের হতে পারে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাবা-মা দুজনেরই যদি এই রোগের জিন থাকে, তাহলে সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে। এজন্য আমরা নিকটাত্মীয়র মধ্যে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক। এ সময় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পারিবারিকভাবে উইলসন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া চারজন রোগীকে হাজির করা হয়।

বিজনেস আওয়ার/১৫ মে/ রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: