ঢাকা , সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে প্রতি ৩ শিশুর ২ জন সুষম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • 121

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি ৩ জন শিশুর মধ্যে ২ জনই সুষম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। সম্প্রতি ইউনিসেফের দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শিশুদের বৈচিত্র্যময় ও পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তির সুযোগ বাড়াতে জরুরি প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও) পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য ন্যূনতম যে পাঁচ ধরনের (গ্রুপের) খাবার গ্রহণের সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শিশু তা থেকে বঞ্চিত।

শৈশবে সুষম খাবারের ঘাটতি সব শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে এর বিশেষ প্রভাব দেখা যায় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে। বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন সুষম খাদ্যের তীব্র সংকটের মধ্যে বাস করে, যারা দিনে মাত্র এক বা দুই ধরনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। যেসব শিশুরা নিয়মিত এই পাঁচ ধরনের খাবার খেতে পারে না তাদের শীর্ণকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন) হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেশি থাকে।

বিশ্বব্যাপী সুষম খাদ্য সংকটের শিকার শিশুদের মোট সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের (৬৫ শতাংশ) বাস যে ২০টি দেশে, বাংলাদেশ তার একটি। শৈশবে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত শিশুরা সাধারণত স্কুলে কম ভালো করে, কর্মজীবনে কম উপার্জন করে এবং দারিদ্র্য ও বঞ্চনার চক্রে আটকে থাকে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এবিষয়ে পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যার আওতায় পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান সেবাগুলোকে আরও উন্নত ও সহজলভ্য করা হবে। সঙ্গে আরও প্রয়োজন রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ও সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোকে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার মাধ্যমে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এভাবে প্রতিটি শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর সূচনা নিশ্চিত করা সম্ভব।

বাংলাদেশে শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকটের পেছনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, পরিবারের অক্ষমতা, শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্পর্কে বাবা-মায়েদের সচেতনতার অভাব, অপুষ্টিকর অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি মিশ্রিত কোমল পানীয়ের ব্যাপক বিপণন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি যা খাদ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকট ও অপুষ্টি দূর করার লক্ষ্যে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে। শিশুদের খাবার ও যত্ন বিষয়ে বাবা-মা ও পরিবারগুলোকে সঠিক পরামর্শ দিতে ইউনিসেফ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মীদেরও সহায়তা করছে। পাশাপাশি নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করতেও ইউনিসেফ কাজ করে চলেছে।

বিজনেস আওয়ার/০৮ জুন/ রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাংলাদেশে প্রতি ৩ শিশুর ২ জন সুষম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন

পোস্ট হয়েছে : ১২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি ৩ জন শিশুর মধ্যে ২ জনই সুষম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। সম্প্রতি ইউনিসেফের দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শিশুদের বৈচিত্র্যময় ও পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তির সুযোগ বাড়াতে জরুরি প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও) পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য ন্যূনতম যে পাঁচ ধরনের (গ্রুপের) খাবার গ্রহণের সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শিশু তা থেকে বঞ্চিত।

শৈশবে সুষম খাবারের ঘাটতি সব শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে এর বিশেষ প্রভাব দেখা যায় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে। বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন সুষম খাদ্যের তীব্র সংকটের মধ্যে বাস করে, যারা দিনে মাত্র এক বা দুই ধরনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। যেসব শিশুরা নিয়মিত এই পাঁচ ধরনের খাবার খেতে পারে না তাদের শীর্ণকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন) হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেশি থাকে।

বিশ্বব্যাপী সুষম খাদ্য সংকটের শিকার শিশুদের মোট সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের (৬৫ শতাংশ) বাস যে ২০টি দেশে, বাংলাদেশ তার একটি। শৈশবে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত শিশুরা সাধারণত স্কুলে কম ভালো করে, কর্মজীবনে কম উপার্জন করে এবং দারিদ্র্য ও বঞ্চনার চক্রে আটকে থাকে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এবিষয়ে পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যার আওতায় পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান সেবাগুলোকে আরও উন্নত ও সহজলভ্য করা হবে। সঙ্গে আরও প্রয়োজন রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ও সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোকে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার মাধ্যমে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এভাবে প্রতিটি শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর সূচনা নিশ্চিত করা সম্ভব।

বাংলাদেশে শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকটের পেছনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, পরিবারের অক্ষমতা, শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্পর্কে বাবা-মায়েদের সচেতনতার অভাব, অপুষ্টিকর অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি মিশ্রিত কোমল পানীয়ের ব্যাপক বিপণন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি যা খাদ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকট ও অপুষ্টি দূর করার লক্ষ্যে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে। শিশুদের খাবার ও যত্ন বিষয়ে বাবা-মা ও পরিবারগুলোকে সঠিক পরামর্শ দিতে ইউনিসেফ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মীদেরও সহায়তা করছে। পাশাপাশি নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করতেও ইউনিসেফ কাজ করে চলেছে।

বিজনেস আওয়ার/০৮ জুন/ রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: