ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেটে ক‍্যাপিটাল গেইন ট‍্যাক্স বাতিলসহ ডিবিএ’র ৭ দাবি

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • 85

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ধারাবাহিক পতনে থাকা দেশের শেয়ারবাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরানোর লক্ষ্যেডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বাতিলসহ সাত দাবি জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান ডিবিএ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ৪ বছর ধরে শেয়ারবাজার খারাপ। এরমধ্যে গত কয়েক মাসের পতনে ব্রোকারেজ হাউজগুলো রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১-২ বছরের মধ্যে সবার অবস্থা ভয়াবহ হবে।

ডিবিএ’র সভাপতি বলেন, ২০১০ সাল থেকেই আমরা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গত ১৪ বছরে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করতে পারিনি। বাজারের ধারাবাহিক নেতিবাচক অবস্থার কারণে একটি প্রজন্ম বাজার বিমুখ হয়ে পড়ছে। যে হারে বাজারে পতন হচ্ছে এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বাজার ক্রমাগত অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। শেয়ারবাজরে বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

শেয়ারবাজারের মূল্য সমস্যা কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবিএ সভাপতি বলেন, শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা ভালো পণ্যের অভাব। গত ১৫ বছর ধরে ১-২টা ছাড়া আমাদের বাজারে ভালো কোনো কোম্পানি আসেনি। তিনি বলেন, ভালো শেয়ারবাজারের জন্য ভালো মানের কোম্পানি আবশ্যক।

২০৪-২৫ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে বিবেচনা করার জন্য ডিবিএর সাত প্রস্তাবনা হলো-

৩) মূলধন ক্ষতির উপর বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ:

৪) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির রোডম্যাপ তৈরি;

৫) অতালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলির জন্য কর্পোরেট করের হার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হারের বাহিরে বৃদ্ধিকরণ;

৬) নতুন বিও আইডিগুলোকে ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান;

৭) মার্জিন লসকে কর ছাড়যোগ্য হিসেবে অনুমতি প্রদান।

১. মূলধনী আয়কে করমুক্তকরণ : প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন আয়ের ৫০ লাখ টাকার অধিক আয়ের উপর স্তরভিত্তিক করারোপ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, কোন সিকিউরিটিজ বিনিয়োগের সময়কাল বছর অতিক্রম করলে উক্ত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আসের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়।

গত কয়েকবছর ধরে মন্দাবাজার পরিস্থিতি এবং আর্থিক সংকটে থাকা বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধন আয়ের

উপর থেকে করারোপের প্রস্তাব রহিতকরণের জন্য আমরা জোর সুপারিশ করছি।

২. ব্রোকারেজের জন্য করহার যৌক্তিককরণ: বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজগুলো দুটিস্তরে কর প্রদান করে। প্রথমত: সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ০.০৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয়ত: কর্পোরেট আয়কর হিসেবে, যেটি বেশী হয় তা চূড়ান্ত কর হিসেবে গন্য করা হয়।

এই দ্বিস্তরের ব্যবস্থার ফলে মন্দাবাজার পরিস্থিতিতে ব্রোকারদের ক্ষতি করে। কিছুক্ষেত্রে এই করের হার ৪০ শতাংশ বা তার বেশী ছাড়িয়ে যায়। ব্রোকাররা বাজারের অন্যতম অংশী। বাজারে বিনিয়োগকারী এনে বাজারকে বিনিয়োগ সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সিকিউরিটিজ ক্রয়- বিক্রয়ের মত অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা করে থাকে। ব্রোকারদের আর্থিক সংকট ও অক্ষমতা বাজারের উন্নয়নকে চরমভাবে ব্যহত করে।

তাই শেয়ারবাজারকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর উন্নয়নে ব্রোকারদের সক্রিয় ও সচল রাখা অত্যাবশ্যক। এরুপ অবস্থায় ব্রোকারেজ ব্যবসায়িদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা নিম্নোক্ত সুপারিশ করছি-

ক) রাজস্ব করহার ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.০২৫ শতাংশ হ্রাসকরণ এবং খ) কর্পোরেট আয়করকে ব্রোকারেজের জন্য চুড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনাকরণ।

৩. মূলধন ক্ষতির উপর বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ : প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন লাভের উপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ মূলধনী লোকসানের উপর ৬ বছর পর্যন্ত মূলধনী ক্ষতির জের বহন কিংবা সমন্বয় করার বিধান বিদ্যমান রয়েছে।

এরুপ ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগকারীর মূলধন ক্ষতির বিষয়ে থাকা বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা প্রদানসহ এটিকে ৭ বছর পর্যন্ত প্রদেয় আয়করের বিপরীতে বহন বা সমন্বয় করার সুপারিশ করছি।

গত কয়েকবছর ধরে বাজারে মন্দা বিরাজ করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানের কবলে পড়ে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন ৫০ লাখের অধিক মুলধন লাভের উপর করারোপের সাথে বিদ্যমান মূলধনী লোকসানের জের বহন কিংবা সমন্বয় করার অনুমতি দিলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধরে রাখতে এবং বাজারের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে বাজারসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন লাভবান হবে।

এর ফলে বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে বাজারকে সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হবে এবং এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

৫. রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির রোডম্যাপ তৈরি : গত এক দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে খুব বেশী অগ্রগতি হয়নি। আমরা শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করার অনুরোধ করছি।

উক্ত বিষয়ে একটি পরিস্কার রোডম্যাপ দেয়া হলে বাজার মানসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজে প্রতিযোগীতামূলক ভাল ব্যবসা তৈরীতে উৎসাহিত হবে।

ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভূক্তির নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপাইজ তালিকাভুক্তির বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আশু বাস্তবায়নে সরকার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।

আমরা বিশ্বাস করি, শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাজার প্রসার হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

৫. অতালিকাভূক্ত সংস্থাগুলির জন্য কর্পোরেট করের হার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হারের বাহিরে বৃদ্ধিকরণ: প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হার ৩০ শতাংশ নির্ধারণ কিন্তু, অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার ব্যক্তিশ্রেনীর করা হয়েছে। কিন্তু করেরহারের নীচে।

অন্যদিকে কর্পোরেটের ক্ষেত্রে তালিকাভূক্ত এবং অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে করের পার্থক্য ২.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠান গুলির সামাজিক কর্মকান্ডে অবদান, শেয়ারবাজারে প্রচার বিবেচনা করে ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট করের হারের মধ্যে পার্থক্য বিবেচনায় আমাদের প্রস্তাব নিম্নরুপ:-

ক) ব্যক্তিশ্রেণীর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ এর উর্ধে অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার নির্ধারন করা।

খ) নিয়মিত এবং সম্পূর্ন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তে তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার হ্রাসকরণের সুপারিশ করছি।

৬. নতুন বিও আইডি ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনার অনুমতি প্রদান : শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি তথা বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে বাজারের মূলধন বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কর্মকান্ডে নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজন। দুঃখজনকভাবে আমাদের বাজারে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ সক্রিয় বিও একাউন্ট আছে, যেখানে ব্যাংকিং এবং এমএফএস কার্যক্রমে যথাক্রমে ২৮ শতাংশ এবং ৬৭ শতাংশ রয়েছে।

যদি ব্যাংকিং এবং এমএফএস একাউন্টগুলিকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগে নিয়ে আসা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের জন্য মূলধনী লাভ, সুদ এবং লভ্যাংশ আয় তৈরী হবে।

এর ফলে সরকারের যথেষ্ট পরিমান কর জেনারেট করা সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় আমরা বাজারের সম্প্রসারনের জন্য নিম্নের বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করছি-

ক) সকল নতুন বিও একাউন্টগুলিকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের সীমা সাপেক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত সময়কালের জন্য কর বহির্ভূত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করা।

খ) শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধীব্যক্তি এবং প্রবীণ নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত বিও হিসাবধারীদেরকে লাভের জন্য (০) শূণ্য হারে কর উপভোগ করার অনুমতি প্রদান করা।

৭. মার্জিন লসকে করছাড় যোগ্য হিসেবে অনুমতি প্রদান : মার্জিন লস বাজারের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। দীর্ঘদিন ধরে থাকা এরুপ মার্জিন লসের কারনে অসংখ্য বিনিয়োগ একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে যা তারল্‌য সংকটের মুখে গত কয়েকবছরে গুরুতর হয়ে উঠেছে।

মার্জিন লসে থাকা এই জাতীয় বিনিয়োগকে আর্থিকভাবে পূনরুদ্ধার করতে এবং বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এনবিআরকে ঋনদাতাদের জন্য একটি প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কর কর্তনযোগ্য হিসেবে মার্জিন লসের অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

বিজনেস আওয়ার/১১ জুন/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাজেটে ক‍্যাপিটাল গেইন ট‍্যাক্স বাতিলসহ ডিবিএ’র ৭ দাবি

পোস্ট হয়েছে : ০৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ধারাবাহিক পতনে থাকা দেশের শেয়ারবাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরানোর লক্ষ্যেডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বাতিলসহ সাত দাবি জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান ডিবিএ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ৪ বছর ধরে শেয়ারবাজার খারাপ। এরমধ্যে গত কয়েক মাসের পতনে ব্রোকারেজ হাউজগুলো রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১-২ বছরের মধ্যে সবার অবস্থা ভয়াবহ হবে।

ডিবিএ’র সভাপতি বলেন, ২০১০ সাল থেকেই আমরা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গত ১৪ বছরে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করতে পারিনি। বাজারের ধারাবাহিক নেতিবাচক অবস্থার কারণে একটি প্রজন্ম বাজার বিমুখ হয়ে পড়ছে। যে হারে বাজারে পতন হচ্ছে এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বাজার ক্রমাগত অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। শেয়ারবাজরে বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

শেয়ারবাজারের মূল্য সমস্যা কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবিএ সভাপতি বলেন, শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা ভালো পণ্যের অভাব। গত ১৫ বছর ধরে ১-২টা ছাড়া আমাদের বাজারে ভালো কোনো কোম্পানি আসেনি। তিনি বলেন, ভালো শেয়ারবাজারের জন্য ভালো মানের কোম্পানি আবশ্যক।

২০৪-২৫ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে বিবেচনা করার জন্য ডিবিএর সাত প্রস্তাবনা হলো-

৩) মূলধন ক্ষতির উপর বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ:

৪) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির রোডম্যাপ তৈরি;

৫) অতালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলির জন্য কর্পোরেট করের হার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হারের বাহিরে বৃদ্ধিকরণ;

৬) নতুন বিও আইডিগুলোকে ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান;

৭) মার্জিন লসকে কর ছাড়যোগ্য হিসেবে অনুমতি প্রদান।

১. মূলধনী আয়কে করমুক্তকরণ : প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন আয়ের ৫০ লাখ টাকার অধিক আয়ের উপর স্তরভিত্তিক করারোপ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, কোন সিকিউরিটিজ বিনিয়োগের সময়কাল বছর অতিক্রম করলে উক্ত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আসের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়।

গত কয়েকবছর ধরে মন্দাবাজার পরিস্থিতি এবং আর্থিক সংকটে থাকা বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধন আয়ের

উপর থেকে করারোপের প্রস্তাব রহিতকরণের জন্য আমরা জোর সুপারিশ করছি।

২. ব্রোকারেজের জন্য করহার যৌক্তিককরণ: বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজগুলো দুটিস্তরে কর প্রদান করে। প্রথমত: সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ০.০৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয়ত: কর্পোরেট আয়কর হিসেবে, যেটি বেশী হয় তা চূড়ান্ত কর হিসেবে গন্য করা হয়।

এই দ্বিস্তরের ব্যবস্থার ফলে মন্দাবাজার পরিস্থিতিতে ব্রোকারদের ক্ষতি করে। কিছুক্ষেত্রে এই করের হার ৪০ শতাংশ বা তার বেশী ছাড়িয়ে যায়। ব্রোকাররা বাজারের অন্যতম অংশী। বাজারে বিনিয়োগকারী এনে বাজারকে বিনিয়োগ সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সিকিউরিটিজ ক্রয়- বিক্রয়ের মত অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা করে থাকে। ব্রোকারদের আর্থিক সংকট ও অক্ষমতা বাজারের উন্নয়নকে চরমভাবে ব্যহত করে।

তাই শেয়ারবাজারকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর উন্নয়নে ব্রোকারদের সক্রিয় ও সচল রাখা অত্যাবশ্যক। এরুপ অবস্থায় ব্রোকারেজ ব্যবসায়িদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা নিম্নোক্ত সুপারিশ করছি-

ক) রাজস্ব করহার ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.০২৫ শতাংশ হ্রাসকরণ এবং খ) কর্পোরেট আয়করকে ব্রোকারেজের জন্য চুড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনাকরণ।

৩. মূলধন ক্ষতির উপর বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ : প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন লাভের উপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ মূলধনী লোকসানের উপর ৬ বছর পর্যন্ত মূলধনী ক্ষতির জের বহন কিংবা সমন্বয় করার বিধান বিদ্যমান রয়েছে।

এরুপ ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগকারীর মূলধন ক্ষতির বিষয়ে থাকা বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা প্রদানসহ এটিকে ৭ বছর পর্যন্ত প্রদেয় আয়করের বিপরীতে বহন বা সমন্বয় করার সুপারিশ করছি।

গত কয়েকবছর ধরে বাজারে মন্দা বিরাজ করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানের কবলে পড়ে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন ৫০ লাখের অধিক মুলধন লাভের উপর করারোপের সাথে বিদ্যমান মূলধনী লোকসানের জের বহন কিংবা সমন্বয় করার অনুমতি দিলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধরে রাখতে এবং বাজারের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে বাজারসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন লাভবান হবে।

এর ফলে বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে বাজারকে সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হবে এবং এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

৫. রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির রোডম্যাপ তৈরি : গত এক দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে খুব বেশী অগ্রগতি হয়নি। আমরা শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করার অনুরোধ করছি।

উক্ত বিষয়ে একটি পরিস্কার রোডম্যাপ দেয়া হলে বাজার মানসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজে প্রতিযোগীতামূলক ভাল ব্যবসা তৈরীতে উৎসাহিত হবে।

ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভূক্তির নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপাইজ তালিকাভুক্তির বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আশু বাস্তবায়নে সরকার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।

আমরা বিশ্বাস করি, শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাজার প্রসার হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

৫. অতালিকাভূক্ত সংস্থাগুলির জন্য কর্পোরেট করের হার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হারের বাহিরে বৃদ্ধিকরণ: প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হার ৩০ শতাংশ নির্ধারণ কিন্তু, অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার ব্যক্তিশ্রেনীর করা হয়েছে। কিন্তু করেরহারের নীচে।

অন্যদিকে কর্পোরেটের ক্ষেত্রে তালিকাভূক্ত এবং অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে করের পার্থক্য ২.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠান গুলির সামাজিক কর্মকান্ডে অবদান, শেয়ারবাজারে প্রচার বিবেচনা করে ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট করের হারের মধ্যে পার্থক্য বিবেচনায় আমাদের প্রস্তাব নিম্নরুপ:-

ক) ব্যক্তিশ্রেণীর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ এর উর্ধে অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার নির্ধারন করা।

খ) নিয়মিত এবং সম্পূর্ন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তে তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার হ্রাসকরণের সুপারিশ করছি।

৬. নতুন বিও আইডি ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনার অনুমতি প্রদান : শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি তথা বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে বাজারের মূলধন বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কর্মকান্ডে নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজন। দুঃখজনকভাবে আমাদের বাজারে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ সক্রিয় বিও একাউন্ট আছে, যেখানে ব্যাংকিং এবং এমএফএস কার্যক্রমে যথাক্রমে ২৮ শতাংশ এবং ৬৭ শতাংশ রয়েছে।

যদি ব্যাংকিং এবং এমএফএস একাউন্টগুলিকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগে নিয়ে আসা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের জন্য মূলধনী লাভ, সুদ এবং লভ্যাংশ আয় তৈরী হবে।

এর ফলে সরকারের যথেষ্ট পরিমান কর জেনারেট করা সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় আমরা বাজারের সম্প্রসারনের জন্য নিম্নের বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করছি-

ক) সকল নতুন বিও একাউন্টগুলিকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের সীমা সাপেক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত সময়কালের জন্য কর বহির্ভূত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করা।

খ) শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধীব্যক্তি এবং প্রবীণ নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত বিও হিসাবধারীদেরকে লাভের জন্য (০) শূণ্য হারে কর উপভোগ করার অনুমতি প্রদান করা।

৭. মার্জিন লসকে করছাড় যোগ্য হিসেবে অনুমতি প্রদান : মার্জিন লস বাজারের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। দীর্ঘদিন ধরে থাকা এরুপ মার্জিন লসের কারনে অসংখ্য বিনিয়োগ একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে যা তারল্‌য সংকটের মুখে গত কয়েকবছরে গুরুতর হয়ে উঠেছে।

মার্জিন লসে থাকা এই জাতীয় বিনিয়োগকে আর্থিকভাবে পূনরুদ্ধার করতে এবং বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এনবিআরকে ঋনদাতাদের জন্য একটি প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কর কর্তনযোগ্য হিসেবে মার্জিন লসের অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

বিজনেস আওয়ার/১১ জুন/ এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: