ঢাকা , বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা, পানির নিচে নোয়াখালী

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • 172

ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে জেলার তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার শতাধিক গ্রামে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বসতি। এতে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি। ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রামে বন্যা হচ্ছে।

এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চালেও ছুঁয়েছে বন্যার পানি। এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয় খুঁজছেন স্থানীয়রা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে দ্রুতই বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে যাবে। জেলা শহর থেকে নদী পথ না থাকায় পরিবহনে করে স্পিডবোট নিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় উদ্ধারে কাজ করছে স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা।

এদিকে ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী হতে যাচ্ছে নোয়াখালীবাসী। ইতোমধ্যে নোয়াখালী পৌরসভাসহ প্রায় সব উপজেলা পানিতে ভাসছে। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলা শহরে জলাবদ্ধতা বন্যার আকার ধারণ করেছে। ডুবে গেছে শহরের প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পৌর এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

জলাবদ্ধতা কবলিত হয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচের কক্ষ, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, প্রেসক্লাব, রেডক্রিসেন্ট, বিআরডিবি, ম্যাটস্, বিদ্যুৎ অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কক্ষ, শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, বন বিভাগের বাংলো, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, মাইজদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অনেক অফিস।

স্থানীয়রা জানান, এই মুহূর্তে বন্যার্ত এলাকার বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে ভুগছে। তাদের জন্য ত্রাণ সাহায্য জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগ।

এদিকে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। পানি কমে গেলে প্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা, পানির নিচে নোয়াখালী

পোস্ট হয়েছে : ০১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে জেলার তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার শতাধিক গ্রামে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বসতি। এতে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি। ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রামে বন্যা হচ্ছে।

এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চালেও ছুঁয়েছে বন্যার পানি। এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয় খুঁজছেন স্থানীয়রা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে দ্রুতই বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে যাবে। জেলা শহর থেকে নদী পথ না থাকায় পরিবহনে করে স্পিডবোট নিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় উদ্ধারে কাজ করছে স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা।

এদিকে ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী হতে যাচ্ছে নোয়াখালীবাসী। ইতোমধ্যে নোয়াখালী পৌরসভাসহ প্রায় সব উপজেলা পানিতে ভাসছে। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলা শহরে জলাবদ্ধতা বন্যার আকার ধারণ করেছে। ডুবে গেছে শহরের প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পৌর এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

জলাবদ্ধতা কবলিত হয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচের কক্ষ, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, প্রেসক্লাব, রেডক্রিসেন্ট, বিআরডিবি, ম্যাটস্, বিদ্যুৎ অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কক্ষ, শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, বন বিভাগের বাংলো, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, মাইজদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অনেক অফিস।

স্থানীয়রা জানান, এই মুহূর্তে বন্যার্ত এলাকার বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে ভুগছে। তাদের জন্য ত্রাণ সাহায্য জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগ।

এদিকে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। পানি কমে গেলে প্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: