ঢাকা , বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমবয়সীদেরও হতে পারে মস্তিষ্কের ব্যাধি ‘পারকিনসন্স’, জানুন লক্ষণ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
  • 66

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: মস্তিষ্কের একটি ব্যাধি এই পারকিনসন্স। মস্তিস্কে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতির কারণে এই রোগ দেখা দেয়। রোগটি বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কম্পন, দৃঢ়তা ও সমন্বয়ে অসুবিধার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা বার্ধক্যজনিত মস্তিষ্কের ব্যাধির লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তবে এই রোগের প্রাথমিক সূত্রপাত হতে পারে কমবয়সীদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। যারা ইয়াং পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত তাদের আচরণগত পরিবর্তন বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস নাও হতে পারে, যা সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

কাঁপুনি, নড়াচড়ার ধীরতা, দৃঢ়তা, মুখের ভাব কমে যাওয়া ও বক্তৃতার পরিবর্তন তরুণদের মধ্যে পারকিনসন্সের লক্ষণ।

পারকিনসন্স কী ও কেন এটি তরুণদের প্রভাবিত করে?

পারকিনসন্স ডিজিজ একটি সাধারণ মস্তিষ্কের ব্যাধি, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয়, বলে জানান ভারতের ফোর্টিস হাসপাতাল নয়ডার নিউরোলজির পরিচালক ডা. কপিল সিংগাল।

তার মতে, পারকিনসন্স ডিজিজ ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যেও ঘটতে পারে। তরুণ পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশেরও কম।

মুম্বাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজিস্ট ডা. বিশাল চাফালে জানান, পারকিনসন্স ডিজিজ একটি স্নায়বিক অবস্থা যা নড়াচড়াকে প্রভাবিত করে।

তিনি আরও জানান, যে কোনো বয়সে এই রোগ বিকশিত হতে পারে। যদিও এটি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪ শতাংশ লোকের ৫০ বছরের আগে নির্ণয় করা হয়।

তরুণদের মধ্যে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ কী কী?

পারকিনসন্স ডিজিজের স্বাভাবিক উপসর্গগুলো কাঁপুনি, হাত কাঁপা (যা সাধারণত একপাশে শুরু হয়), কণ্ঠস্বর পরিবর্তন (ভলিউম কমে যায়), সব কাজে ধীরতা।

একজন ব্যক্তি গোসল করতে, পোশাক পরতে, খাবার খেতে বেশি সময় নেয়। ধীর গতিতে, ব্যক্তি হাঁটার সময় পা টেনে আনতে থাকে ও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে পারে।

এছাড়া শরীর শক্ত হয়ে যেতে পারে। এমনকি রোগীর বিছানায় যেতেও অসুবিধা হতে পারে। ধীরে ধীরে রোগটি আরও খারাপ হয় বলে জানান ডা. সিংগাল।

পারকিনসন্স ডিজিজের শাস্ত্রীয় ক্লিনিক্যাল সিম্পটমস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দৃঢ়তা, কাঁপুনি, ধীর নড়াচড়া ও হাঁটার অসুবিধা। এই লক্ষণগুলোর সঙ্গে রোগীদের ঘুমের ব্যাঘাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের অসংযম, অস্বাভাবিক ঘাম, বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও স্মৃতিশক্তির সমস্যা অনুভব করতে পারে।

যদিও এই রোগের কোন স্থায়ী নিরাময় নেই, তবে এর অনেক চিকিৎসার বিকল্প আছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডা. বিশাল চাফালে যুবকদের মধ্যে পারকিনসন রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানিয়েছেন-

কাঁপুনি

পারকিনসন্স রোগের প্রথম লক্ষণ এটি।প্রায়শই এক হাত বা পায়ে এই লক্ষণ দেখা দেয়। যখন অঙ্গটি বিশ্রামে থাকে, তখন সমস্যা বেশি হয়।

নড়াচড়ায় ধীরগতি

ব্র্যাডিকাইনেসিয়া নামেও পরিচিত এই লক্ষণ। পোশাক পরা বা দাঁত ব্রাশ করার মতো সাধারণ কাজগুলো এক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে।

দৃঢ়তা

পারকিনসন্স রোগের কারণে পেশী শক্ত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে বাহু, পা ও ঘাড়ে।

ভঙ্গিমায় অস্থিরতা

এটি ভারসাম্য ও সমন্বয়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে দাঁড়ানো বা হাঁটার সময় সোজা হয়ে থাকা কঠিন করে তোলে।

মুখের অভিব্যক্তি হ্রাস

পারকিনসন্স রোগের কারণে মুখের অভিব্যক্তি হ্রাস পায়। ফলে আবেগ প্রকাশ করা কঠিন হয় পড়ে।

বক্তৃতায় পরিবর্তন

পারকিনসন্স রোগের কারণে বক্তৃতার পরিবর্তন হতে পারে। যার মধ্যে ঝাপসা বা দ্বিধাগ্রস্ত কথাবার্তা বা ধীর কণ্ঠস্বর লক্ষণীয়।

মাইক্রোগ্রাফিয়া

একটি ছোট ও সঙ্কুচিত হাতের লেখা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে পারে। তবে তরুণ পারকিনসন্স রোগীদের সাধারণত আচরণগত পরিবর্তন বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় না, যা অনেক বয়স্ক রোগীর মধ্যে দেখা যায়। একজন তরুণ রোগীর মধ্যে পারকিনসন্স রোগ পারিবারিক জীবন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানান ডা. সিংগাল।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

বিজনেস আওয়ার/ ০১ অক্টোবর / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

কমবয়সীদেরও হতে পারে মস্তিষ্কের ব্যাধি ‘পারকিনসন্স’, জানুন লক্ষণ

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: মস্তিষ্কের একটি ব্যাধি এই পারকিনসন্স। মস্তিস্কে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতির কারণে এই রোগ দেখা দেয়। রোগটি বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কম্পন, দৃঢ়তা ও সমন্বয়ে অসুবিধার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা বার্ধক্যজনিত মস্তিষ্কের ব্যাধির লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তবে এই রোগের প্রাথমিক সূত্রপাত হতে পারে কমবয়সীদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। যারা ইয়াং পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত তাদের আচরণগত পরিবর্তন বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস নাও হতে পারে, যা সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

কাঁপুনি, নড়াচড়ার ধীরতা, দৃঢ়তা, মুখের ভাব কমে যাওয়া ও বক্তৃতার পরিবর্তন তরুণদের মধ্যে পারকিনসন্সের লক্ষণ।

পারকিনসন্স কী ও কেন এটি তরুণদের প্রভাবিত করে?

পারকিনসন্স ডিজিজ একটি সাধারণ মস্তিষ্কের ব্যাধি, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয়, বলে জানান ভারতের ফোর্টিস হাসপাতাল নয়ডার নিউরোলজির পরিচালক ডা. কপিল সিংগাল।

তার মতে, পারকিনসন্স ডিজিজ ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যেও ঘটতে পারে। তরুণ পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশেরও কম।

মুম্বাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজিস্ট ডা. বিশাল চাফালে জানান, পারকিনসন্স ডিজিজ একটি স্নায়বিক অবস্থা যা নড়াচড়াকে প্রভাবিত করে।

তিনি আরও জানান, যে কোনো বয়সে এই রোগ বিকশিত হতে পারে। যদিও এটি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪ শতাংশ লোকের ৫০ বছরের আগে নির্ণয় করা হয়।

তরুণদের মধ্যে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ কী কী?

পারকিনসন্স ডিজিজের স্বাভাবিক উপসর্গগুলো কাঁপুনি, হাত কাঁপা (যা সাধারণত একপাশে শুরু হয়), কণ্ঠস্বর পরিবর্তন (ভলিউম কমে যায়), সব কাজে ধীরতা।

একজন ব্যক্তি গোসল করতে, পোশাক পরতে, খাবার খেতে বেশি সময় নেয়। ধীর গতিতে, ব্যক্তি হাঁটার সময় পা টেনে আনতে থাকে ও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে পারে।

এছাড়া শরীর শক্ত হয়ে যেতে পারে। এমনকি রোগীর বিছানায় যেতেও অসুবিধা হতে পারে। ধীরে ধীরে রোগটি আরও খারাপ হয় বলে জানান ডা. সিংগাল।

পারকিনসন্স ডিজিজের শাস্ত্রীয় ক্লিনিক্যাল সিম্পটমস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দৃঢ়তা, কাঁপুনি, ধীর নড়াচড়া ও হাঁটার অসুবিধা। এই লক্ষণগুলোর সঙ্গে রোগীদের ঘুমের ব্যাঘাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের অসংযম, অস্বাভাবিক ঘাম, বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও স্মৃতিশক্তির সমস্যা অনুভব করতে পারে।

যদিও এই রোগের কোন স্থায়ী নিরাময় নেই, তবে এর অনেক চিকিৎসার বিকল্প আছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডা. বিশাল চাফালে যুবকদের মধ্যে পারকিনসন রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানিয়েছেন-

কাঁপুনি

পারকিনসন্স রোগের প্রথম লক্ষণ এটি।প্রায়শই এক হাত বা পায়ে এই লক্ষণ দেখা দেয়। যখন অঙ্গটি বিশ্রামে থাকে, তখন সমস্যা বেশি হয়।

নড়াচড়ায় ধীরগতি

ব্র্যাডিকাইনেসিয়া নামেও পরিচিত এই লক্ষণ। পোশাক পরা বা দাঁত ব্রাশ করার মতো সাধারণ কাজগুলো এক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে।

দৃঢ়তা

পারকিনসন্স রোগের কারণে পেশী শক্ত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে বাহু, পা ও ঘাড়ে।

ভঙ্গিমায় অস্থিরতা

এটি ভারসাম্য ও সমন্বয়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে দাঁড়ানো বা হাঁটার সময় সোজা হয়ে থাকা কঠিন করে তোলে।

মুখের অভিব্যক্তি হ্রাস

পারকিনসন্স রোগের কারণে মুখের অভিব্যক্তি হ্রাস পায়। ফলে আবেগ প্রকাশ করা কঠিন হয় পড়ে।

বক্তৃতায় পরিবর্তন

পারকিনসন্স রোগের কারণে বক্তৃতার পরিবর্তন হতে পারে। যার মধ্যে ঝাপসা বা দ্বিধাগ্রস্ত কথাবার্তা বা ধীর কণ্ঠস্বর লক্ষণীয়।

মাইক্রোগ্রাফিয়া

একটি ছোট ও সঙ্কুচিত হাতের লেখা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে পারে। তবে তরুণ পারকিনসন্স রোগীদের সাধারণত আচরণগত পরিবর্তন বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় না, যা অনেক বয়স্ক রোগীর মধ্যে দেখা যায়। একজন তরুণ রোগীর মধ্যে পারকিনসন্স রোগ পারিবারিক জীবন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানান ডা. সিংগাল।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

বিজনেস আওয়ার/ ০১ অক্টোবর / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: